
প্রশ্ন: স্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় বা অন্যদের সাথে স্ত্রীর প্রসঙ্গে কথা বলার সময় কেউ যদি স্ত্রীকে নিজের মায়ের সাথে তুলনা করে বলে, ‘তুমি আমার মায়ের মতো’ অথবা ‘আমার স্ত্রী আমার মায়ের মতো’ তাহলে কি তালাক হয়ে যাবে?
উত্তর: জিহারের নিয়ত ছাড়া অর্থাৎ স্ত্রীকে মায়ের মতো মাহরাম করে নেওয়ার নিয়ত ছাড়া কেউ যদি স্ত্রীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে অথবা স্ত্রীর কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে ‘আমার মায়ের মতো’ বলে, তাহলে তালাক হয়ে যায় না বা স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায় না। এ ধরনের কথা বলার কারণে কাফফারাও দিতে হয় না।
তবে স্ত্রীকে এভাবে ‘মা’ বলে ডাকা বা ‘মায়ের মতো’ বলা নাজায়েজ। তাই ইচ্ছাকৃত এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্ত্রীকে ‘মায়ের মতো’ বললে যখন তা জিহার গণ্য হবে
ইসলামে জিহার হলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো মাহরাম নারীর সাথে সাদৃশ্য দেওয়া। অর্থাৎ স্ত্রীকে মা বা বোনোর মত এমন কোনো মাহরাম নারীর সাথে তুলনা করা যে নারী তার জন্য চিরস্থায়ীভাবে হারাম। যেমন স্বামী যদি স্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলে, ‘তুমি আমার জন্য হারাম, যেমন আমার মা হারাম’ অথবা বলে, ‘তুমি আমার মায়ের মতো’ বা ‘তুমি আমার বোনের মতো’—তাহলে তা জিহার হিসেবে গণ্য হয়।
জিহার করলে স্ত্রী মায়ের মতো চিরস্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায় না এবং স্ত্রী তালাকও হয়ে যায় না। তবে জিহার করলে স্বামীর ওপর কাফফারা দেওয়া আবশ্যক হয় এবং কাফফারা দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া হারাম হয়ে যায়।
জিহার প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মা নয়। তাদের মা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তারা অবশ্যই অসঙ্গত ও অসত্য কথা বলে। আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল। (সুরা মুজাদালা: ২)
জিহারের কাফফারা হলো, প্রথমত: সাধ্য থাকলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করা (দাসপ্রথা না থাকায় যা বর্তমান যুগে সম্ভব নয়)। দ্বিতীয়ত: দাস মুক্ত করা সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা। তৃতীয়ত: ধারবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা সম্ভব না হলে ৬০ জন দরিদ্র মানুষকে খাবার খাওয়ানো।
আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, তারপর তারা যে কথা বলেছে তা প্রত্যাহার করে নেয় তবে পরস্পরকে স্পর্শ করার আগে তাদেরকে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এর দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন। আর যার দাস সংগ্রহ করার সামর্থ্য নেই, সে এক নাগাড়ে দুই মাস রোজা রাখবে পরস্পরকে স্পর্শ করার আগে। আর যে তা করতে পারবে না, সে ষাট জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে। এ বিধান এ জন্য যে, তোমরা যাতে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান আন। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। (সুরা মুজাদালা: ৩, ৪)