
ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে পা রাখা শাবানা, কবরী ও ববিতা—তিনজনই অল্প বয়সেই হয়ে উঠেছিলেন দেশের শীর্ষ নায়িকা। নায়কপ্রধান ইন্ডাস্ট্রিতে তারা নিজেদের অভিনয়গুণে জায়গা করে নিয়েছিলেন এবং এক সময় পর্দায় দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনজনই ছিলেন একচেটিয়া জনপ্রিয়, যা অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছিল—তবে কি তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কিংবা রেষারেষি ছিল?
এই প্রসঙ্গে শাবানা স্পষ্টভাবে জানালেন, পর্দার বাইরে তারা ছিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে জড়িত। শাবানার ভাষায়, ‘সত্যি বলতে, কারও সঙ্গেই আমার কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। আমি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, অন্যদের নিয়ে কখনোই ভাবতাম না। কে প্রতিযোগী বা কে কী করছে, সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ববিতার সঙ্গে আমার বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ হয়েছে, কবরীর সঙ্গে শুধু ‘অবাক পৃথিবী’ ছবিতে কাজ করেছি, তবে এমন অনেক ছবিও আছে যেখানে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি—ভালো সম্পর্কও ছিল। ববিতা আমেরিকায় আসার পরও আমাকে ফোন করে খোঁজখবর নিত, বলত—‘আপা, কেমন আছেন?’ এমন আন্তরিকতা সবার সঙ্গেই ছিল।’
শাবানা মনে করেন, তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা কেবল পর্দায়ই সীমাবদ্ধ ছিল। ব্যক্তিজীবনে তারা একজন আরেকজনের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক। কোনো অনুষ্ঠান বা আয়োজনে দেখা হলে খোঁজখবর নিতেন, গল্প করতেন।
চলচ্চিত্র থেকে শাবানা নিজেকে সরিয়ে নেন বহু বছর আগে। দুই যুগের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন স্বামী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে। অন্যদিকে ববিতাও অভিনয় থেকে অনেকটাই দূরে, মাঝে মাঝে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া–আসার মধ্যে থাকেন। একমাত্র কবরীই মৃত্যুর আগপর্যন্ত চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন, পরিচালনা ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই গুণী অভিনেত্রী।
মাত্র আট বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে সিনেমায় পথচলা শুরু করা শাবানা ‘চকোরী’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও অভিনয়জগৎকে বিদায় জানিয়ে তিনি চলে যান লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ার বাইরে।