
বাংলা সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৯ বছর পর আজও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক বিস্ময়, এক প্রজন্মের আবেগ। সিনেমা, স্টাইল, সংলাপ, কিংবা পর্দায় উপস্থিতি, সব দিক থেকেই নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রতিভার পাশাপাশি ভীষণ একরোখা ছিলেন সালমান। অকালে চলে যাওয়ার পেছনে সেটিও ছিল অন্যতম কারণ। আজ তার ৫৫তম জন্মদিনে মনে করিয়ে দেওয়া যাক সে রকম এক ঘটনার কথা।
সালমান শাহ জীবনের শেষ কাজ করছিলেন ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমার। ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে তিনি ছবিটির ডাবিং করছিলেন। সেদিনই ডাবিং থিয়েটারে তার দেখা হয় তখনকার আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা মান্নার সঙ্গে। দুজনার সম্পর্ক ছিল বড় ভাই-ছোট ভাই। সেদিনের কথোপকথন যেন হয়ে উঠেছিল এক অমূল্য স্মৃতি।
সালমানকে মান্না বলেছিলেন, ‘তুমি আজকাল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ শট দিচ্ছ। এটা ঠিক না। তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, কেউ এগিয়ে আসবে না তোমার জন্যে। তোমার বোঝা তোমাকেই টানতে হবে। এই সতর্কতার জবাবে একরোখা সালমানও নিজের উপলব্ধির কথা বলেছিলেন। জীবনের নানা ঝুঁকি আর প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করা সালমান সেদিন মান্নাকে বলেছিলেন, ‘আর ঝুঁকি নেব না। আর যাতে ঝুঁকি নিতে না হয়, সেই ব্যবস্থাই করছি।’
ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘শেষ ঠিকানা’ ছবির একটি মারপিটের দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন সালমান শাহ। ঝুঁকিপূর্ণ সেই দৃশ্য থেকে তাকে বারবার বিরত রাখতে চেয়েছিলেন ফাইটিং ডিরেক্টর মোসলেম ও পরিচালক নিজেও। কিন্তু সালমান তো একরোখা। নিজেই শটটা দেবেন! সেই দৃশ্যই হয়তো ছিল এক ভয়ানক পরিণতির শুরু। আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে যেতে হয়েছিল সিঙ্গাপুর।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলে যান সালমান। অথচ সে মাসের আজকের দিনে ছিল তার ২৫তম জন্মবার্ষিকী। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে একরোখা সালমান চলে যান। মৃত্যুর পর একের পর এক মুক্তি পেতে থাকে তার অভিনীত সিনেমাগুলো ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’। ছবিগুলো যেন সালমানহারা ঢালিউড ও বাংলাদেশকে করে তোলে আরও অসহায়। সবাই অনুধাবন করতে পারে, তারা কী হারিয়েছে।
বেশ কয়েকটি সিনেমা শেষ করে যেতে পারেননি সালমান। সেসবের মধ্যে ‘বুকের ভিতর আগুন’, ‘প্রেম পিয়াসী’ অন্যতম। অন্য অভিনেতা ও ডামির মাধ্যমে ছবিগুলো শেষ করতে হয়েছিল। তবু দর্শকের চোখে সেই দৃশ্যগুলোতে ছায়া হয়ে ছিলেন সালমান শাহ।