
বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে নম্বর লিখে দায় এড়িয়েছেন ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীরা। বাড়ি বাড়ি না গিয়ে দায়সারাভাবে তথ্য সংগ্রহ করায় এবারও তালিকার বাইরে থেকে যেতে পারেন নতুন অনেক ভোটার। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের। ফলে ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২৫ সফল হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
একদিকে বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার অভিযোগ অন্যদিকে রাজধানীর অস্থায়ী বাসিন্দাদের হালনাগাদ তালিকায় নাম উঠানোর ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার অজুহাত দেখিয়ে ভোটার করা থেকে বিরত রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়েও কয়েকজন তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা বলছেন, তাদের কোনো টার্গেট নেই। আর বাড়িতে গেলে অনেকেই খারাপ আচরণ করেন। তাই বাড়ি না গিয়ে ব্যক্তিগত সেলফোন নম্বর দিয়েছি; যাতে ভোটার হতে ইচ্ছুকরা যোগাযোগ করে ভোটার হতে পারেন।
অথচ এবার ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার আগে এএমএম নাসির উদ্দিনের কমিশন অনেক বাগাড়ম্বর করেছিলেন। বলেছিলেন, বিগত কমিশনগুলো বাড়ি বাড়ি না গিয়ে হালনাগাদ করেছিল। তাই ভোটারযোগ্য সবাইকে তালিকাভুক্ত করার জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
কমিশনের প্রচার বলতে মসজিদে মসজিদে ইমামরা জুমার দিনে ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচির ইসির সরবরাহ করা তথ্য পড়ে মুসল্লিদের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহকারীরা গেলে তাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। আর সীমিত মাইকিং। কিন্তু মাঠের চিত্র পুরো ভিন্ন বলে জানা গেছে। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি মসজিদে মসজিদে প্রচার ও ইসির ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
অনেক এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীরা গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি যাননি বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকে ক্ষোভ জানিয়েছেন আমার দেশ-এর কাছে। এমন একটি জায়গা আগারগাঁওয়ের মুক্তি হাউজিংয়ে অবস্থিত বেলাতুন্নেসা জামে মসজিদ এলাকা। সেখানের মুসল্লিরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ইমাম ঘোষণা দিয়েছিলেন এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু কোথাও একজন তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গেছেন এমন কোনো খবর আমাদের জানা নেই।
মুক্তি হাউজিং এলাকার বাড়িওয়ালা আতাউর রহমান জানান, দক্ষিণ পীরের বাগেও দুটি বাড়ি রয়েছে তার। সেখানের বাড়িতে যায়নি তথ্য সংগ্রহকারীরা। তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহকারী বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে নম্বর লিখে দায় এড়িয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে। শুক্রবার এলাকার মসজিদে অনেক মুসল্লি বাড়ি বাড়ি না যাওয়া নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।
দক্ষিণ পীরের বাগে ভাড়া থাকেন কিরণ। তিনি বলেন, আমার বড় সন্তান তুষার এবার ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছে। শুক্রবার পর্যন্ত আমার বাসায় কেউ আসেনি। রাজধানীর পল্লবীর মিল্কভিটা এলাকার বাসিন্দা আলম। তিনি আমার দেশকে জানান, তাদের হাউজিংয়ের বাসায় বাসায় তথ্য সংগ্রহকারীরা যাননি। তবে হাউজিংয়ের গেটে টেবিল পেতে নাগরিকদের ভোটার করতে দেখেছি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজাদ বলেন, আমি ঢাকায় অস্থায়ী। তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়িতে যাননি। আবার উল্টো তথ্য সংগ্রহকারী খুঁজে ভোটার ফরম পূরণ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। স্থায়ী ঠিকানা ফরিদপুর হওয়ায় সেখান থেকে জন্মনিবন্ধন ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র এনেছি। কিন্তু তথ্য সংগ্রহকারী বলছেন, ওয়ার্ড কমিশনারের অস্থায়ী প্রত্যয়নপত্র লাগবে। ধানমন্ডির বাসিন্দা শাহাজান মৃধার এক আত্মীয় জানান, তার বাড়িতেও তথ্য সংগ্রহকারী যায়নি।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা হাবিব বলেন, তথ্য সংগ্রহকারী সবাই স্কুলের শিক্ষক। সকালে স্কুলে হাজিরা দিয়ে তারপর তথ্য সংগ্রহের কাজে নামতে হয়। এ কারণে বেশির ভাগ তথ্য সংগ্রহকারীর বাড়ি বাড়ি যাওয়া সম্ভব না। তবে আমি দেখেছি, বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল নম্বর দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।
জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, পরশু দিনও আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সচিব হিসেবে আমার পক্ষে একেবারে মাইক্রো লেভেলে যাওয়া সম্ভব না। আমি রাজধানীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বার্তা দিয়ে দিচ্ছি যাতে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যান।
এর আগে এনআইডির ডিজি এএসএম হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। আর গত ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭ লাখের বেশি নতুন ভোটার ফরম পূরণ করেছেন। গত ২০ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল তথ্য সংগ্রহ। চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ছবি তুলে ভোটার হবেন ফরম পূরণকারীরা।
তবে রাজধানীর ৬০ ফিট এলাকার লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও ভোটার তথ্য সংগ্রহকারী শফিকুল ইসলাম ইমন আমার দেশকে বলেন, আমি একা না, অনেকেই বাড়ি বাড়ি যাননি। শুধু বিভিন্ন দৃশ্যমান এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা দেয়ালে নম্বর লিখে যোগাযোগ করে ভোটার ফরম পূরণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। শুক্রবার পর্যন্ত ৮০ জন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছি। কোনো টার্গেট দেওয়া হয়নি। বাড়ি কেন যাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ডাকাতের আতঙ্ক রয়েছে। অনেকেই বাড়িতে গেলেই খারাপ আচরণ করেন। বাড়ি বাড়িতে না গিয়ে আপনার এলাকার সবাইকে ফরম পূরণের আওতায় আনতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, জি।