অভিনয় দিয়ে অল্প সময়ে দর্শকদের মনে ভালোভাবে জায়গা দখল করেছিলেন অভিনেতা সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৯ বছরেও রয়েছে প্রায় একই জনপ্রিয়তা। এত অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন এবং দীর্ঘদিন একই রেখায় থাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি বেড়ে যাওয়া—এমন শিল্পী সত্যিই বিরল।
সালমান শাহের সঙ্গে সবসময় দেখা যেত অভিনেতা তুষার খানকে। দুজনের ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাদের এ সম্পর্কের বিষয়ে জানিয়েছেন তুষার খান।
তুষার খান বলছেন, সালমান শাহ আমার বয়সে ছোট ছিল, কিন্তু আমাদের মধ্যে অসম্ভব ভালো একটা বন্ধুত্ব ছিল। বড় ভাই, বন্ধু; যাই বলেন না কেন ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। শেষের দিকে দেখা গেছে একসঙ্গে ২৪ দিন আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। হয়তো ৫টা দিন অন্য ফিল্মে কাজ করছি।
সালমানের সঙ্গে হৃদ্যতা বেশ ভালো ছিল জানিয়ে তুষার খান বলেন, আমরা কাজ করতাম রাত পর্যন্ত, এরপর সালমান বাসায় চলে যেত, আমি আমার বাসায় চলে আসতাম। কখনো দেখা যেত ১১টা সাড়ে ১১টার দিকে ও আমার বাসায় চলে আসত। আমাদের প্রতিদিনই আড্ডা হতো।
সালমানের সঙ্গে কত স্মৃতি আছে- বলে শেষ করা যাবে না উল্লেখ করে তুষার খান বলেন, ও অনেক ভালো একটা মানুষ ছিল। অনেকে বলে না, ভালো মানুষ বেশি দিন থাকে না, আসলেই তাই।
তুষার খান বলেন, এত বছর হলো সালমান চলে গেছে, কিন্তু ফিল্মগুলো দেখলে মনে হয়তো এই তো সেদিনের ফিল্ম। এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা যখন সালমানের কথা বলে তখন সত্যি ভালো লাগে। হয়তো তখন তাদের জন্মও হয়নি কিন্তু সালমানকে ভালোবাসে। তাহলে বুঝতে হবে সালমান শাহ অভিনয় দিয়ে নিজের কোন জায়গাটা তৈরি করে নিয়েছে।
সালমানের মৃত্যু প্রসঙ্গে তুষার খান বলেন, সালমানের যখন মন খারাপ থাকত তখন প্রায়ই আমার সঙ্গে কথা বলত। আমাকে টেলিফোনে বলত, আমার ভালো লাগছে না। আমি তোমার বাসায় আসব। ওর ফোন পেয়ে আমি কোথাও আর বের হতাম না। আমরা একসঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতাম। এতে অনেকেটাই ও ফ্রেশ অনুভব করত। পরদিন আবারও ফুরফুরে মেজাজে অভিনয় সেটে দেখতাম ওকে।
অভিনেতা তুষার খান বলেন, সালমান যেদিন মারা যায় তার আগের দিন আমি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরি। বিকালে আমার আর ওর ‘প্রেমপিয়াসী’ সিনেমার ডাবিংয়ের কাজ ছিল। ডাবিংয়ে যাওয়ার আগে আমি আমেরিকা থেকে আনা একটি পার্সেল আমার আত্মীয়ের বাড়িতে দিতে যাই। আমি এত ক্লান্ত অনুভব করি যে, সেই আত্মীয়ের বাড়িতে পার্সেল আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমিয়ে পড়ায় তারাও আমায় আর ডাকেনি।
মৃত্যুর খবর পাওয়ার সময় মনে করে তুষার বলেন, আমার ঘুম ভাঙে রাত পৌনে ১১টায়। সেদিন আর ডাবিংয়ে যাইনি। পরদিন সকাল বেলা পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মেয়ে আন্নি আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, সালমান সুইসাইড করেছে। আমি তখন বিষয়টা মেনে নিতেই পারিনি। আন্নিকে আমি আবার বলি, ওকি মারা গেছে। আন্নি জানায়, হ্যাঁ, এখন মেডিকেলে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে যাই।
এরপরই আফসোস করে তুষার বলেন, হাসপাতালে পরিচালক রেজা হাসমত আমাকে দেখে বলেন, কালকে আপনি কই ছিলেন? আমি বললাম কেন? তখন রেজা জানান, গতকাল ডাবিংয়ের সময় সালমান খুব আপসেট ছিল। আপনাকে অনেক খুঁজেছে। ফোন করেছে। ফোনে না পেয়ে আপনার বাসায় লোক পাঠিয়েছে।
আফসোস করে এই অভিনেতা বলেন, এমন কথা শোনার পর আমার প্রায়ই মনে হয়, ও হয়তো অন্যদিনের মতো আমার কাছে কিছু কথা শেয়ার করতে চেয়েছিল। হয়তো আমার সঙ্গে কথা বলার পর ওর মনটা আবার ফ্রেশ হয়ে যেত। এমন দুর্ঘটনা হয়তো ঘটত না। আমার এখন মনে হয়, আমি ওই দিন কেন আত্মীয়ের বাসায় ঘুমিয়ে পড়লাম! এই কষ্টটা আমার সারাজীবন থাকবে। হয়তো আমি সেদিন না ঘুমিয়ে পড়লে আজও আমাদের মাঝে সালমান শাহ থাকত। এত দর্শকের মন ভেঙে যেত না!