
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে তাদের একমাত্র দাবি—উপাচার্যের পদত্যাগ। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান ও ক্ষোভের কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশবাসী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সামনে এসেছি। ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর ভিসি স্যার যখন নিজের দায় স্বীকার না করে কেবল বললেন ‘তার লেইট হয়েছে’, তখন থেকেই এই আন্দোলনের সূচনা। অথচ তার এই ‘দেরিতে আসা’র কারণেই আমাদের দেড় শতাধিক সহপাঠীর ওপর হামলা হয়েছে। তার ওই বক্তব্য আমাদের ভাইদের রক্তের সাথে বেইমানি।
দুই মাস পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি বলেও অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে তাদের দাবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি মিথ্যা মামলায় দমন-পীড়নের পর যখন তা ব্যর্থ হয়েছে, তখন ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় ছাত্রদলের ২২ জনের নাম থাকলেও মোট সংখ্যা ৩৭—যা স্পষ্টভাবে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হয়রানির ইঙ্গিত দেয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, হল খুলে না দেওয়ার কারণে তারা রাস্তায় শুয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনেক শিক্ষকই সরাসরি বলেছেন, ভিসির পদত্যাগ না হলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তারা জোর দিয়ে বলেন, আমাদের সংগ্রাম শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়, প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আমরা আশা করি যেসব শিক্ষক সত্যিকার অর্থে শঙ্কিত, তারা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন এবং আমাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করবেন।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সারা দেশ আজ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, অথচ আমাদের শিক্ষকরা এখনো নীরব। সারা বাংলাদেশ আমাদের জিজ্ঞেস করছে—তোমাদের শিক্ষকরা কোথায়? এই প্রশ্নের আমরা কী উত্তর দেবো?
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই মাসেও বেশিরভাগ দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা আর আশ্বস্ত নন। “যে উপাচার্য আমাদের বহিষ্কার করতে পারেন, তার সঙ্গে আপোসে বসলে ভবিষ্যতে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে? এই ভিসি কোনোভাবেই দায়িত্বে থাকার ন্যায্যতা রাখেন না।”
তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ১৮ তারিখের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তদন্ত কমিটি এখন ১৮-১৯ তারিখের কথা বলছে। ১৯ তারিখ কী হয়েছে? আমরা জানতে চাই।
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসেরও অভিযোগ এনেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ বটপেইজে কিভাবে গেলো? তদন্ত কমিটি এবং সিন্ডিকেট ছাড়া সেই ফুটেজ কারো হাতে যাওয়ার কথা নয়। প্রশাসনই কি তবে নিয়ম ভেঙে প্রমাণাদি সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছে?
তারা আরও বলেন, ভিসি স্যার মিডিয়ায় বলেছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিতে নয়, সরকারের ইচ্ছায় পদ ছাড়বেন। তাহলে প্রশ্ন—সরকার কেন পদত্যাগ চাইছে না? এই যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা আমাদের রক্তের বিনিময়ে এসেছে, তারা কি আজ ছাত্রদের বিপক্ষে?
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আজ কুয়েটের বুকে আবার নেমেছে সেই ‘জুলাই’। হাসিনা আমলেও আন্দোলনকারীদের বহিষ্কারের কথা ভাবেননি কোনো ভিসি। তাহলে আজকের ভিসিদের এই দু:সাহস কোথা থেকে আসছে?
সবশেষে তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গতকাল সারা দেশে যেটা হয়েছে, সেটিই কেবল শুরু। যদি আমাদের দাবিগুলো পূরণ না করা হয়—ভিসির অপসারণ, বহিষ্কার প্রত্যাহার এবং মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়া না হয়—তাহলে পরবর্তী জুলাই হবে আপনাদের (সরকারের) বিরুদ্ধে।