Image description

আজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী একাধিক শিক্ষক যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এ খবরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল ছাত্রনেতারা। এ সভা প্রতিহত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত মাসে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে আওয়ামীপন্থী ৫ সিন্ডিকেট সদস্যকে সভায় আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বর্তমানে সিন্ডিকেটে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াসহ ৪ জন বহাল রয়েছে। বহাল থাকা বাকি আওয়ামীপন্থীরা হলেন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, এস. এম. বাহালুল মজনুন ও রামেন্দু মজুমদার।

জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুস ছামাদ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ আহসান, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফ উল ইসলাম ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহিন মোহিদকে সিন্ডিকেট সভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।

আওয়ামীপন্থীদের সিন্ডিকেটের সভায় যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙার ব্যাপারে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আজকেও আওয়ামীপন্থীদের সিন্ডিকেটের সভায় যোগদানের বিষয়টি জানতে পেরেছি। শহীদদের রক্তের ওপর কীভাবে নিজামুল হক ভূইয়ারা সিন্ডিকেট সভা করতে পারেন? সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন।

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন এখনো সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় আছে। যে সিন্ডিকেট ফ্যাসিবাদী হাসিনার সহায়কের ভূমিকায় ছিল, সেই সিন্ডিকেট অবৈধ। এ সভা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আরকানুল ইসলাম রূপক বলেন, শহীদের রক্তে অর্জিত মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পুনর্বাসনের যে কোনো প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীসমাজ কখনোই মেনে নেবে না। বিগত ১৫ বছরে শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পেছনে যারা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের শিক্ষক নয়, শিক্ষাঙ্গনের কলঙ্ক বলেই মনে করি। আজকের সিন্ডিকেট সভায় তাদের অংশগ্রহণ কেবল শহীদদের আত্মত্যাগকে অবমাননা করা নয়, বরং স্বাধীনতার জন্য দেওয়া রক্তের পবিত্রতাকে পদদলিত করার সামিল।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক জানান, ফ্যাসিবাদের দোসর ও গণহত্যার প্রকাশ্য এবং নিরব সমর্থক যারা এমন কোনো শিক্ষককেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না সেখানে সিন্ডিকেটে থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। এদের প্রত্যেককে আমরা বয়কট করেছি। তারা যদি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চায় আমরা ছাত্ররা মিলে গণপ্রতিরোধ করবো। ইতোমধ্যে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সবাই সিনেট ভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান করবো যেন ফ্যাসিবাদের দোসর কোনো শিক্ষক প্রবেশ না করতে পারে। 

জুবায়ের নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, খবর পেয়েছি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ আওয়ামীপন্থী কিছু শিক্ষকরা সিন্ডিকেট সভায় বসবেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সভা শুরু হওয়ার আগেই সেখানে অবস্থান নেব। গণহত্যার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেব না।