Image description

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন সকাল থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন নিবিড় কর্মকার। ইন্টারনেটে বারবার চেষ্টা করেও ফলাফল দেখা যাচ্ছিল না। মোবাইলেও ফলাফল আসছিল না এসএমএসে। অবশেষে বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের ফল জানেন নিবিড়—১৩০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ১২৮৫!

নিবিড় বলেন, “ভালো ফল হবে আশা করেছিলাম। তবে নম্বর কেমন আসবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। ফল দেখার পর নিজেরই খুব ভালো লেগেছে।”

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার এবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ব্যতিক্রমী ফলাফলের জন্য আলোচনায়। এ বছর বোর্ডে ১১ হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেলেও, নিবিড়ের ১২৮৫ নম্বরের ফল তাকে আলাদাভাবে তুলে ধরেছে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকায় ভাড়া বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নিবিড়। পাশে ছিলেন তার বাবা-মা। বাবা জীবন কর্মকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, মা রিয়া রায় গৃহিণী। নিবিড়ের পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীতে।

প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন? এমন প্রশ্নে নিবিড় বলেন, “মোটামুটি ৮–১০ ঘণ্টা পড়েছি। তবে যতক্ষণ পড়েছি, খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।”

সাফল্যের রহস্য জানতে চাইলে বলেন, “আমি মূলত পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়েছি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। কোনো কিছু বাদ দিইনি। বুঝে পড়ার চেষ্টা করেছি সব সময়। আমার মনে হয়, যে কেউ যদি পাঠ্যবই ঠিকভাবে পড়ে, তার ভালো ফল হবেই।”

নিবিড়ের পরিবার বলছে, তার সফলতার পেছনে স্কুলের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকেরাও জানান, নিবিড় নিয়মিত ও আগ্রহী শিক্ষার্থী ছিল। কোনো বিষয়ে আটকে গেলে দ্রুত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলত।

নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার বলেন, “সে নিয়মিত স্কুলের দিকনির্দেশনা মেনেই পড়েছে। আমরা শুধু খেয়াল রেখেছি, ঘরে পড়ার পরিবেশ যেন ঠিক থাকে। পরীক্ষার আগে কয়েকটি কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দিয়েছিল মাত্র।”

নিবিড়ের মা রিয়া রায় বলেন, “ওকে কোনো চাপ দিইনি। নিজে থেকেই আগ্রহী ছিল। রচনা প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও অংশ নিত। আমরা সব সময় পাশে থেকেছি, উৎসাহ দিয়েছি।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, “নিবিড় খুবই ভদ্র ও পরিশ্রমী ছাত্র। নিয়মিত পড়াশোনা করেছে। আমাদের স্কুলে এবার সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে সে।”

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, “আমরা মেধাভিত্তিক তালিকা তৈরি করিনি। তাই কে সেরা, তা বলা যাচ্ছে না। তবে নিবিড়ের ফল অবশ্যই প্রশংসনীয়।”

একসময় আঁকাআঁকির শখ ছিল নিবিড়ের, কিন্তু পড়াশোনার ব্যস্ততায় সেই শখ এখন আর চর্চা হয় না। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে বললেন, “আমার লক্ষ্য বুয়েট। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই এগোতে চাই।”

সবশেষে তিনি জানান, “প্রতিটি পরীক্ষা শুরুর আগে নার্ভাস লাগত। প্রশ্ন কেমন আসবে, সেটা ভাবতাম। মা–বাবা আর শিক্ষকেরা সব সময় সাহস দিতেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ—সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতায় আজ আমি এখানে।”