
সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় অনেক দম্পতির মনেই একটা প্রশ্ন জাগে—আমাদের রক্তের গ্রুপ যদি এক হয়, তাহলে কি ভবিষ্যতের সন্তানের কোনো সমস্যা হতে পারে? বিশেষ করে যখন আশেপাশের কেউ বলে দেন রক্তের গ্রুপ এক হলে নাকি সমস্যা হয়, তখন দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
আসলে এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা ছড়িয়ে আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, রক্তের গ্রুপ এক হলে সাধারণভাবে কোনো সমস্যা হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আরএইচ পজিটিভ ও নেগেটিভ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার।
চলুন, চিকিৎসকের ব্যাখ্যা থেকে বিষয়টি সহজভাবে জেনে নিই।
রক্তের গ্রুপ আসলে কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
মানুষের রক্তে বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রক্তের গ্রুপ নির্ধারিত হয়। আমরা সাধারণত যেটা জানি, সেটা হলো — A, B, AB ও O গ্রুপ। এগুলো ABO গ্রুপিং পদ্ধতির অংশ।
রক্তের গ্রুপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো Rh ফ্যাক্টর, যার ভিত্তিতে রক্ত হয় পজিটিভ (+) অথবা নেগেটিভ (–)। এটাই সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাহলে স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কী সমস্যা হয়?
না, রক্তের গ্রুপ এক হলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যার বিষয়টি রক্তের Rh ফ্যাক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
চলুন দেখে নেই কোন অবস্থায় কী হয়-
উভয়ের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে:
সন্তানের রক্তের গ্রুপও সাধারণত পজিটিভ হয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না।
উভয়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে:
সন্তান নেগেটিভ রক্ত নিয়ে জন্মায়। এখানেও কোনো সমস্যা নেই।
স্বামী নেগেটিভ, স্ত্রী পজিটিভ:
কোনো ঝুঁকি নেই। সন্তান পজিটিভ বা নেগেটিভ—দুটোই হতে পারে, কিন্তু এতে মা বা শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না।
স্বামী পজিটিভ, স্ত্রী নেগেটিভ:
এই অবস্থায় কিছুটা সতর্কতা দরকার। যদি সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয়, তাহলে মায়ের শরীরে Rh অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতের গর্ভাবস্থায় সমস্যার কারণ হতে পারে।
এই অ্যান্টিবডি তৈরি হলে কী হতে পারে?
ভবিষ্যতের সন্তানের রক্তকে মায়ের শরীর বিরোধী হিসেবে চিনে ফেলতে পারে। এতে গর্ভের শিশুর রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দেখা দিতে পারে জন্ডিস, রক্তশূন্যতা, এমনকি Hydrops Fetalis নামে গুরুতর জটিলতা, যেখানে শিশুর শরীরে পানি জমে যায়।
যদি চিকিৎসা না হয়, তাহলে শিশুর গর্ভেই মৃত্যু হতে পারে।
তবে, এটা সাধারণত প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে হয় না। সমস্যা দেখা দেয় পরবর্তী গর্ভধারণে, যদি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ না নেওয়া হয়।
প্রতিরোধ ও করণীয় কী?
ডা. মারুফা খাতুন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, কিছু সহজ সমাধান দিয়েছেন-
১. গর্ভধারণের আগেই স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ জেনে নিন।
২. স্ত্রীর রক্ত যদি Rh নেগেটিভ হয় এবং স্বামীর পজিটিভ হয়, তাহলে কিছু পরীক্ষা লাগবে:
– Rh অ্যান্টিবডি টেস্ট (মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না)
৩. যদি অ্যান্টিবডি না থাকে, তাহলে:
– গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহে একটি টিকা নিতে হয় – সন্তান জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি টিকা
যদি অ্যান্টিবডি এরই মধ্যে থেকে থাকে, তবে চিকিৎসকের ঘন নজরদারিতে থাকতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হওয়া মানেই সমস্যা নয়। বরং Rh পজিটিভ/নেগেটিভ মিল থাকলে একটু বাড়তি সতর্কতা দরকার। সময়মতো রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শে চললে সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জন্ম নিতে পারে।
সূত্র : ব্রাইট সাইড