Image description

শাকিব খান আমার মতোই কর্মে বিশ্বাসী। কাজ দিয়ে সব কটাক্ষের জবাব দেন। এ জায়গা থেকে শাকিবকে শ্রদ্ধা করি। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বললেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।

পুরোনো শাড়ির গন্ধ, শাড়ির ভাঁজ আর জয়া আহসান একসূত্রে গাথা। তার শরীর ও মন জানে পুরোনোকে আগলে রাখতে। পুরোনো দিনের মানুষগুলোর প্রতিও তার অদ্ভুত টান। মায়ের চেয়ে পুরোনো নানুও (নানি) তার মা! পুরোনো কথা ও নতুন সিনেমার গল্পের ঝাঁপি খুলে দিলেন অভিনেত্রী। 

প্রথম কবে শাড়ি পরেছিলেন সে কথাও জানালেন জয়া আহসান— একদম প্রথম শাড়ির কথা মনে নেই। মনে আছে, প্রথম কবে শাড়ি কিনে দেওয়া হয়েছিল। একটা সময় পর্যন্ত মায়ের শাড়ি নিয়েই পরেছি। বোনের শাড়ি নিয়ে পরেছি। সেই প্রথম আমার জন্য একটা শাড়ি কেনা হলো। তখন আমি সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমার নানু টাঙ্গাইল থেকে শাড়ি কিনে দিল। সেদিন প্রথম মনে হলো— অফিসিয়ালি আমি বড় হয়ে গেছি।

শাড়িটা আছে কি?—এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে বললেন, আছে। সব আলাদা করে রেখে দিয়েছি। এটা আমার তো খুব খারাপ অভ্যাস।

আমার ওয়ার্কিং ক্লসেটে একদিকে শুধুই সারি সারি পুরোনো শাড়ি। আমি পুরোনো কিছুই ফেলতে পারি না। ক্লসেটে নতুন কিছু যোগ হলে পুরোনোটা বের করে দেওয়া উচিত। যাদের প্রয়োজন তাদের দিয়ে দেওয়া যেতে পারে বা অন্য কিছুও বানানো যেতে পারে। আমার এত মায়া সবেতে! পুরোনো গন্ধ, শাড়ি-জামার ভাঁজ দেখতে দেখতে সেই সময়ে পৌঁছে যাই।

শাড়ি ছাড়া আর কী রেখেছেন? জয়া বলেন, সব সব। আমার প্রথম দুল এখনো যত্নে আমার কাছে রাখা আছে। ছোট ছোট কানের দুল যেগুলো এখন ব্যবহার করি, সেগুলো কত পুরোনো। ছোট্ট ছোট্ট ঝুমকো। কি একটা খুঁজতে গিয়ে সেগুলো হঠাৎ পেলাম। ওটাও আমায় নানু দিয়েছিল। আমার সব কিছুতে নানুর একটা বড় ভূমিকা। আমার ফ্রেন্ড, ফিলোজফার ও গাইড। প্রায়ই মনে হয়, মায়ের পাশাপাশি নানুকেও যদি মা ডাকতে পারতাম। শুধুই কি বায়োলজিক্যাল মা-ই মা হয়? দিদা (নানি) আমার ছোটবেলা মায়ায় ভরে দিয়েছিল।

ঠিক যেমন আপনি আর আপনার মা! আপনারা ভীষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে...। উত্তরে জয়া বলেন, আমাদের সংসারে আমাদের মা সূর্য। মায়ের সংসারে শুধুই যে সন্তানে সীমাবদ্ধ তা নয়। পোষ্যরা আছে। পরিচারিকারাও আছেন। তারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা দেখাতে চাই না। দুর্বল হয়ে পড়ি।

কারণ আমি যে শারীরিকভাবে মায়ের খুব কাছাকাছি, তা নই। মাকে কখনো বলিনি— আমি তোমাকে ভালোবাসি। মাকে ডেকে কখনো আবার দুঃখপ্রকাশও করিনি। কেমন যেন লাগে! অথচ পৃথিবীর সবার কাছে বলতে পারি ‘সরি’।

মাকে বলা যায় না?—এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, না। আমার কেমন যেন লজ্জা লাগে। ঈদের দিন সবাইকে সালাম করছি। মাকে সালাম করতে ভুলে যাই বা করি না।

আর ‘ডিয়ার মা’? জয়া বলেন, ডিয়ার মা’ মানে মাতৃত্ব, মা-মেয়ের সম্পর্ক। পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী সন্তান দত্তক নেওয়ার ঘটনার মোড়কে থ্রিলারের গল্প বলেছেন।

আপনার চোখে সন্তান দত্তক নেওয়া বিষয়টি কী রকম? অভিনেত্রী বলেন, সবাইকে বা সব সময় বায়োলজিক্যাল মা হতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। যদিও তার পরেও আমাদের সমাজ এখনো এ বিষয় ততটা উদার চোখে দেখে না। রক্ত ও বংশ নিয়ে ভাবে।

সন্তান দত্তক নেওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয়টিই ‘ডিয়ার মা’-এ তুলে ধরা হয়েছে। পরিচালকের বক্তব্য ও ভালোবাসা রক্তের সম্পর্কের থেকেও গাঢ়। কী করে সেটি বলছি— সেটিই দর্শক পর্দায় দেখবেন। আপনিই বলুন না, দত্তক নেওয়া কি এখনকার দিনে কোনো বড় ব্যাপার? যিনি সন্তান ধারণ করতে চান তিনি সেটাই করবেন। তারপরও যদি কেউ সন্তান চান তিনি দত্তকের মাধ্যমে সেই ইচ্ছাপূরণ করতে পারেন। আজকের দায়িত্বশীল নাগরিকের সেটিই করা উচিত। বহু সন্তান আছে যারা, ঘর পায় না, মা-বাবা পায় না। ওদের আপন করে নিলে আমাদের সন্তানের সঙ্গে ওই মানুষগুলো মিলে যাবে। সমাজে সমানাধিকার বাড়বে।

সিনেমাতে আপনার চোখ বারবার কথা বলেছে...। জয়া বলেন, আসলে চিত্রনাট্যেই ও রকম ছিল। চিত্রনাট্যকার শাক্য অসাধারণ লিখেছেন। গল্পের ভাবনা তো অনিরুদ্ধদা মানে টোনিদার। টোনিদার কাজ মানে যত্নের কাজ। আর চিত্রগ্রাহক, পোশাক পরিকল্পক, রূপসজ্জাশিল্পীরা তো আছেনই। সবাই মিলে আমায় তৈরি করে দিয়েছেন। এই সিনেমা মানুষকে নতুন করে ভাবাবে। সিনেমাতে শিশুশিল্পীরাও ভালো কাজ করেছে।

বাংলাদেশে কাজের অবস্থা কেমন? এ বিষয়ে অভিনেত্রী বলেন, হ্যাঁ, বেশ কিছু কাজ হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমার প্রথম সিরিজ ‘জিমি’ মুক্তি পেল। ঢাকায় আমার প্রযোজিত একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ঈদে মুক্তি পেল ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’। দুটো সিনেমাতেই বাংলাদেশের তারকা অভিনেতারা অভিনয় করেছেন। ঈদকে ঘিরে অনেক কাজ হয়েছে আমাদের দেশে।

বাংলাদেশে কি শুধুই শাকিব খানের শাসন? ওর প্রভাবে ঢালিউডের বিনোদন দুনিয়া অনেকটাই আচ্ছন্ন...। এ প্রসঙ্গে জয়া বলেন, শাকিব নিজেই উন্নতি করেছেন। অসংখ্য অনুরাগী। তারা শাকিবকে মন থেকে ভালোবাসেন। দেখুন, জীবনে ঝঞ্ঝাট, ঝামেলা থাকবেই। এগুলোর উত্তর না দিয়ে শাকিব নিজের কাজ দিয়ে সব কিছুর জবাব দেন। আমি নিজে সেটি দেখেছি। ও-ও আমার মতো কর্মে বিশ্বাসী। এই জায়গায় আমি ওকে শ্রদ্ধা করি।

সিনেমাতে গল্প বলা কমে আসছে? অভিনেত্রী বলেন, একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসাবে স্বীকার করতেই হয়, গল্প বলার জায়গায় কমে গেছে। অভিনেতারা সংখ্যায় কমে গেছি। একই চেহারা বারবার দেখছেন দর্শকরা।

কিছু নতুন মুখ এসেছিলেন, তারা যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন...। তিনি বলেন,  আমরা আসলে কেউ জায়গা ছাড়তে জানি না। আমাদেরও জায়গা ছাড়তে হবে। আমি যে সিনেমা দুটো সিনেমা প্রযোজনা করেছি সেখানে দুজন নতুন অভিনেত্রী এনেছি। আমাদের আরও চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। বড্ড শর্টকার্ট রাস্তায় গিয়ে শিওর শট খেলার চেষ্টা করছি।

যেমন ধরে নেওয়া হয়, ইনি নামকরা অভিনেত্রী, বক্স অফিস আছে...? জয়া বলেন, সুতরাং একেই নিতে হবে। অভিনেত্রী আমাদেরই তৈরি করতে হবে। বক্স অফিস আমরা তৈরি করব। শুধু পুরুষকেন্দ্রিক কাজ কেন হবে? সত্যিই কি মেয়েরা বক্স অফিসে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাহলে তো পুরুষেরাই একা কাজ করে ফাটিয়ে দিতেন। নারীকেন্দ্রিক সিনেমা হোক। সেগুলোকে আরও বড় করে বানাক। দুই-তিনজন, চারজন অভিনেত্রী মিলে একটি সিনেমাতে অভিনয় করুন। টোনিদার এই সিনেমাতে আমার একটা জিনিস ভালো লাগল, পটভূমিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। বাংলায় কাজ। কিন্তু তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে, মুম্বাই থেকে অভিনেত্রীদের নিয়ে এসেছেন। উনি সব সময় এই সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেন। শুধু এই সিনেমাতে নয়, ওর প্রত্যেক সিনেমাতেই এই চেষ্টা থাকে। চুপচাপ এই কাজগুলোই করে যান। এটাই করা উচিত। মুখে বেশি কিছু না হলে আমাদের কাজ করে দেখানো উচিত।

মনে হয় না, বাংলা সিনেমাতে হয় গোয়েন্দা নয় সিক্যুয়েল...? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হচ্ছে। এগুলো কিছু কিছু হবেই। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক কাজও করতে হবে। গল্প ঠিকমতো বানাতে পারলে দর্শক কেন দেখবে না? উপমহাদেশে সব ধরনের সিনেমা, সব ভাষার সিনেমা দর্শক দেখতে পাচ্ছে। সিনেমার বিষয় ভালো না হলে এখন আর কেউ সেই সিনেমা দেখবে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমরা দর্শকদের ভালো সিনেমা দেখাতে পারছি না। বাংলায় নতুন কিছু তৈরি করে দেখাতে হবে। চলচ্চিত্র উৎসবগুলোয় সিনেমা পাঠাতে হবে। এভাবেই বাংলা ভাষায় তৈরি সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

জয়া আবার কবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা করবেন, এই আগ্রহ কলকাতার দর্শকদের আছে...? জয়া বলেন, কৌশিকদার ‘অর্ধ্বাঙ্গিনী ২-এর শুটিং শুরু হলো। বাকি পরিচালকদের সঙ্গেও নিশ্চয়ই কাজ হবে। আসলে দুই বাংলায় মিলিয়ে কাজ করি তো। ফলে ধীরেসুস্থে এগোতে ভালোবাসি।

ব্যক্তি সম্পর্কের জটিলতা বেড়েছে আরও— মনে হয় আপনার। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটাই কি পুলোনো হয়ে গেল? জয়া বলেন, এখন তো কেউ রিলেশনশিপেই যায় না! সিচুয়েশনশিপ... আর কী কী যেন আছে? এসব ভাবনায় সব কিছুই আছে। শুধু রিলেশনশিপটাই নেই।

আসবে। আবার ঘুরে আসবে। তবে পৃথিবীতে যত রকম মানুষ তত রকম সম্পর্ক। কোনো সম্পর্কই কোনো সম্পর্কের সঙ্গে মেলে না। আমার প্রত্যেকটি ফেলে আসা সম্পর্কও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই সম্পর্কগুলো নিয়েই আজকের আমি। সব ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায় না। ভুলটুকুও তো আমার! সেটি মেনে সামনের দিকে চলা।