মহান বিজয় দিবসে বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে পুরো দেশ। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে পৌনে ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানান। এরপর জনসাধারণের জন্য সাভারে স্মৃতিসৌধের দ্বার খুলে দেওয়া হয়।
বাঙালির চিরদিনের গৌরব, অসমসাহস, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন যাদের তরে তাদের শ্রদ্ধা জানাতে উপচে পড়া ভিড় ঠেলে নানা বয়সী ও পেশার মানুষের উপস্থিতি মেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সকাল আটটার দিকে কয়েকজন তরুণ, কিশোর ও শিশু হুইলচেয়ারে চেপে স্মৃতিসৌধে আসেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর তাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) থেকে এসেছেন।
তাদের একজন হুসাইন মোহাম্মদ। তেমন কথা বলতে না পারলেও ইশারা ইঙ্গিতে বোঝা গেলো আনন্দ ছুঁয়েছে তার চোখেমুখে। গাল বেয়ে হাসি ঝরে পড়ছে। তার সঙ্গে থাকা সিআরপি'র হাউসমাদার আসমা আক্তার বলেন, ২০-২৫ জনকে নিয়ে এসেছি। এবারই প্রথম নয়। প্রতিবছরই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তারা আসেন। যারা আসেন তারা সবাই বেশ আনন্দ নিয়েই এসেছেন স্মৃতিসৌধে।
দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড ক্ষয় হয়ে এখন আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না শাহানা। তার ভাষ্যে, দেশকে নিয়ে অবশ্যই আমার গর্ববোধ হয়। আমার সোনার বাংলাদেশ। সোনার বাংলাদেশ যত্নে গড়ে উঠুক। দেশে-বিদেশে এক নামে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সবাই এক নামে চিনবে, সেই আশা রাখি সবসসয়ই।
বিজয় দিবসের এই দিনে স্মৃতিসৌধ আশা তারুণ্য বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। উজ্জীবিত করে তাদেরকে। আজকের প্রজন্ম নেতৃত্ব দেবে আগামীকে। এমন কথা হুইলচেয়ারে বসে থাকা সবার মুখে। হুমায়ুন কবির নামে একজন বলেন, আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিনি, কিন্তু গল্প শুনেছি। তবুও ভুলতে পারি না। প্রতিবছরই আমরা এভাবে আসি। বিজয় দিবসের এই সকালে একটাই শপথ নিতে চাই আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিবো।
বয়সে কিশোরী হলেও শরীরের গাঁটে বেধেছে অসুস্থতা। হুইলচেয়ারে এমনই ভাবে আসা এক কিশোরী জানায়, এখানে ফুল দিতে এসেছি। আর তেমন ঘোরাও হয় না। ঘুরতে এসেছি। এসে অনেক ভালো লাগছে।
তাসির উদ্দিন নামে একজন বলেন, আজ আমরা বিজয়ের দিনটাকে উদযাপন করবার জন্য এখানে এসেছি। যাদের জীবনের বিনিময়ে সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। স্মরণ করি। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি। আমি ছয় মাস যাবৎ সিআরপিতে আছি। এখন মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ আছি। আমরা প্রতিবন্ধীরাও দেখিয়ে দিতে চাই, আমরা পড়ে গিয়েছি বলেই হেরে যাইনি। দেখিয়ে দিতে চাই- স্বাধীন দেশের উন্নয়নের জন্য আমরাও কিছু করে যেতে চাই- সেই প্রত্যাশার কথাও জানান।