ইসরাইলে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নতুন এক পর্বে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ইরানের চালানো ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত হামলায় দামেস্কের ঘটনার বিপরীতে কতজনের মৃত্যু হলো তার চেয়ে বড় বিবেচ্য হলো তেহরান সফলভাবে তেলআবিবের সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোতে আঘাত করতে পেরেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, এই প্রথম ইরান তার ভূখণ্ড থেকে সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করেছে এবং দু’টি দেশের মধ্যে এটি সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। সংবাদপত্রটি সতর্ক করেছে যে, এই হামলার ফলে ইসরাইলি প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।
অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম রাইসি বলেছেন, তার দেশ দায়িত্বশীল ও আনুপাতিক পদক্ষেপে কিছু ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেই এবং আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক অভিযানে অংশ নেবে না। তবে হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের এই হুমকির মুখে তার প্রতিরক্ষাকে সমর্থন করবে।
এ ঘটনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইসরাইলে ইরানি হামলার ঘটনা দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করেছে। প্রথমত, এখন সবাই দেখছে যে ‘ইসরাইল আক্রমণ অযোগ্য নয়’। আরো বড় কথা হলো, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্র ইসরাইলে হামলা চালাল। প্রচলিত যুদ্ধ যুগের অবসানের সাথে সাথে এটি সম্ভব হলো। আর এই প্রযুক্তি এখন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের একচেটিয়া নয়। দ্বিতীয়ত, ইরানের এই আক্রমণ কেন কখন কিভাবে করবে তা গোপন ছিল না। এ থেকে মনে করা যায়, ইরান ইসরাইলে ধ্বংসাত্মক কিছু করার চেয়ে সক্ষমতার ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিল।
ইরানের প্রতি ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তেলআবিব ইরানের ‘পারমাণবিক’ স্থাপনায় কিছু করতে চাইলে এর পাল্টা পদক্ষেপও আসতে পারে। পরমাণু শক্তি অর্জনে তেহরান চূড়ান্ত সক্ষমতায় পৌঁছেছে বলে মনে হয়। আর ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কেও ইরানের ধারণা থাকতে পারে। ফলে এ ধরনের কোনো সঙ্ঘাত হলে সেটি বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ কিছু হতে পারে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের মাটি থেকে ইসরাইলের ওপর হামলা চালানোর এমন একটি দৃশ্য বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য সঙ্ঘাতের শুরু থেকে এড়াতে চেয়েছিলেন।
ইরানের হামলার পরপরই, আমেরিকান কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা অজানা ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে। ইসরাইলের প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা তৈরি হওয়ার সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা মাথায় রেখে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের ইসরাইলীয় প্রতিপক্ষদের পরামর্শ দেয়া চালিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনায় ঢাকনা দেয়া এবং পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর পথ বন্ধ করার একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন বাইডেন।
ইসরাইল বলেছে, তারা ইরানের আক্রমণের জবাব দেবে, তবে সেই প্রতিক্রিয়ার ধরন এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। নেতানিয়াহু গ্যালান্ট বা গ্যান্টজের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ এখনো শেষ হয়নি। রোববার ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার বৈঠকে শীর্ষ তিন নেতাকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কোরের কমান্ডার হোসেইন সালামি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, ইসরাইল যদি প্রতিশোধ নেয়ার নামে একটি ‘নতুন সমীকরণ’ তৈরি করতে চায় তাহলে তেহরান সরাসরি এর জবাব দেবে।
নির্বাচনী বছরের সঙ্কট
বাইডেন একটি নির্বাচনী বছরের ভরা রাজনীতির মধ্যে কাজ করছেন। ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের বিস্ফোরণ বাইডেনকে তার নিজ দেশে আঘাত করেছে। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান অস্বীকার করায় তার সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।
শনিবার বিকেলে ডেলাওয়্যারের সৈকত বাড়ি থেকে বাইডেনের জরুরি ভাবে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার কারণ ছিল ইরানের আক্রমণ। তার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শনিবার ইসরাইলের ওপর ইরানের হামলাকে দামেস্কে ইসরাইলের হামলার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দেখেছেন, যা প্রতিশোধের প্ররোচনা দিয়েছে।
ইরান আক্রমণ শুরু করার কয়েক ঘণ্টা আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসরাইলে তাদের সমকক্ষদের সাথে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শনিবার মার্কিন সামরিক বাহিনী কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে বাধা দিয়েছে। এতে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় নিবেদিত’ বাইডেনের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের সমর্থন কিছুটা বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে অনেকে সেটির অবনতির আশঙ্কা করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ কেউ চায় না তবে-
ইরানের একশোরও বেশি ড্রোনের সাথে একত্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ এই অঞ্চলে বিস্তৃত যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি করলেও এখানকার বেশির ভাগ কুশীলব- যুক্তরাষ্ট্র, আরব রাষ্ট্র, এমনকি হিজবুল্লাহ- গত ছয় মাসে তা এড়াতে চেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা গাজার যুদ্ধের সম্প্রসারণ নয়; এটা তার অনিবার্য প্রতিফলন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ছয়জন আইআরজিসি অফিসারকে ইসরাইলের হত্যার প্রতি ইরানের এই প্রতিক্রিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বমুখিতাকে কেবল আরেকটু উপরে নিয়ে গেছে।
ইউএস ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের নিকটপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক উপ-জাতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও আটলান্টিক কাউন্সিলের মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক জোনাথন প্যানিকফ মনে করেন, এটি স্পষ্ট যে শনিবারের ঘটনা একটি নতুন যুগের সূচনা, যেখানে ইরান ইসরাইলি আক্রমণের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েছে।
২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে সমন্বয়কারী ব্রেট ম্যাকগার্কের জন্য মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার প্রতিরক্ষা ও রাজনৈতিক-সামরিক নীতির পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী ড্যানিয়েল ই. মাউটন মনে করেন, পরবর্তী পরিস্থিতি কোথায় যাবে তা নির্ভর করবে আজকের ইরানি আক্রমণের আপেক্ষিক সাফল্যের ওপর। ইরান যদি মনে করে যে, তারা তার স্থাপনার বিরুদ্ধে ইসরাইলি হামলার পর্যাপ্ত জবাব দিয়েছে, তাহলে এই অঞ্চলটি বৃহত্তর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে পিছিয়ে যাবে। তবে, ইরানি আক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত সফল হলে ইসরাইল জবাব দেবে। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়ার চক্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও অন্তর্ভুক্ত করবে এবং সম্ভবত সমগ্র অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার স্পষ্ট করেছেন যে, তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে চান এবং তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরোপ থিয়েটারে ফেরত পাঠাতে চান। ইসরাইল এ সম্পর্কে জানে। ফলে, আজকের আক্রমণ শেষ হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাবিষয়ক সাবেক বিশেষ সহকারী অ্যাম্বাসেডর জিনা অ্যাবারক্রম্বি-উইনস্টানলির মূল্যায়ন হলো, ইরানের এই স্ট্রাইকের ফলাফল দু’টি জয় এবং একটি পরাজয়। দু’টি জয়ের একটি হলো দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন সরাসরি ইসরাইলের দিকে পাঠানোর মাধ্যমে ইরানি সম্মান রক্ষা হয়েছে। ইরানের নেতারা তাদের উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছেন এবং প্রকাশ্যে দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সীমিত মনে হলেও, অসাধারণ প্রতিক্রিয়া ব্যাপক আন্তর্জাতিক অ্যালার্ম সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ভয়ঙ্কর ছিল।
অন্য জয়টি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তিনি তিনটি জিনিস পেয়েছেন যা তার বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল। তিনি গাজা কথোপকথন থেকে পিছিয়ে গেছেন, আর বৈধভাবে যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য কম চাপের আশা করতে পারেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে ইসরাইলের জন্য ‘রক-সলিড সমর্থন’ ফিরিয়ে দিয়েছেন, এমনকি তার নেতৃত্বকেও।
ক্ষতিটা হয়েছে বাইডেনের। তার অবস্থান যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। তার দলকে অবশ্যই ইসরাইলি প্রতিক্রিয়া ধারণ করতে কাজ করতে হবে। এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী বিপদে রয়ে গেছে এবং বৃহত্তর যুদ্ধের সম্ভাবনা এখনো প্রবল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি সরাসরি সঙ্ঘাতের কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে যা এড়াতে বাইডেন (এবং ইরান) কঠোর পরিশ্রম করেছে। তাকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গাজাকে ভুলে যাবে না এবং ইসরাইলের সাথে তার নতুন করে আলিঙ্গনকে স্বাগত জানাবে না। বাইডেন আবারো ইসরাইলের বুদ্ধিমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার লিভারেজ ত্যাগ করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রাম এবং স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের একজন অনাবাসী সিনিয়র ফেলো কারমিল আরবিট মনে করেন, ইসরাইলের মাটিতে ইরানের হামলা দুই দেশের মধ্যে জটিল সম্পর্কের একটি অত্যাশ্চর্য বৃদ্ধি, যা উভয়ের মধ্যে বিরোধকে গোপন থেকে প্রকাশ্যে স্থানান্তরিত করে। এরপর যা ঘটবে তা নির্ভর করবে তিনটি বিষয়ের ওপর। হুথি ও হিজবুল্লাহসহ ইরানের প্রক্সিরা যুদ্ধে যোগ দেবে কিনা; ইসরাইলে হতাহতের ঘটনা ঘটছে কিনা বা এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন সমর্থনের সাথে মিলিত হয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি রোধ করে কিনা; এবং শেষ পর্যন্ত ইসরাইল কিভাবে প্রতিক্রিয়া বেছে নেয় তার দ্বারা।
মধ্যপ্রাচ্যে এর প্রভাব কী?
ইসরাইলের প্রতি বৈশ্বিক সহানুভূতি হ্রাস এবং বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে ইরানের হামলা ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি সকলেই ইসরাইলের জন্য সমর্থন ঘোষণা করেছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিগতভাবে ইসরাইলকে আঞ্চলিক যুদ্ধের সর্পিলতা রোধ করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টায় সংযমের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে উৎসাহিত করতে পারে।
এই প্রসঙ্গে, হোয়াইট হাউজ স্পষ্টভাবে বলেছে যে, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট বাড়াতে চায় না। ইরানের অবস্থান নির্ণায়ক বলে মনে হলেও, প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি নিশ্চিত করেছেন যে তেহরান তার দেশকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এমন কোনো ইসরাইলি দুঃসাহসিক পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেবে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তর থেকে সঙ্ঘাত খুব বেশি দূরে নয়, প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দখলদার সরকার তার সুবিধার্থে ইরানের আক্রমণকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিবৃতি এসেছে, যিনি বলেছিলেন যে ইসরাইলের কাছে একটি কৌশলগত জোট গড়ার সুযোগ রয়েছে যা তিনি বিপজ্জনক ইরানি হুমকি হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও এই প্রসঙ্গে ইসরাইলি যুদ্ধ পরিষদের সদস্য বেনি গ্যান্টজের বক্তব্য রয়েছে, যিনি বলেছিলেন যে, ইসরাইল ইরানের হুমকি মোকাবেলায় একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলবে এবং যেটিকে তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতা ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, ‘পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে’ আশ্বাস দেয় যে অঞ্চলের দেশগুলো ইসরাইলের ওপর ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করতে এবং ‘মধ্যপ্রাচ্য ন্যাটো’ শিরোনামে একটি সাম্প্রতিক বিতর্কিত প্রকল্পের উল্লেখ করে। যদিও সেই প্রকল্পের পরিস্থিতি এখন আর মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে বলে মনে হয় না।
এই প্রসঙ্গে, প্রাক্তন ইরানি কূটনীতিক সাইয়্যেদ হাদি আফাঘি ব্যাখ্যা করেন যে, তেহরান যা করেছে তা ছিল প্রতিরোধ এবং আত্মরক্ষার অধিকারের ভিত্তিতে, জাতিসঙ্ঘের সার্কুলার ৫১ এবং ১৯৬১ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুসারে। কারণ কনস্যুলেট, দূতাবাস এবং কূটনৈতিক মিশনের অনাক্রম্যতা আছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তেহরান এই সঙ্কটের সময় তার প্রতিবেশী সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত এবং অন্য আরব দেশগুলোকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রেখেছিল।
আরবদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক হাসান আল-বারারি বিবেচনা করেছেন যে আরব দেশগুলোর অবস্থান এই সঙ্ঘাতে ‘যেন তারা কিছুই করছে না।’ লুসাইল থেকে আল-আরাবির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, আল-বারারি উল্লেখ করেছেন যে, এমন আরব দেশ রয়েছে যারা ইরানের শক্তি এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক। বিশ্লেষক আল-বারারি জোর দিয়েছিলেন যে, আরব দেশগুলো, বিশেষত যারা ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিকীকরণকে উৎসাহিত করে, তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে দখলদারত্বের সাথে সম্পর্ক ইসরাইলের এই বক্তব্যকে বিশ্বাস করে যে আরবরা ফিলিস্তিনি ইস্যুকে পাত্তা দেয় না এবং ইসরাইল দখল চালিয়ে যেতে পারে। ভূমি ও জনসংখ্যাকে বহিষ্কার করে একই সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক, জোট এবং সামরিক সমন্বয় স্থাপন করতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বসহকারে ভাবতে শুরু করেছে যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমিত করার কোনো উপায় নেই। ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যমেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।
আল-বারারি আরো জোর দেন যে, আরব দেশগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের এই চুক্তিগুলো থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে আনতে হবে এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কাছে একটি স্পষ্ট বার্তাও দেবে যে, তারা তাদের নীতিগুলো চালিয়ে যেতে এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারবে না- যদি তারা ফিলিস্তিনিদের অস্বীকার করে কেবল ইসরাইলের সাথেই জোট করে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন