
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর পার হয়েছে সাতদিন। এরপরও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী এখনও ফেরেননি ভাড়া বাসায়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই আগামীকাল রবিবার থেকে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ৭ হাজার শিক্ষার্থীর। বাকি ২১ হাজার শিক্ষার্থ ক্যাম্পাস সংলগ্ন গ্রাম অথবা ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। ক্যাম্পাস সংলগ্ন ১ নম্বর গেট, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, কটেজ, ফহেপুর ও জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসা করে থাকেন অনেকে। মাসিক ১ থেকে ২ হাজার টাকায় ভাড়া বাসাগুলো শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য নির্ভরযোগ্য এলাকা হিসেবে পরিচিত।
সহিংসতার পর এসব বাসায় আর ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা মৌসুম। এ সময়ে অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায় বাসায় ফিরতে না পারায় পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ৭ হাজার শিক্ষার্থীর। বাকি ২১ হাজার শিক্ষার্থ ক্যাম্পাস সংলগ্ন গ্রাম অথবা ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। ক্যাম্পাস সংলগ্ন ১ নম্বর গেট, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, কটেজ, ফহেপুর ও জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসা করে থাকেন অনেকে। মাসিক ১ থেকে ২ হাজার টাকায় ভাড়া বাসাগুলো শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য নির্ভরযোগ্য এলাকা হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, ‘সংঘর্ষের পর আমি বাসায় যেতে সাহস পাচ্ছি না। এখনও এলাকা নিরাপদ নয়। প্রশাসন তেমন উদ্যোগ না নিয়েই আবারও ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত চালু করেছে। বই-খাতাসহ অনেক জিনিসপত্র বাসায় রয়ে গেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি বন্ধুর সঙ্গে কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে। ওই জায়গাটা থাকার জন্য যে নিরাপদ, এ ব্যাপারে অফিসিয়াল কোনো কিছু দেখিনি।’
সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম। তার ভাষ্য, ‘২ নম্বর গেট ও জোবরা এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ওদিকে গেলেও বাসায় থাকার মতো নিরাপদ বোধ করছেন না। আমি মনে করি, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার এবং রাজনৈতিক নেতা যারা আছেন, তারা প্রশাসনের পদত্যাগ পদত্যাগ খেলার মাধ্যমে বিষয়টিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করতেছেন। এ কারণে এখনো নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করায় এক ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এসব কারণে এলাকাটি এখনও নিরাপদ না বলে মনে করেছেন না শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের এ ধরনের সম্পর্ক ছিল না। তাদের মতো গ্রামের অনেকে এখনও আতঙ্কিত। এর সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাসা ও কটেজ মালিকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আজ আবারও তাদের সাথে বসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত একটি হটলাইন সার্ভিস চালু করব। এছাড়া সিন্ডিকেটে পাস হওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ চলমান। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, এজন্য গ্রামবাসী এবং শিক্ষার্থীদের নমনীয় আচরণ করতে হবে।’
গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামার পর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন অন্তত ৪২১ জন। এখনও দুই শিক্ষার্থী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে বলে জানা গেছে।