Image description

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাত হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না কেউ। গতকাল বুধবার মানববন্ধন করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনকারী শিক্ষক নেতারা দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্য নিয়োগ হলেই যে তারা ক্লাসে ফিরবেন– এমন ঘোষণা শিক্ষকদের তরফে আসেনি। 

ক্লাসে না যাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি অনড় থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ৫ মাসের বেশি সময় ধরে সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা কখনও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, কখনও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছেন। তারাও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। 

এদিকে গত ২০ জুলাই থেকে ক্লাস শুরুর দাবি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষকের অপেক্ষায় শূন্য কক্ষে বসে থেকে পাঠ না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় গত ২১ জুলাই শিক্ষক সমিতির সভায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান জানান। তবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ কয়েক শিক্ষকের বেশকিছু যুক্তিতে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রেখেছেন তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষকদের অনুরোধে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া চলমান সংকট নিরসন ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। উপাচার্য নিয়োগ ছাড়া এ সংকট থেকে বের হওয়া কঠিন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাজনিত ঝুঁকির মধ্যে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ জন্য একজন অভিভাবক দরকার। 

কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সভায় গত ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

সিন্ডিকেট থেকে নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্তই বলবৎ রয়েছে। শিক্ষক সমিতি তাদের সিদ্ধান্তে ক্লাস বর্জন শুরু করে। এখন ক্লাসে ফিরতে হলে নতুন করে উপাচার্য এনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে– এ ধরনের কথার কোনো যৌক্তিকতা নেই। উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থবির হয়ে আছে; এটা সত্য। কিন্তু উপাচার্য না থাকায় ক্লাস শুরু করা যাবে না– এ ধরনের কথা সঠিক নয়।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক আহত হন। ওই রাতেই হামলাকারীর পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েক শিক্ষককে লাঞ্ছনা করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। তবে শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। এরপর শিক্ষকরা আর ক্লাসে ফেরেননি। 

এর মধ্যে গত ১ মে মন্ত্রণালয় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন শুরু করলে ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। গত দুই মাস ক্লাস শুরুর দাবিতে বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি, ক্লাস শুরুর দাবিতে খোলা চিঠি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো অনুরোধ মন গলাতে পারেনি শিক্ষক নেতাদের। ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্তে তারা অনড়।