Image description

নতুন জীবনে পা দিয়েছেন তাহসান খান। এরপর গেল কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা প্রায় সবখানে। সমালোচনা থেমে নেই তার প্রাক্তন স্ত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলাকে নিয়ে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মিথিলাকে নিয়ে লেখা একটি পোস্ট। যেখানে উঠেছে এসেছে অভিনয়ের বাইরে মিথিলার ব্যক্তিগত জীবনে নানা কৃতিত্বের বিষয়, যা অনেকেরই অজানা। সেই পোস্ট শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী রুনা খানসহ আরও অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই পোস্টটি সমকালের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হল-

বাংলাদেশে আপনারা যাকে বাজারের মেয়ে বলে ভেবেছিলেন সেই মেয়েটাই একটি বিশ্ব বিখ্যাত এনজিও ব্র্যাকের অন্যতম একজন কর্ণধার। যে মেয়েটির চরিত্র খারাপ বলে আপনারা গালাগাল করেছিলেন সেই মেয়েটি পৃথিবীর ১১ টি দেশে মা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে। যার ছবি দেখে আপনারা এখনো হা হা রিয়েক্ট দেন সেই মেয়েটির মাস্টার্সের দুটি ডিগ্রিধারী, যার একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের। গত পাঁচ বছর ধরে আপনারা যে অভিনেত্রীকে নিয়ে তুমুল সমালোচনায় মত্ত ছিলেন সেই মেয়েটি এই পাঁচ বছরে পিএইচডি ডিগ্রি নিচ্ছে। আগামী বছর সে পিইচডি ডিগ্রিধারী হবে। কিন্তু আপনারা যারা সমালোচনা করেছেন তারা কে কি অর্জন করেছেন একটু নিজের চেহারায় দেখে বলবেন কি?

 

ব্র্যাক যে বিশ্বের একটি প্রথম শ্রেণির এনজিও এটাও এই দেশের ৯৯ভাগ মানুষ জানেনা। ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফজলে হোসেন আবেদের নেতৃত্বে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ সারাবিশ্বে সুনামের সাথে কাজ করছে এটাও দেশের মানুষ জানেনা। আমরা বাঙালিরা আমাদের দেশের রত্নকেই তো ভালোভাবে চিনতে পারলাম না। দক্ষিণ সুদানের রিফিউজি যারা উগান্ডায় গেছে তাদের গিয়ে একবার দেখে আসুন তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যে এক কোটি শরণার্থী ভারতে ছিলো তাদের অবস্থাটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। দুই বাংলা এক ভাষার হয়েও চিন্তা চেতনায় ভারতের কলকাতা আমাদের চেয়ে কত এগিয়ে গেছে তা ওদের শহর ও মানুষের চিন্তা-ভাবনা দেখলেই বুঝতে পারবেন।

যে মেয়েটি অভিনয়ে এসেছে তাকে আমরা অভিনেত্রী হিসেবে চিনি। কিন্তু অভিনয়ের বাইরে ও যে মানুষের একটা ব্যক্তি জীবন থাকে তা আমরা ভুলে যাই। অভিনয়ের বাইরেও মেয়েটি যে কারো সন্তান, কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী এসব আমরা ভুলে যাই। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে কোন ছেলে ও মেয়ে প্রেমে পড়েনা আমাকে তা বলতে পারেন? প্রেমে পড়া যদি অপরাধ হয় তবে এই দেশের লক্ষ কোটি তরুণ ও তরুণী সবাই অপরাধী। একটা নির্দিষ্ট বয়সে গিয়ে মানুষ সংসার করে। প্রায় সংসারে ছোট খাটো মান-অভিমান ও ভুল বুঝাবুঝি থাকতেই পারে। ঢাকা শহরে প্রতি ঘন্টায় তিনজন নারী ডিভোর্সের শিকার হন। এর মানেই যে সব নারীর চরিত্র খারাপ আর সব পুরুষ সাধু বিষয়টি এমন নয়।কোন কোন ক্ষেত্রে একটি মিষ্টি সংসারও ভুল বুঝাবুঝির কারণে ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু মেয়ের দোষ আর ছেলের কোন দোষ নেই এসব ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এক বছরের একটি মেয়েকে নিয়ে স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে নিজেকে আবার পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য তৈরি করা, অভিনয় ও বাচ্চা সামলানো এবং তার পাশাপাশি ১১টি দেশে কাজ করা এই বিষয়টি যত সহজ ভাবছেন তত সহজ নয়।

আপনার চারপাশে অসংখ্য সুন্দরী মেয়ে হয়তো দেখেছেন। এদের কেউ সুন্দরী কিন্তু সে মেধাবী ছাত্রী নয়। আবার সুন্দরীর সঙ্গে মেধাবী হলে আবার সে গান গাইতে পারেনা। গান গাইতে পারলেও অনেকেই আবার নাচতে পারেনা। কিন্তু একটি মেয়ে যখন একজন ভালো চাকরিজীবী, মেধাবী ছাত্রী, গায়িকা ও নায়িকা এবং তার পাশাপাশি সে ছবিও আঁকতে পারে তবে বুঝতে হবে সৃষ্টির স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিয়ে এই মেয়েটি পৃথিবীতে এসেছে। সে পৃথিবীতে শুধু খাওয়া আর ঘুমের জন্য জন্ম নেয়নি, এই পৃথিবীতে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখতে তার জন্ম হয়েছে।

একটি সংসারে দু'জন মানুষের বিচ্ছেদের পর দুটো মানুষের মাঝেই শূন্যতা বিরাজ করে। শূন্যস্থান কখনো খালি থাকেনা। সেই অভিনেত্রীর সেই স্থানটা দখল করেছে আরেকজন পুরুষ। এতে আপনি অভিনন্দন না জানিয়ে বাজে মন্তব্য করে আপনার জাতটা চিনিয়ে দিলেন। এতে কি তার কোন ক্ষতি হয়েছে? পুরুষ দশটা বিয়ে করলেও আপনার কিছু যায় আসেনা। আর নারী কোথাও সুখ খুঁজতে গেলে সে বাজারের পতিতা হয়ে যায়! আপনার যেমন শরীর আছে, নারীদেরও আছে। আপনার যেমন হৃদয় আছে, নারীদেরও আছে। আপনার ক্ষেত্রে ১৬ আনা হলেও নারীর ক্ষেত্রে তা চার আনাও নয়। কারণ, পৃথিবীর আদিকাল থেকেই পুরুষ নিজেকে মানুষ ভেবেছে আর নারীকে ভেবেছে তাদের গোলাম। পুরুষ যেমন রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করতে পারে ঠিক তেমনি পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য নারীও যোগ্যতার সাথে রাজ্য শাসন করেছে।ক্ষুধা পেলে আপনি সিংহ হয়ে যান আর নারীকে বিলাই বানিয়ে রাখতে চান। অথচ এই পৃথিবীতে ক্ষুধার জ্বালা সকল মানুষের সমান।

আমি মিথিলার কথা বলছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা এবং ছোটবেলা থেকেই লোকনাট্য থিয়েটারে কাজ করে আজকের একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হওয়া এসবের পেছনে তার নিজের একটা গল্প থাকে। আমরা শুধু অভিনয়ের মানুষটাকে দেখি কিন্তু তার ভেতরের মানুষটাকে দেখিনা। মরলিন মনরোর হাজারটা প্রেমিক ছিলো কিন্তু এখনো সে আমাদের চোখে মনরো হয়ে আছে। সালমান খান এখনো বিয়ে করেননি কিন্তু শাহরুখ খান তার চেয়ে একবছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমরা ভুলে যাই শাহরুখ ও সালমান দিনশেষে আমাদের মতোই মানুষ। প্রতিটি মানুষের একটা নিজস্ব জগৎ আছে। আমাদের সবার উচিত পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা এই মানুষগুলোকে নিজেদের শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে নিজেদের তাদের মতো করে তৈরি করা।

আমার বুড়িটাও নাচতে পারে, গাইতে পারে এবং অসম্ভব মেধাবী ছাত্রীও। তারও একটি ব্যক্তি জীবন আছে। যে মেয়েটি মেধাবী নয়, যে গাইতে পারেনা, নাচতে পারেনা অথবা যে পঙ্গু তারও একটি ব্যক্তি জীবন আছে। মানুষের ব্যক্তি জীবন নিয়ে সমালোচনা একমাত্র অসভ্য ও ইতরদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু সেই সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মিথিলারা ঠিক জগত সংসারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে নেয়। ব্র্যাকের মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিথিলা যখন প্রথম স্থান অধিকার করেছে তখন সে ছিল মা। তার সাথে তার মাত্র এক বছরের কন্যা সন্তান। তবুও পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে প্রমাণ করেছিলো মিথিলার জন্ম হয়েছে জেতার জন্য। অভিনয় করে মিথিলা পেট চালায় না সে ব্র্যাকের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তাও বটে যাকে পৃথিবীর অন্তত ১১ টি দেশের অসংখ্য মানুষ চেনে। অভিনয় হচ্ছে তার শখ।

আলফ্রেড নোবেলের লেখাটি শেয়ার করে রুনা খান লিখেছেন, ‘বহুদিন ভেবেছি এই কথাগুলো লিখবো। হয়ে উঠেনি, আজ এই গোছানো লেখার কথামালা দেখে পোস্ট করার ইচ্ছেটা সংবরণ করতে পারলাম না! জয়তু মিথিলা।’