
চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মাথায়, হাতে-পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। এ ছাড়া লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন দুই শিক্ষার্থী। যাদের একজনের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। রোববার সারাদিন ধরে চলা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর ও দোকানপাটে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সংঘর্ষের জেরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে চবি সংলগ্ন জোবরা গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গ্রামের রাস্তাঘাটে শুধু নারীর দেখা মিলছে। তবে তারা আছেন আতঙ্কে। এ ছাড়া পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয় নারীরা জানান, রাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিরোধ করার মতো কেউ নেই। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে গতকাল ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন শতাধিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৪ জন, নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত সোমবার বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে দু’জন লাইফ সাপোর্টে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন ভর্তি আছেন।
এ ছাড়া এক শিক্ষার্থীর রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এনআইসিবিডিতে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার) পাঠানো হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর হোসেন।
চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক ও ট্রমাটলজি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিক্ষার্থী পলাশ মল্লিক। এক হাতে ব্যান্ডেজ করা পলাশ বসে আছেন। তার পিঠে কোপানোর কারণে ঠিকমতো শুয়ে থাকতে পারছেন না। তার এক বেড পরেই রয়েছেন এহসান। তারও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়েছে স্থানীয়রা।
পলাশ মল্লিক বলেন, প্রক্টর স্যার আহত হয়েছেন শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে স্যারকে নিয়ে চলে আসার সময় আমাদের ওপর হামলা করা হয়। গ্রামবাসী রামদা দিয়ে আমাদের কুপিয়েছে। আমার সঙ্গে ইমতিয়াজ ছিল। তাকেও মাথায় খুব মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। সেখান থেকে সহপাঠীরা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
এদিকে গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তিনি চারদিন ধরে পার্কভিউ হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তার কনশাস লেভেল (চেতনার মান) এখন ৬-এর আশপাশে। একজন স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল ১৫। এটি ১০-এর উপরে ওঠার আগপর্যন্ত তাকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা আহত আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়ার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত সোমবার বিকালে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়, তবে তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ইমতিয়াজের সঙ্গে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় আহত আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়াকে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে।
পার্কভিউ হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ইমতিয়াজের বিষয়ে বিকালে মেডিকেল বোর্ড বসেছে। এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। মামুনের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে।’
ইমতিয়াজের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বুধবার দুপুরে তারা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।’
এদিকে পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত ও তদন্তে প্রাপ্ত মোট ৮ জন আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত মামলা দায়ের করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. ইমরান হোসেন প্রকাশ এমরান হোসেন (৩৫), মো. হাসান প্রকাশ হাসাঈন (২২), রাসেল প্রকাশ কালো রাসেল (৩০), মো. আলমগীর (৩৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩০), মো. জাহেদ (৩০), মো. আরমান (২৪), দিদারুল আলম (৪৬)।