Image description
সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ | © টিডিসি ফটো

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় নানা ধরনের সংকট আছে, এটি সমাধান করা দরকার। এখন উচ্চশিক্ষা পরবর্তী বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, এটি আশংকাজনক। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে প্রথম বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা সম্মেলন-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বণিক বার্তার আয়োজনে ‘‌উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ নিয়ে দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ সংশ্লিষ্টরা সম্মেলনে নানা করনীয় তুলে ধরেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এখন উচ্চ মাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে চলে যান, আমাদের সময়ে এটি ছিল। এটি বন্ধ করা উচিত। সেজন্য দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কথা বলেন সাম্প্রতিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও। তিনি বলেন, এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কথা উঠছে। একজন শিক্ষকের পাঁচ হাজারের বেশি সাইটেশন থাকলে তো তিনি অনেক বেশি গবেষণা করেন বলে বোঝা যায়। তাহলে তিনি কখন রাজনীতি করার সুযোগ পান।

সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা এবং গবেষণা বাড়ানো দরকার জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পূর্ববর্তী সময়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনে নানান সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখানে রীতিমতো দুর্বৃত্তায়ন করা হয়েছে। আমরা সেগুলো বন্ধ করতে কাজ করছি, সেজন্য আমরা উপাচার্যসহ অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের আমরা নিয়ে আসছি। 

দেশের বাইরে থাকা ভালো শিক্ষক এবং গবেষকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন জানিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি বড় সুযোগ হবে। রিভার্স ব্রেইন ড্রেইন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের শিক্ষা গবেষণায় ভালো কাজ করতে হবে। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এটি কেন করা হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না। এর ফল কী হবে, তা নিয়েও ভাবতে হবে। এসব জায়গায় শিক্ষক নেই, শিক্ষার মান নেই। ফলে পড়াশোনার পর এসব শিক্ষার্থীদের কী হবে, তা চিন্তা করতে হবে। 

উচ্চশিক্ষার মান বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে উন্নত করার সহজ কোনো উপায় নেই জানিয়ে ড. মাহমুদ বলেন, সেজন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে। সেজন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা বাংলাদেশিদের নিয়ে আমরা শিক্ষার মান বাড়াতে কাজ করতে পারি, তাদের সুযোগ দিতে পারি। চীন এটি করছে। আমাদের এমন পরিবেশ এখনও হয়নি। সেজন্য আপাতত ভিজিটিং শিক্ষক হিসেবেও তাদের রাখা যেতে পারে। 

তিনি বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নাম পরিবর্তন করে উচ্চশিক্ষা কমিশন করে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যেন তারা উচ্চশিক্ষার মান এবং গবেষণা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। 
 
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে দেশের শিক্ষা খাতের বিশিষ্টজনরা বক্তব্য দেন। 

এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিচালন-অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অস্থায়ী) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম।

প্যানেল আলোচনায় শিক্ষার গুণগতমান, গবেষণা, উদ্ভাবন ও র‍্যাংকিং বিষয়ে কথা বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান।