Image description

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে এক ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভুয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অভিভাবকদের কাছে ফোন করে বলা হচ্ছে, তাঁদের সন্তানরা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদক সেবনকারী , নারীঘটিত নানা অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতারকরা নিজেদের র‌্যাব কিংবা ডিবি সদস্য দাবি করে ৩০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করছেন। এতে কয়েকজন হারিয়েছেন টাকা।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) মিরপুরে বসবাসরত ড্যাফোডিলের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর বাবাকে কল করে জানানো হয়, তার ছেলেকে র‌্যাব ও ডিবির অভিযানে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে ভুক্তভোগী পিতা প্রথমে অবিশ্বাস করলেও, পরক্ষণেই ছেলের হুবহু কণ্ঠে কান্নার আওয়াজ আসে। এতে তার কাছে দাবি করা ৫ লক্ষ টাকা থেকে পরে তিনি ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা দেন। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী সেদিন রাতেই রূপনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের সাথেও ঘটেছে অনেকটা এমন ঘটনা। মাহমুদুল জানান, আজ (রবিবার, ২৯ জুন) যা ঘটলো, তা সত্যিই ভয়ংকর। আজ একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমার মায়ের ফোনে কল আসে। অপরপ্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ঢাকার একটি থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে জানান, "আপনার ছেলে একটি অপরাধে জড়িত এবং তাকে আটক করা হয়েছে। এখনই চালান করা হবে, একবার চালান হয়ে গেলে ছয় মাসের আগে মুক্তি পাওয়া যাবে না।" এরপর নানাভাবে ভয় দেখিয়ে, ‘উপর মহলের চাপ’ ইত্যাদি বলে দুই লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। পরবর্তীতে আমার বড় বোন কলটি রিসিভ করলে, তিনি অপরাধ সম্পর্কে জানতে চান। কথিত ‘এসআই’ বলেন, বিষয়টি একটি মেয়েকে ঘিরে। বোন যখন মেয়ের নাম জানতে চান, তখন প্রতারক যে নামটি বলে, সেটি হুবহু সেই শিক্ষার্থীর নাম, যাকে আমি গতকাল একটি ওয়েবসাইটে সার্চ করেছিলাম।

মাহমুদুল আরও জানান, সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, তারা আমার ভয়েস ক্লোন করে আমার বোনের সঙ্গে কথা বলে — একটি কাঁদো-কাঁদো কণ্ঠে। ফলে বাসায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টাকা পাঠাতে গিয়ে দোকানদার ব্যাপারটায় সন্দেহ করে এবং আমাকে ফোন দেয়, তখনই পুরো প্রতারণার বিষয়টি পরিষ্কার হয়।

মাহমুদুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে ফাঁস হওয়া খুবই গর্হিত ও বিপজ্জনক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত তথ্য ফাঁসের উৎস শনাক্ত ও রোধ করা, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই ঘটনাটি শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, "প্রথমে যেদিন এমন ঘটনা হয়েছিল, তা ভেবেছিলাম আমাদের সাথেই হওয়া ঘটনা। পরে এখন দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ফাঁসের কারণে এমনটা হয়েছে হয়তো। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে এই টাকা গুলো অনেক। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো যেনো, আমার ঘটনা বিবেচনা করে আমাকে ক্ষতিপূরণ দেয়। নাহয় আমার পরিবারের জন্য এই ঘটনা বোঝা হয়ে যাবে অনেক।"

গত এক সপ্তাহে এমন কলের ঘটনা প্রায় ৫০টির অধিক ঘটেছে। কয়েকজন অভিভাবক ভুলবশত হারিয়েছেন টাকা। তবে যারা টাকা দেননি, তারাও নিজেদের সন্তানের নামে এমন অভিযোগ ও সন্তানের ভয়েস ব্যবহার করে এমন কলের কারণে মানসিকভাবে আতঙ্কিত রয়েছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এমনটা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর তথ্য (https://systembreakers.live) ‘সিস্টেম ব্রেকারস লাইভ’ নামক একটি থার্ড পার্টি সাইটে পাওয়া যাচ্ছে।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শেখ মুহাম্মদ আল্লাইয়ার বলেন,"আমরা এই বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে একটি সতর্কবার্তা দিয়ে দিচ্ছি। এবং এমন কিছু হলে যেনো তারা আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন।"

প্রতারকদের মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থীর টাকা চলে গেলে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিপূরণ দিবে কিনা — সে বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস জিজ্ঞেস করলে প্রক্টর জানান, সে বিষয়ে রেজিস্ট্রার অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকরা বলতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রচার হওয়া সম্পর্কে প্রক্টর বলেন,"বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রচার হয়ে যাচ্ছে,  সেটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় তার অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নেবে। কিছুক্ষণ আগেও এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিটিং হয়েছে।"

ভবিষ্যতে তথ্য পাচার রোধ করা, পাচার হওয়া তথ্য কীভাবে নিরাপদ করা যায় যাতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যায়, এবং প্রতারকদের শনাক্তের জন্য প্রশাসনের জোরালো উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।