একসময়ের জনপ্রিয় ঢালিউড অভিনেতা শাকিল খান। নব্বইয়ের দশকে যাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল চলনসই ব্যবসা, কখনো–বা সুপারহিটও। চিত্রনায়িকা পপিসহ একাধিক জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমাও উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। পপির সঙ্গে তাঁর প্রেম ও বিয়ে ঘিরে একসময় গুঞ্জনও কম ছিল না। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই অভিনয় থেকে দূরে আছেন শাকিল খান। বর্তমানে তিনি ব্যবসা নিয়েই বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে পর্দায় অনুপস্থিত থাকলেও চলচ্চিত্র ও সমসাময়িক নানা ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তব্য দিতে নিয়মিতই দেখা যায় তাঁকে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে ঢালিউডের বর্তমান বাস্তবতা, তারকাদের অবস্থান এবং দর্শকের রুচি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন শাকিল খান। আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে আসে বিবাহিত নায়ক-নায়িকার সিনেমা চলা, না-চলার প্রসঙ্গ। বর্তমান সময়ের সুপারস্টার শাকিব খান, অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও বুবলি—এই তিনজনকে ঘিরেও সোজাসাপটা মন্তব্য করেন তিনি।
শাকিল খান বলেন, একসময় বিয়ে করলে নায়ক-নায়িকাদের ক্যারিয়ার কার্যত থেমে যেত। অথচ সময় বদলেছে, বিয়ে করেও আজ সুপারস্টার হয়ে উঠেছেন শাকিব খান। তবে এই ব্যতিক্রমী উদাহরণ দিয়েই পুরো বিষয়টিকে সমর্থন করেন না তিনি। বরং প্রশ্ন তুলে শাকিল খান বলেন, ‘অনন্ত জলিল আর বর্ষার সিনেমা কি চলছে? শাকিব-বুবলির সিনেমা কি সত্যিকারের অর্থে চলে? বুবলির কিছু সিনেমা চললেও অপু বিশ্বাসের সিনেমা তো চলছে না। শেষ পর্যন্ত একমাত্র শাকিব খানের সিনেমাই চলছে।’
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শাকিল খান বোঝাতে চান, বিবাহিত তারকাদের ক্ষেত্রে দর্শকের আগ্রহ সীমিত হয়ে আসে। তাঁর ভাষায়, সিনেমা মানেই একধরনের স্বপ্নের জগৎ। ‘সিনেমা হলো গতিশীল এক শিল্প। দর্শক যখন সিনেমা দেখে, তখন সে বাস্তবতা ভুলে স্বপ্নে ডুবে যায়। প্রেমের দৃশ্যে হারিয়ে যায়, হিরো-হিরোইনের কান্নায় চোখ ভিজে ওঠে। এই আবেগটাই সিনেমার প্রাণ। হিরো-হিরোইন যখন অবিবাহিত থাকেন, তখন দর্শকের কল্পনায় তাঁদের প্রতি আকর্ষণটা অনেক বেশি থাকে। বাস্তব জীবনে বিয়ে হয়ে গেলে সেই মোহটা কমে যায়—এটাই বাস্তবতা’, বলেন তিনি।
শাকিল খানের মতে, ব্যতিক্রম থাকলেও সামগ্রিকভাবে বিবাহিত নায়ক-নায়িকার সিনেমায় আবেদন কমে আসে। দর্শক তখন আর পুরোপুরি চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন না। ফলে সিনেমার প্রতি আগ্রহও ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে রূপালি পর্দায় যাত্রা শুরু করেন শাকিল খান। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর প্রথম সিনেমা আমার ঘর আমার বেহেশত তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর টানা এক দশকের বেশি সময় তিনি ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়কদের তালিকায় ছিলেন। অ্যাকশন, রোমান্টিক ও পারিবারিক—সব ধরনের সিনেমায় সাবলীল উপস্থিতি তাঁকে দর্শকের কাছে আলাদা করে পরিচিত করে তোলে।

আজ অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও শাকিল খান এখনো ঢালিউডের পরিবর্তন, তারকাখ্যাতি ও দর্শক—মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বলেন স্পষ্ট ও নির্দ্বিধায়। তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ—যেখানে অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তুলে ধরছেন চলচ্চিত্রের এক কঠিন বাস্তবতা।