
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের জন্য নির্মাণাধীন দশতলা বিশিষ্ট শহিদ মামুন হলে নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ চেয়ার, টেবিল, খাট, দরজা, চৌকাঠ ও ড্রয়ারে উইপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের আক্রমণে নষ্ট হওয়ার পথে। অনেক জায়গায় কাঠ গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ছে। খসে পড়েছে হলের অনেক জায়গার পলেস্তারা।
২০১৬ সালে দিকে হলটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও দীর্ঘ ৯ বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২১ সাল থেকে ধাপে ধাপে হলে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়। এরইমধ্যে তার বড় অংশই ব্যবহারের অনুপেযোগী হয়ে গেছে।
কলেজের এক কর্মচারী জানান, বর্তমানে হলের রং–এর কাজ চলমান রয়েছে। অধিকাংশ অংশের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া ফার্নিচার ও অন্যান্য মালামাল মেরামতের কাজ শেষ করলেই হলটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। ওয়াসা থেকে হলের পানির সংযোগ প্রদান করা হলেও এখনো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সিট বরাদ্দ দিতে পারছে না হল কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ তাড়াহুড়া করে শেষ ধাপে আসা নিম্নমানের ফার্নিচারগুলো ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষকের মাধ্যমে বুঝে নেন। সাবেক উপাধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন আহমেদকে এই বিষয় জিজ্ঞেস করলে তিনি নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহ কথা শিকার করেন। তার দাবি, তিনি ওই সময় দায়িত্ব থাকলেও এসব ফার্নিচার বুঝে নেননি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিতুমীর কলেজ প্রশাসন। মঙ্গলবার (২০ মে) কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী ৩০ মে’র মধ্যে হলের কাজ সম্পন্ন করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারবে কি না—তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হলে রংয়ের কাজ করছে মিস্ত্রিরা। দ্বিতীয় তলায় ডাইনিং, রিডিং রুম ও মসজিদের জন্য স্থান রাখা হয়েছে। হলের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার বিভিন্ন কক্ষের দরজা, চৌকাঠ, চেয়ার ও টেবিলে পোকার আক্রমণে কাঠের গুঁড়ো ঝরে পড়ছে। হলের ষষ্ঠ তালার অধিকাংশ ড্রয়ারে লাগানো হয়নি ডোর। এ ছাড়া একাধিক স্থানে দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। গ্রিলগুলোতে লেগেছে জং। বিভিন্ন কক্ষে বৈদ্যুতিক সুইচ ও বাতি পড়ে আছে মেঝেতে। ১১টি পানির ট্যাংকির কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৯টি, যার দুটি অকেজো। বাকি সাতটি মেয়াদোত্তীর্ণ, নেই ঢাকনাও।
হলে নিম্নমানের ফার্নিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে হল সুপার ও সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর মুহাম্মদ মাসুদ উজ্জামান বলেন, ‘ফার্নিচারগুলো নিম্নমানের কিনা, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কারণ এসব বুঝে নেওয়ার সময় আমি অসুস্থ ছিলাম। শেষ ধাপের সামগ্রী বুঝে নেওয়ার সময় সাবেক উপাধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন।’
জানা গেছে, শহিদ মামুন হলের ক্ষতিগ্রস্ত ও নিম্নমানের ফার্নিচার সংস্কারের জন্য পুনরায় ৩০ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজটি চলমান রয়েছে।
কলেজ উন্নয়ন কমিটির প্রধান ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গালিব হাসান বলেন, হলের বেশিরভাগ দরজা, জানালা, টেবিল ও চৌকাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সংস্কারের জন্য নতুন বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। তবে হলের মূল সমস্যা হলো বিদ্যুৎ লাইন ও গ্যাস সংযোগ। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
হলে নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.ছদরুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমি সে সময় এই কলেজে দায়িত্বে ছিলাম না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফার্নিচার আমরা সরবরাহ করিনি। প্রকল্প অফিস ঠিকাদার নিয়োগ করেছে এবং তারাই এসব সরবরাহ করেছে। ফার্নিচারের মান নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল।’ তবে নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও জবাব তিনি দিতে পারেননি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিতুমীর কলেজ প্রশাসন। মঙ্গলবার (২০ মে) কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী ৩০ মে’র মধ্যে হলের কাজ সম্পন্ন করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারবে কি না—তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ ফরাজি বলেন, হলে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে হলের সব কাজ সম্পন্ন করা ঠিকাদারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে পড়ে হল খোলার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।