
আফগানিস্তানে আমেরিকার সেই সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু দেশটিকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো কৌশলগত বন্ধুদের সাথে কাজ করেও নিজের স্বার্থ নিশ্চিত করা। এটি অনেকটাই নির্ভর করে দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় স্বার্থে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের সক্ষমতার ওপর।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মানচিত্র পরিবর্তনের একটি বিষয় সাম্প্রতিক আলোচনায় বিশেষভাবে স্থান লাভ করেছে। বেশ আগে থেকেই বিশেষত আমেরিকান কংগ্রেসে বার্মা আইন পাস এবং মিয়ানমারে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর বিষয়টি বেশ গুরুত্ব লাভ করে। প্রতিবেশী রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি কর্তৃত্ব নেওয়ার পর বাইরের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখাইনে একটি মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয় জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং আঞ্চলিকভাবে।
এই বিতর্কের মধ্যে সেনা নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, মানবিক করিডোরের নামে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মিয়ানমারের সাথে কোনো প্রক্সি যুদ্ধে বাংলাদেশ জড়াবে না। এটা নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা নিছকই অপতথ্য ও গুজব। তিনি এও বলেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশটিতে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক, এমন কিছুই বাংলাদেশ করবে না। এ ব্যাপারে মিয়ানমারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
মানবিক করিডোর নিয়ে বিতর্ক
‘মানবিক করিডোর’-এর বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও এসেছে। তবে সেটি আসে অবরুদ্ধ রাখাইনে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য। এর সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতেরেসকে পাশে নিয়ে গত রমজানে প্রফেসর ইউনূস রোহিঙ্গাদের পরের ঈদ রাখাইনে করার যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতে এর সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টির সম্পর্ক অস্পষ্ট থাকে না। আর এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের মূল কারণই হলো রাখাইনে সামরিক অভিযানের সাথে এই করিডোরের কোনো সম্পর্ক থাকবে কি না। প্রফেসর শহীদুজ্জামানসহ অনেক বিশ্লেষকই তেমনটি ধারণা করেন।
‘মানবিক করিডোর’ ইস্যুতে সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘এটি কোনো করিডোর নয়। আমরা শুধু মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে একটি ‘চ্যানেল’ গঠন নিয়ে আলোচনা করেছি। করিডোর আর চ্যানেল এক বিষয় নয়। মানবিক চ্যানেল বাস্তবায়িত হলে তা জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং শুধু ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা পৌঁছাতে ব্যবহৃত হবে। আর রাখাইনে কোনো ধরনের মানবিক তৎপরতা পরিচালনার জন্য উভয়পক্ষের সম্মতি আবশ্যক। আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে কিভাবে যুদ্ধবিরতি হবে, যখন তাতমাদাও (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) এখনো বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’
ড. খলিল বলেছেন, বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা করেছে। তারা বলেছে, যদি আরাকান আর্মি স্থল অভিযান বন্ধ করে, তবে তারা বিমান হামলা চালাবে না। এরপর রাখাইনে সংঘর্ষ হয়নি, বিমান হামলাও হয়নি। যুদ্ধে একটি বিরতি এসেছে, এটাই এ পর্যন্ত অর্জন। যুদ্ধে চলমান বিরতি স্থায়ী হলে শান্তি ও প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনার পথ তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধ না থাকাটা শান্তির সূচনা হতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে।
তবে রাখাইনের বর্তমান প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি না হলে সেখানে টেকসই শান্তি আনা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করে ড. খলিল বলেন, অতীতে কূটনীতি ও সামরিক চাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করা হয়েছে। এখন একটি টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের ফেরা সহজ হবে না, তবে তারা ফিরবে।
একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা ফিরে যাবে। মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, দেশটির অভ্যন্তরে বিভক্তি, বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তার অব্যাহত অনুপস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে না। তার মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দু’টি দিক রয়েছে। একটি হলো অধিকার, অন্যটি নিরাপত্তা। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারে অবশ্যই বাস্তব পরিবর্তন আসতে হবে। সেই পরিবর্তন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে। যদিও এটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ঐক্যবদ্ধ না হলে এটা সম্ভব হবে না। অন্যান্য বৈশ্বিক সঙ্ঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর থেকে যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ সরে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
রাখাইনের মানবিক করিডোর ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান আমেরিকার সাহায্য নিয়ে আরাকান রাজ্যকে স্বাধীন করার ব্যাপারে বাংলাদেশের সামরিক উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। মিয়ানমারের জন্য করিডোর সৃষ্টি করা, সরবরাহ পৌঁছে দেয়া, এগুলো নতুন প্রস্তাবে মুখ্য ধারণা নাও হতে পারে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরী ড. শাহীদুজ্জামানের সাথে একমত নন। তিনি মনে করেন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেই সাথে চীনের মতো অংশীদারদের মনোভাবও বিবেচনায় রাখতে হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সম্পর্ককে বিস্তৃত করতে হবে।
সামরিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে নানা মতে বিভক্ত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের ধারণা করিডোর বিষয়ে যদি ভালোভাবে সিদ্ধান্ত না নিই তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ব। তাই জাতিসঙ্ঘ ও চীনের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক অনুঘটকদের এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় মানবিক চ্যানেল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বার্মা আইন পাস হওয়ার কারণে ঘুরেফিরে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডার বিষয়টি চলে আসছে। বার্মা আইনে দেশটি মিয়ানমার ও এর আশপাশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলারের বিপুল বাজেট করেছে। এ রকম একটি ধারণা রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এই বিভক্তির অর্থ হবে এই অঞ্চলে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে পড়া। চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের যে স্বার্থদ্বন্দ্ব এই অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে তাতে মিয়ানমার ভেঙে গেলে এর প্রভাব অনিবার্যভাবে আশপাশে পড়তে পারে। মিয়ানমারের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর পাশাপাশি ভারতের মনিপুর মিজোরাম নাগাল্যান্ডে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও মাঝে মধ্যে বিস্ফোরণের অবস্থা দেখা যায়।
রাষ্ট্রকাঠামো ভাঙার বিপদ
মিয়ানমারে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে গেলে তার প্রভাব পুরো অঞ্চলে ছড়াবে। বার্মা অ্যাক্টে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে মিয়ানমারের গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। এটা দু’ভাবে হতে পারে। আরাকান বা কোনো অঞ্চলকে স্বাধীন করে অথবা পুরো মিয়ানমারেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। আরাকান আর্মি বা তার সহযোগী ব্রাদার্স জোট স্বাধীনতার কথা বললেও জান্তাবিরোধী সু চির নেতৃত্বাধীন এনইউজি একটি ফেডারেল মিয়ানমার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে রাজ্যগুলো অনেক বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। এই জায়গাটিতে চীনের সাথে আমেরিকার বোঝাপড়া না হলে বিষয়টি সফল হবে না। এর দু’টি কারণ আছে, মিয়ানমারের পৃষ্ঠপোষক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকারী রাশিয়া ও চায়না দুটোই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। এখনো পর্যন্ত বৈশ্বিক সামরিক তৎপরতায় তাদের যথেষ্ট সক্রিয়তা আছে। তারা এই অঞ্চলে নিজেদের ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করলে পরিস্থিতির ওপর আধিপত্য বিস্তার অসম্ভব কিছু হবে না। সে ক্ষেত্রে সব থেকে সহজ হবে মিয়ানমারে সু চির আমলে যেরকম গণতন্ত্র ছিল, সেরকম না হলেও একটি ফেডারেল কাঠামোর মধ্যে অধিকতর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উল্লেখিত বিষয়টির বাস্তবায়ন। এটি মিয়ানমার এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য অনেক বেশি কল্যাণকর হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক ধরনের প্রক্সি সংঘর্ষ, ভাগ-বিভাজন ছিল। বিশেষ করে সিরিয়া, লিবিয়া, সুদানে এখনো সঙ্ঘাত চলছে। তারা কিন্তু রাষ্ট্রকাঠামোকে ভাঙতে দেয়নি। একবার যদি রাষ্ট্রের কাঠামো ভাঙে, মানচিত্র ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় এটার প্রভাব পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এখন মনে করা যেতে পারে আরাকান অথবা অন্য কোনো রাজ্য স্বাধীন হয়ে গেছে; কিন্তু এটার প্রভাব অবশ্যই প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারতের ওপর পড়বে। এ কারণে আরাকানের স্বাধীনতার চেয়ে বরং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের মানবিক মর্যাদা, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আশার কথা হলো ড. খলিলের বক্তব্যে তেমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জটিলতা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ রয়ে গেছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয়টা এখন মূলত আরএসএস নিয়ন্ত্রণ করে। আরএসএস যেভাবে চায় সেভাবেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটা হয়ে থাকে। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আছে, সামনের মাসে বিহারে নির্বাচন আছে। আরএসএস মনে করে, যত বাংলাদেশবিরোধী, মুসলিমবিরোধী ন্যারেটিভ তারা তৈরি করতে পারবে, ততই তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তারা লাভবান হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও একই ধরনের মনোভাব লক্ষ করা যায়। এই ইস্যুতে দিল্লি ঢাকার পরিবর্তে নেপিডোকে সমর্থন করেছে বেশি।
নানা কারণে ভারতের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান সামনে আরো বাড়তে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, ভারত পানি ও নদী নিয়ে বড় ধরনের দ্বন্দ্বে জড়াতে পারে। সিন্ধু নদীর উৎস নদী চিনাব নদীর পাকিস্তানমুখী প্রবাহ ভারত এর মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে। পানি নিয়ে ভারত সিন্ধু নদী নিয়ে যা করছে সেটি সম্ভবত বাংলাদেশের সাথেও তারা করতে পারবে গঙ্গা নদীর পানিচুক্তি নিয়ে। এটি ২০২৬ সালে শেষ হবে এবং সম্ভবত তারা এটি আর নবায়ন করবে না। পানি ও নদী দিয়ে বাংলাদেশকে দিল্লি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের এই নতুন রসায়নে বাংলাদেশ কিভাবে ক্ষতি এড়াবে সেটি নির্ভর করতে পারে দু’টি বিষয়ের ওপর। একটি হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক, আরেকটি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক। বাংলাদেশ কত স্মার্টলি জাতীয় স্বার্থে এই দুটো সম্পর্ককে ব্যবহার করতে পারবে সেটির উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে।
বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার ইস্যু ডিল করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাস্তবতাকে সামনে রাখতে হবে। প্রথমত, রোহিঙ্গাদের বারবার বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার ক্ষেত্রে নেপিডো বেইজিংয়ের সমর্থন পেয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণে ভূখণ্ডগত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হওয়ার কারণে চীন এখন সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে তার স্বার্থের সুরক্ষার জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই তার সীমান্ত এলাকায় পশ্চিমের প্রভাবাধীন আরেকটি রাষ্ট্র গঠন কাম্য মনে করবে না। এক্ষেত্রে চীনানীতির পাশে মস্কোকে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জবরদস্তি কোনো রাষ্ট্র তৈরি করতে চাইলে এই অঞ্চলে বড় ধরনের সঙ্ঘাত অনিবার্য হতে পারে।
আবার রোহিঙ্গাদের যে ইস্যুতে চীন ও ভারত মিয়ানমারের পক্ষে ছিল সে ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে গেছে। এ অবস্থায় জাতিসঙ্ঘের প্রকাশ্য প্রস্তাব অথবা পশ্চিমাদের নেপথ্য কোনো পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশ নিজেদের কতটা দূরে রাখতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর এক্ষেত্রে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যে ভারসাম্যের কথা বলা হচ্ছে তা করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমনটি আফগানিস্তানে আমেরিকার নেত্বত্বাধীন ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ সময় পাকিস্তান পারেনি।
আফগানিস্তানে আমেরিকার সেই সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু দেশটিকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো কৌশলগত বন্ধুদের সাথে কাজ করেও নিজের স্বার্থ নিশ্চিত করা। এটি অনেকটাই নির্ভর করে দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় স্বার্থে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের সক্ষমতার ওপর।