
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) বিশ্বমানের করতে হলে ট্যালেন্ট হান্টের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সিনেট সদস্য ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তাঁর ভাষ্য, বুয়েটের শিক্ষকরা বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আর্থিকভাবে একটু বেশি ভালো থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পার্ট-টাইম পড়ান না। দিন-রাত রাজনীতি রাজনীতি না করে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরিরও আহবান জানান তিনি।
আজ সোমবার (১১ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি বুয়েটের দুইজন শিক্ষক এমআইটি থেকে পিএইচডি শেষে দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে বুয়েটে এখন অন্তত ৫ জন এমাইটিয়ান আছে। সেখানে ক্যালটেক থেকে পিএইচডি শিক্ষকও আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ পর্যন্ত কেউ হার্ভার্ড, এমআইটি, ক্যালটেক, স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন বা ইয়েল থেকে পিএইচডি করতে গিয়েছে কিনা সন্দেহ।
গিয়ে থাকলেও ফেরে কিনা সন্দেহ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষকরা বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিকভাবে একটু বেশি ভালো থাকেন বলে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট-টাইম পড়ান না। আর পড়ালেও সংখ্যায় সেটা এপিডেমিক আকারে না। এর অন্যতম কারণ বুয়েট থেকেই সরকারের ও প্রাইভেট সেক্টরের নানা কনসাল্টেন্সি করেই ভালো আর্থিক সহযোগিতা পান বলে শুনেছি।
‘এছাড়া বুয়েটের সাবেক ভিসি শিক্ষকদের গবেষণা প্রবন্ধের ওপর ভালো অ্যামাউন্টের আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন। জানি না সেটা এখনো আছে কিনা। এ জন্যই বুয়েটের শিক্ষকরা কেউ কেউ ফিরে আসে, যদিও ফিরে না আসার সংখ্যাও বিশাল’, যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে হলে ট্যালেন্ট হান্টের বিকল্প নেই। তবে বর্তমানে যে বেতন, যে সুবিধা, যে রাজনৈতিক পরিবেশ, সেই অবস্থাতে ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্ট নিলেও খুব একটা লাভ হবে না। বিশ্বমানের গবেষক শিক্ষকদের আনতে হলে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা দিয়েই আনতে হবে। চীন কি করেছে? ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্টে বিশ্বমানের শিক্ষক-গবেষকদের উচ্চ বেতন শুধু না, তাদের পরিবার-পরিজনের জন্যও থাকা, খাওয়া ও লেখাপড়ার নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।’
সেখানে আসলে গবেষককে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ল্যাব তৈরি করে দেওয়া এবং ১.৫ মিলিয়ন ডলার সীড মানি দিয়েও এনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন এবং এত এত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কারণে চীনের শিক্ষকরা যারা যারা তাদের তুলনায় অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পায়, তারাতো আন্দলোন করেনি বা প্রতিবাদ করেনি। যারা যেমন যোগ্য, তারা তেমন পাবে। যোগ্য অযোগ্য, এমন সবাইকে এক রকম মাপলে সেখানে যোগ্য মানুষ তৈরি হবে না।
আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কত বেতন পায়, সাধারনত কেউ জানে না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগ্যতানুসারে আলোচনা সাপেক্ষে বেতন নির্ধারিত হয়। আমরা যদি বিশ্বমানের ভালো ভালো স্কলার আনতে চাই, আমাদের মনকে উদার করতে হবে। তাছাড়া বিদ্যমান শিক্ষকদেরও বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, এসব আমি আমার নিজের জন্য বলছি না। আমার শিক্ষকতা জীবন আর বেশিদিন নেই। অবসরে যাওয়ার সময় প্রায় এসে যাচ্ছে। নতুন বেতন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে আমাকে বাইরে রাখেন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি চাই, আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি পাক।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত পি জে হার্টগ নামের যে ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলটি আছে, সেটিকে শিক্ষকদের আবাসিক হলের মতো ব্যবহার না করে এটিকে উন্নত মানের একটা গেস্ট হাউসে রূপান্তর করুন। একইসঙ্গে বিদেশি এবং বাংলাদেশি প্রবাসী শিক্ষক ও গবেষকদের নিয়মিতভাবে এনে তাদের পদচারণায় ক্যাম্পাসকে মুখরিত করুন। বিদেশি এবং বাংলাদেশি প্রবাসী শিক্ষক ও গবেষকদের দিয়ে এক সেমিস্টারের জন্য এনে গবেষণার পাশাপাশি তাদের দিয়ে শ্রেণীকক্ষের ক্লাস নেওয়ান।
দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষকদের জানতে-বুঝতে দেওয়ার আহবান জানিয়ে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংও বাড়বে। দিন-রাত রাজনীতি রাজনীতি না করে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি করুন। একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্ড়ে সেই দেশের উন্নয়নের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর কোনও দেশ উন্নত হতে পারেনি, সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত মান ছাড়া।