বিএনপি চেয়ারপাসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সারাদেশে। সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন সবাই। সাধারণ শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে শুরু করে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও শোক জানাচ্ছেন। এমনকি শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির তারকারাও বাদ নেই।
এদিকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে কান্না ধরে রাখতে পারেননি দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনির খান। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত তিনি। প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর খবরে অঝোরে কেঁদেছেন তিনি। শোক প্রকাশ করে বলেন, আমরা এমন এক নেত্রীকে হারালাম, যার মৃত্যুতে সারা দেশের মানুষ কান্না করছে। তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিকসহ সব সংকটে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।
মনির খান ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যা বিভিন্ন সময় বলে এসেছেন। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ও রাজনীতিতে সরব থেকেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় একসময় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বিএনপির সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে মনির খান বলেন, ভিন্ন মত বা ভিন্ন ধর্মের মানুষ, কারও ক্ষেত্রেই কখনো বৈষম্য করেননি তিনি (খালেদা জিয়া)। সবসময় দেশ ও মানুষের কথা ভেবেছেন। এই দেশ ও মানুষের জন্য নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন। কতবার অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, তাকে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যেতে চাননি। সবসময় দেশের মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছেন। তাকে যখন শেষবার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেয়ার কথা ছিল, তখন তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তার মৃত্যু যেন দেশের মাটিতেই হয়, জানাজা ও দাফনও যেন এই মাটিতেই হয়।
এ গায়ক বলেন, আমরা মতো সারা দেশের মানুষ তার মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশত নসিব করুক। তার পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিক আল্লাহ।
প্রসঙ্গত, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার জানাজা ও দাফন সব সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হবে। তার স্বামী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ জিয়াউর রহমানের পাশে সমাহিত করা হবে তাকে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় খালেদা জিয়ার। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর দেখা দেয় নিউমোনিয়া, সঙ্গে কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পুরনো সমস্যা। হাসপাতালে ভর্তির পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) নেয়া হয় তাকে।
১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম নেয়া এই নেত্রী ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের নাম।