Image description

নায়ক রাজ্জাক। রূপালি পর্দায় অভিনয় করে পেয়েছেন 'রাজ' উপাধি। পাঁচ দশক সাফল্য ধরে রেখে অভিনয় করে গেছেন জীবদ্দশায়। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে অতুলনীয়। আবার সামাজিক সিনেমায়ও শীর্ষে ছিলেন। ভারতীয় ও উর্দু সিনেমার ভিড়ে এদেশের দর্শকদের হলমুখী করেছে তার সিনেমা। ঢালিউডকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন।

২১ আগস্ট নায়করাজ রাজ্জাকের প্রয়াণ দিবস।

২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল নায়করাজের গুলশানের বাসায় তার সঙ্গে আড্ডার কিছু স্মৃতি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

কোটি দর্শকদের প্রিয় নায়ক তিনি। আমর কাছেও তিনি স্বপ্নের মতোই। তার বাসায় সাক্ষাৎকার নিতে যাব, কাছ থেকে তাকে দেখব, ছবি তুলব—এ যেন স্বপ্ন স্বপ্নই মনে হচ্ছিল।

সেদিন আমার সঙ্গী ছিলেন আলোকচিত্রী রিদওয়ান আদিদ রূপন।

রাজধানীর জ্যাম ঠেলে পৌঁছে যাই গুলশানে। 'লক্ষ্মীকুঞ্জ' খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগেনি। 'লক্ষ্মীকুঞ্জ' রাজ্জাকের বাড়ির নাম। ওই এলাকার সবার অতিচেনা একটি বাড়ি।

বাড়িটির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মনে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করলাম—এটাই 'লক্ষ্মীকুঞ্জ', এখানেই থাকেন নায়করাজ রাজ্জাক।

ভেতরে ঢুকতেই রাজ্জাক-পুত্র সম্রাট এলেন। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হলো। বললেন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে, নায়করাজ নিচে নামবেন।

নিচতলার বারান্দাটা সুন্দর। দেয়ালে অনেকগুলো ছবি। সব ছবিই নায়করাজের।

চা এলো। চা খেতে খেতে কত কী ভাবছি! মনে পড়লো, ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় রাজ্জাক অভিনীত 'পুত্রবধূ' সিনেমা দেখেছিলাম হলে গিয়ে। ওটাই আমার জীবনের প্রথম সিনেমা। সাংবাদিক হিসেবে ২০০৭ সালে এই বাসায় প্রথম এসেছিলাম একটি নিমন্ত্রণে। সেই রাতেও অনেক আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া হয়েছিল।

বেশি সময় স্মৃতিকাতর হতে পারলাম না। কেননা, ইতোমধ্যে চলে এলেন নায়করাজ রাজ্জাক। আমি উঠে দাঁড়ালাম। তিনি টি-শার্ট পরে এসেছেন। হাসি মুখে বললেন, 'ইয়াংম্যান, দাঁড়িয়ে কেন? বসো।'

তিনি বসলেন, আমিও বসলাম।

শুরুতেই বললেন, 'আমার সিনেমা প্রথম কবে দেখেছ?'

বললাম, স্কুলজীবনে। প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন। সিনেমার নাম 'পুত্রবধূ'।

খুশি হলেন। বললেন, 'বলো কী জানতে চাও?'

বললাম, কোটি কোটি মানুষের পছন্দের নায়ক আপনি। এই সময়ে এসে কী স্বপ্ন দেখেন?

তিনি বললেন, 'আমি জানি এদেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে পছন্দ করেন। তাদের ভালোবাসাই সব। তবে, দেশে যদি ১৭ কোটি মানুষ থাকে, আগামীতে ১৮ কোটি হবে। ১৮ কোটি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মরতে চাই।'

দর্শকদের নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই।

বললেন, 'দর্শকরাই আমাকে নায়করাজ রাজ্জাক বানিয়েছেন। দর্শকদের জন্যই আমি। এতদূর আসতে পেরেছি তারা ভালোবেসেছেন বলেই। দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিলে এতদূর আসতে পারতাম না। কাজেই, সব কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা তাদের প্রতি।'

নায়ক রাজ্জাক। ছবি: সংগৃহীত

আবারও চা এলো। তিনি বললেন, 'চা নাও?'

চা খেতে খেতে জানতে চাইলাম, কখনো হতাশ হয়েছেন?

তিনি হেসে বললেন, 'সবার জীবনেই কম-বেশি হতাশা আসে। সুখ-দুঃখ আর আনন্দ-বেদনা নিয়েই জীবন। আমি হতাশাকে স্পর্শ করতে দিইনি। স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে গেছি। সততা নিয়ে ও পরিশ্রম দিয়ে দিনের পর দিন কাজ করেছি। একসময় সফলতা পেয়েছি।'

জানতে চাইলাম, তার সময়ের নায়কদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল।

বললেন, 'মধুর সম্পর্ক ছিল। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমার সময়ে এবং কিছু পরে যারা নায়ক হয়েছেন, তাদের সঙ্গে কখনোই নেতিবাচক সম্পর্ক ছিল না। তাদেরকে আমি পছন্দ করতাম। কাছে টেনে নিতাম। সুযোগ দিতাম। প্রায়ই বলতাম, তোমরাও কাজ করো। আমি একা তো সব কাজ করতে পারব না। মিলেমিশে কাজ করেছি।'

একসময় প্রশ্ন করি, নায়ক হওয়ার জন্য কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে আপনাকে?

তিনি বললেন, 'অনেক। অনেক সংগ্রাম করেছি নায়ক হওয়ার জন্য। দিনের পর দিন লেগে থেকেছি। কত মানুষের কাছে গিয়েছি অভিনয়ের জন্য! পিছু ফিরিনি কখনো। অভিনয় ছিল আমার নেশা, ভালোবাসা, সবকিছু।'

আরও অনেক গল্প হয়েছিল সেদিন। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে কথা শুনছিলাম।

সবশেষ প্রশ্ন করি, যে জীবন যাপন করছেন, তা নিয়ে কতটা সুখী?

বললেন, 'শতভাগ। পরিবার নিয়ে আমি সুখী। সুন্দর একটা জীবন আমি যাপন করছি। সন্তানরা আছে, স্ত্রী আছে, নাতি-নাতনি আছে। সবাইকে নিয়ে ভালো আছি।'

এরপর ছবি তোলার জন্য অনুরোধ করলে হাসিমুখে তিনি ছবি তুললেন।

ফেরার সময় বলেন, 'আবার এসো।'

'লক্ষ্মীকুঞ্জ' থেকে বের হওয়ার সময় নিজের অজান্তেই গুনগুন করে গাইতে শুরু করি রাজ্জাক অভিনীত সিনেমার বিখ্যাত গান—'পিচঢালা এই পথটারে আজ ভালোবেসেছি...।'

প্রয়াণ দিবসে নায়করাজের প্রতি শ্রদ্ধা। আজও এদেশের মানুষ তাকে স্মরণ করে ভালোবাসায়।