
মাসুম খলিলী
পাকিস্তানের ২৭টি বিমানের সাথে ভারতের ৭০টি বিমানের দূরবর্তী ডগফাইটে দিল্লি কোনো পাকিস্তানি বিমান বিধ্বস্ত করার বিশ্বাসযোগ্য দাবি উপস্থাপন করতে পারেনি। ড্রোনযুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে ইসরাইলি হারপ ড্রোনের বিপরীতে তুর্কি ড্রোন স্পষ্টত প্রাধান্য বিস্তার করেছে। রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটিতে আঘাতের বিপরীতে ব্রহ্মস মিসাইলের মজুদাগারে আঘাত এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আঘাত ভারতের জন্য বিপর্যয়কর প্রমাণ হয়েছে
কথায় বলে, ‘বিজয়ের হাজার পিতা আছে, কিন্তু পরাজয় বরাবরই এতিম। কেউ তাকে নিতে চায় না।’ ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাতের পর দুই দেশের দাবি পাল্টা দাবিতে পরিস্থিতি সে রকমই মনে হতে পারে। তবে একপর্যায়ে দু’টি দেশই উপলব্ধি করে যে, সঙ্ঘাত প্রলম্বিত হলে তা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেবে আর তা দুই দেশেরই ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত সঙ্ঘাতের পর উভয়পক্ষই জোরেশোরে সাফল্যের দাবি করছে। তবে এর মধ্যে যুদ্ধের প্রোপাগান্ডার আবহ শেষ হয়ে বাস্তব কিছু মূল্যায়ন সামনে আসতে শুরু করেছে। সেসব মূল্যায়নে উভয় পক্ষকেই সমান সফল বলা যাচ্ছে না।
মার্কিন-মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট পরে, ভারতের উন্মত্ত টেলিভিশন সংবাদ চ্যানেলগুলোর পর্দায় ‘পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ’ শিরোনামটি ছড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানে বিজয় মিছিল করে যুদ্ধজয়ের উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ হতে থাকে। রাজধানীতে সড়কে সমবেত জনতার উদ্দেশে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমাদের সাহসী সেনাবাহিনী অসাধারণ বিজয় অর্জন’ করেছে। এ বিজয় ‘সামরিক ইতিহাসে’ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শরিফ বলেন, যুদ্ধ শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বিমানগুলো ভারতের বন্দুকগুলোকে এমনভাবে নীরব করে দিয়েছে যা ইতিহাস শিগগিরই ভুলবে না।
পাকিস্তান বলেছে, তাদের পাইলটরা আকাশযুদ্ধে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি উন্নত ফরাসি-নির্মিত রাফায়েলও রয়েছে; এটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য এক ভয়ানক অপমানজনক ঘটনা। সিএনএন রিপোর্ট করে, পাকিস্তান যখন জেটগুলো গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করে, ঠিক তখন পাকিস্তান সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যে দু’টি বিমান বিধ্বস্ত হয়। একটি ফরাসি গোয়েন্দা সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, পাকিস্তান কমপক্ষে একটি ভারতীয় রাফায়েল ভূপাতিত করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত একটি বিমানের ক্ষতি স্বীকার করতেও অস্বীকার করছে।
ইতোমধ্যে, ভারত নতুন স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে বিশাল ভারতীয় বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একাধিক পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটির বিমান স্ট্রিপ এবং রাডার স্টেশনের গুরুতর ক্ষতি দেখানো হয়েছে। অন্য কথায়, ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা তাদের ইচ্ছামতো এটি ঘুরিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু এই সঙ্ঘাতে কোনো স্পষ্ট বিজয়ী নেই।
অপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রায় অপ্রত্যাশিতভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন, যা স্পষ্টতই মার্কিন মধ্যস্থতার কৃতিত্ব নেয়ার বিষয়। সপ্তাহান্তে দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে, সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার হুমকি তৈরি করছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উভয়পক্ষের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের ফোন করে তাদের থামতে অনুরোধ করেন।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভারতীয় নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছেন। তারা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হয়েছে। কারণ ভারতীয় কর্মকর্তারা সম্ভবত এটি স্বীকার করতে ইতস্তত করেন যে, তাদের ওপর যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এতে মধ্যস্থতা করেছে।
অমীমাংসিত কাশ্মির ইস্যুতে বিদেশী মধ্যস্থতা মেনে নিতে ভারতের দীর্ঘদিনের অনীহার নীতি রয়েছে। এ ব্যাপারে তারা সিমলা চুক্তিতে একটি অনুচ্ছেদও যুক্ত করে। পাকিস্তান কাশ্মির ইস্যুকে অনিষ্পন্ন হিসাবে তুলে ধরতে চায় আর ভারত মনে করে যে এটি নিষ্পন্ন হয়ে গেছে। এ কারণে এর আগে ট্রাম্প কাশ্মির ইস্যুতে মধ্যস্থতা করতে চাইলেও রাজি হয়নি নয়াদিল্লি। আর এ কারণে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও হতে পারে যে মার্কিন-মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কেবল একটি দ্রুত সমাধান, যা কাশ্মির নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলমান বিরোধের মূল অভিযোগগুলো দূর করার সম্ভাবনা কম।
এবারের সঙ্ঘাত
২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সশস্ত্র সঙ্ঘাত যা ৭ মে ২০২৫ তারিখে শুরু হয়। ভারত অপারেশন সিন্দুর নাম দিয়ে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত বলেছে যে, এই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মিরের পহেলগামে জঙ্গি আক্রমণের প্রতিশোধ। পহেলগামে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এই হামলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ করে। এ অভিযোগ পাকিস্তান সব সময়ই অস্বীকার করে।
ভারতের মতে, অপারেশন সিন্দুরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার শিবির এবং অবকাঠামোগুলো। পাকিস্তানি কোনো বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়নি। পাকিস্তানের মতে, ভারতীয় হামলায় মসজিদসহ বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করা হয়েছিল, যাতে শিশুসহ ৩৬ জন পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এই হামলার পর, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ এবং ড্রোনযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ১০ মে, পাকিস্তান প্রতিশোধ হিসেবে অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস নামে অভিযান শুরু করে বেশ কয়েকটি ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে। ভারতও পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণের পরিধি বাড়ায়। এই সংঘর্ষ দু’টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে প্রথম ড্রোনযুদ্ধের সূচনা করে।
তিন দিনের সংঘর্ষের পর, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা ঘোষণা করে, যা ১০ মে বিকেল ৫টা থেকে কার্যকর হবে এবং ১২ মে আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করা হবে। সময়সীমার পর, উভয় দেশ একে অপরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করলেও যুদ্ধবিরতি মোটাদাগে কার্যকর রয়েছে।
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩১ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, হামলায় মুজাফ্ফরাবাদে একটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিবিসি নিউজ একটি স্থানীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে; যেখানে বলা হয়েছে, মুরিদকেতে একটি শিক্ষা কমপ্লেক্সে আঘাত হানা হয়েছে যার মধ্যে স্কুল, কলেজ এবং মেডিক্যাল ক্লিনিক রয়েছে। মিডল ইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এমইএমআরআই) স্কাই নিউজকে জানিয়েছে, মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দফতর সম্পর্কে বহু দশক ধরেই জানা ছিল। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এটিকে মিডিয়া প্রতারণা বলে নাকচ করেন। একইভাবে, আলজাজিরা বলেছে, এই স্থানটি ভারতের দ্বারা আক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লস্কর-ই-তৈয়বার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাইদ।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মতে, ভারতীয় কামানের গোলাবর্ষণে মোট মৃতের সংখ্যা ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, ৬ থেকে ৯ মে পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি কামানের গোলায় ভারত শাসিত কাশ্মিরে চার শিশুসহ ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও ৪৩ জন আহত হয়েছে। হতাহতের ঘটনা এবং বেশির ভাগ আহতের ঘটনা ঘটেছে পুঞ্চ জেলায় যেখানে ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে যে, হামলায় একটি গুরুদ্বার, একটি স্কুল এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাগুলিতে একজন ভারতীয় সৈন্যও নিহত হয়েছেন।
৭ মে, ভারতীয় ও পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করে। পাকিস্তানের মতে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর তিনটি অ্যাসল্ট রাফায়েল, একটি মিগ-২৯ এবং একটি সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। সত্য হলে এটিই হবে প্রথম ঘটনা যখন একটি ফরাসি নির্মিত অ্যাসল্ট রাফায়েল যুদ্ধে হারিয়ে গেছে, যা চীনের তৈরি চেঙ্গু জে-১০ দিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছিল। যুদ্ধে চীনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতার সাথে সাথে এটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফরাসি সংবাদপত্র লা মন্ডে অনুসারে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযান ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের মতে, পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের পাঠানো ইসরাইলের তৈরি ৭৭টি হারোপ ড্রোন ধ্বংস করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, পাকিস্তানের বিমানগুলোকে ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছিল এবং তাদের ‘কয়েকটি’ যুদ্ধবিমান আটকানো হয়েছে এবং ধ্বংসাবশেষগুলো ভারতীয় সীমান্তের বাইরে ছিল। তবে এর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
সঙ্ঘাতের মূল্যায়ন
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করা পশ্চিমা কূটনীতিক, প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, ভারত এই সাম্প্রতিক সঙ্ঘাত থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং সম্ভবত পাকিস্তানের সাথে প্রতিরোধের কিছু নতুন স্তর প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু যুদ্ধ যেভাবে শুরু হয়েছে তাতে অপারেশনাল বা কৌশলগত স্তরে ভারতের উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।
বুধবার বিমান হামলার প্রথম রাউন্ডে, ভারত কয়েক দশকের তুলনায় শত্রু ভূখণ্ডের গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল এবং সর্বোপরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্কিত সুযোগ-সুবিধার বেশ কাছে আঘাত করেছিল যেটাকে তারা বিজয় বলে দাবি করছে। কিন্তু পাল্টা আঘাত তারা ঠেকাতে পারেনি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানি আকাশসীমা ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল এবং সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। ভারতে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কমপক্ষে ২৫টি বিমানবন্দর ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনী শ্রীনগর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বেসামরিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
জম্মু ও কাশ্মিরের যেসব অঞ্চলে পাকিস্তান আঘাত হেনেছে তার মধ্যে রয়েছে জম্মু, পুঞ্চ, উরি এবং বারামুল্লা। রাজস্থানে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু অঞ্চলগুলোর মধ্যে পোখরান, জয়সলমের, বারমের ও বিকান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চুক্তির পর
১০ মে ২০২৫ তারিখে, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, উভয় সেনাবাহিনী পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং বিকেল ৫টায় শত্রুতা শেষ হবে। দার বলেন যে, ৩৬টি দেশ যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে সাহায্য করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার, যুক্তরাজ্য, জাতিসঙ্ঘ এবং চীনের প্রতিনিধিদের সাথে যুদ্ধবিরতি সহজতর করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাগ্রে ভূমিকা’ পালন করেছেন। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসকে বলেন, যুদ্ধবিরতি দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করা হয়েছিল। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেছেন যে, উভয় দেশ ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে’ আলোচনা করবে এবং তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উভয়পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ করেছেন। চুক্তির পর, পাকিস্তান বাণিজ্যিক বিমানের জন্য তার আকাশসীমা আবার খুলে দেয়। দুই দেশের মধ্যে সামরিক হটলাইন সক্রিয় করা হয়।
কেন প্রস্তাবে সম্মত হয় ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ দেশে জনপ্রিয়তা কমার কারণে একটি জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা দিয়ে সেটি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন ছিল। এর আগে একটি নির্বাচনের আগে তিনি সফলতার সাথে এটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেবার পাকিস্তান সীমিত মাত্রায় পাল্টা জবাব দেয়। এবার হামলার এক দিনেই ভারতের রাফায়েলসহ পাঁচটি বিমান ধ্বংসের দাবি ভারতকে ডিফেন্সিভ হতে বাধ্য করে। এবার ভারত নিজ সীমান্তের ভেতরে থেকে বিমান থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। আর পাকিস্তান তার চেয়েও বেশি দূর থেকে ভারতের আক্রমণকারী ফাইটারকে আঘাত করে বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়।
পাকিস্তানের ২৭টি বিমানের সাথে ভারতের ৭০টি বিমানের দূরবর্তী ডগফাইটে দিল্লি কোন পাকিস্তানি বিমান বিধ্বস্ত করার বিশ্বাসযোগ্য দাবি উপস্থাপন করতে পারেনি। ড্রোনযুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে ইসরাইলি হারপ ড্রোনের বিপরীতে তুর্কি ড্রোন স্পষ্টত প্রাধান্য বিস্তার করেছে। রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটিতে আঘাতের বিপরীতে ব্রহ্মস মিসাইলের মজুদাগারে আঘাত এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আঘাত ভারতের জন্য বিপর্যয়কর প্রমাণ হয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক যে গোয়েন্দা তথ্য মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোদির সাথে শেয়ার করার পর ভারত ভয় পেয়ে যায় সেটি হলো, সঙ্ঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধের পর্যায়ে বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে চীন এর সাথে জড়িয়ে যাবে। আর অরুণাচল গালওয়ান ও লাদাখ তিন দিক থেকে চীনা বাহিনী আঘাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিএনএনের ইঙ্গিত অনুসারে, এটি ঘটলে ভারতকে বিপুল ভূমি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া কোনো পক্ষ থেকেই সেরকম সহায়তার আশ্বাস দিল্লির কাছে ছিল না। এ ধরনের একটি বিপর্যয় ভারত এবং নরেন্দ্র মোদিকে মারাত্মক অবস্থায় ফেলে দিতে পারত।
এবার ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটা হাজির হয়েছে সেটি হলো, বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজের স্বার্থে সবার সাথে চালাকিপূর্ণ সম্পর্ক সবারই আস্থা নষ্ট করে, বিপদের দিনে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। এবার যুদ্ধে ইসরাইল ছাড়া আর কোনো বৈশ্বিক শক্তি সেভাবে দিল্লির পাশে ছিল না; না যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বাস্তবতা ছিল এর বিপরীত।