Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, এমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই, যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পর্যন্ত চিনবে না। আপনি হার্ভার্ড, এমআইটি, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড এমনকি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর বা ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জিজ্ঞেস করে দেখুন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কে? প্রায় কেউই বলতে পারবে না। আর বাংলাদেশের ভিসির নাম জানে না, এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি লিখেছেন, ছাত্রছাত্রী শুধু না, দেশের সাধারণ মানুষরা পর্যন্ত নাম জানে। পৃথিবীর কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা প্রতিদিন সংবাদ শিরোনাম হয়? পৃথিবীর কোন দেশের ভিসিরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের নেতৃত্ব দেন? প্রথিবীর কোন দেশের ভিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের যত কনফারেন্স, সেমিনার, স্পোর্টস, নবীন বরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় সবগুলোর উদ্বোধন করেন?

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের প্রমোশন থেকে শুরু করে ছুটি-ছাটা, সব কিছুই হয় ভিসির মাধ্যমে। একটা দেশের কাঠামো সেই দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাঠামোরই ছাপ থাকে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়। যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষমতা একজন ভিসির মধ্যে কেন্দ্রীভূত, সেই দেশের রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতাও একজন প্রধানমত্রীর মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে। 

‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মধ্যেই সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর জন্য সহজ। একজন ভিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। এ জন্যই ভিসি নিয়োগে এত দল প্রীতি। সেই জন্যই শিক্ষক রাজনীতি। এক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এর কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানে এই কথাগুলোই বলেছিলাম’, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে আছে, ভিসি হওয়ার যোগ্যতার প্রধান অলিখিত শর্ত হলো শিক্ষক সমিতির কয়েক দফা নির্বাচিত নেতা হওয়া। গত ৪০ বছর ধরে যারা ভিসি হয়েছে, তাদের সিভি দেখেন। তাদের প্রত্যেকেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষক সমিতির নেতা হওয়া মানে পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। এই পরীক্ষায় পাশ না করলে ভিসি হওয়া যায় না। আমরা কি এইখানে কোন সংস্কার করেছি? শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রমোশন নীতিমালায় কোন সংস্কার করেছি? 

যেসব জায়গা সংস্কার করা অতি জুরুরি ছিল, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭৩ এর অধ্যাদেশ যদি এত ভালো হয়, তাহলে ৭৩ এর পরে যত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, তাদের সবগুলোর জন্ম থেকেই ৭৩ এর অধ্যাদেশ এর অধীনে। কেন মাত্র ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩ এর অধীনে আর বাকি ৫০টি কেন না? কেন এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বাকিগুলোকে কেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলা হবে? এগুলোর সংস্কার না করলে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার মান জিন্দেগিতেও ভালো হবে না।