
পহেলগাম উত্তেজনা কি দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে চতুর্থবারের মতো যুদ্ধে জড়াবে? এর আগে তিনবার যুদ্ধের সময় দুই দেশ পরমাণু শক্তিধর ছিল না। তখন বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান শক্তিও আজকের পর্যায়ে ছিল না। ফলে এই মুহূর্তে দেশ দু’টি যুদ্ধে জড়াবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনামটিকে বাস্তবতার কাছাকাছি বলে মনে হয়। পত্রিকাটির ২৭ এপ্রিল সংখ্যায় এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে আঘাত করার জন্য ভারত তার মামলা সাজাচ্ছে। তার মানে ভারত এখন এমন এক বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে যার ওপর ভিত্তি করে একসময় আঘাত করে বসতে পারে পাকিস্তানকে। এই সময়ে ভাবনাটি দুই কারণে বেশ প্রবলভাবে সত্য বলে মনে হতে পারে। প্রথমত, বেলুচিস্তান ও খাইবারপাখতুনখাওয়া অঞ্চলে পাকিস্তানবিরোধী প্রক্সি বাহিনীকে বাইরে থেকে প্রবলভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। ইসলামাবাদ মনে করে ভারতই এ কাজ করছে। অন্য দিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদিকে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তানের সাথে বড় মাত্রার সঙ্ঘাত তৈরি করতে হবে। যাতে মোদির জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং ওয়াকফ সম্পদ ইস্যুতে বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এই ডামাডোলে অর্জন করা সম্ভব হয়।
আন্তর্জাতিক সাড়া
বিশ্ব শক্তিগুলো একাধিক সঙ্কটের মুখোমুখি থাকায় কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি কম মনোযোগ পাচ্ছে আর পারমাণবিক অস্ত্রধর প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে কম সাহায্য করছে। গত সপ্তাহে কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
পরিস্থিতি কতটা অস্থিতিশীল তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় সীমান্তে উভয়পক্ষের নিরাপত্তাবাহিনীর গোলাবিনিময়ের ঘটনায়। কাশ্মিরে, ভারতীয় বাহিনীও ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করেছে, শত শত লোককে গ্রেফতার করেছে, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
এর আগে, ভারত পাকিস্তানে পানির প্রবাহ ব্যাহত করার জন্য ষাটের দশকে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে স্বাক্ষর হওয়া সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের হাইকমিশনের কিছু স্টাফ এবং ভারত সফররত পাকিস্তানিকে বের করে দেয়। তার পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান, শিমলা চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে, যা দু’দেশের মধ্যে ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’কে প্রভাবিত করতে পারে। কাশ্মির ইস্যু নিয়ে প্রচারণায় ভারতে মুসলিমবিদ্বেষও তীব্র হচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। ইরান ও সৌদি আরব সরকার দু’পক্ষের সাথে কথা বলেছে এবং জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলো স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে জোরালো সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের বন্ধুত্বপ্রতিম। ওয়াশিংটন বর্তমান সংঘর্ষে কতটা জড়িত হবে সে বিষয়ে সংশয়ের আরেকটি কারণ, মেয়াদের তিন মাস পার হয়ে গেলেও ট্রাম্প এখনো ভারতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেননি, যা তার অগ্রাধিকারের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার স্থান পেছনে থাকার লক্ষণ।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েল মার্কি বলেছেন, ওয়াশিংটনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি ২০১৯ সালে কাশ্মির নিয়ে শেষ বড় ফ্লেয়ার-আপের সাথে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে মোকাবেলা করেছিল তার অনুরূপ।
সে সময়, হোয়াইট হাউজ ভারতকে সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। ভারত পাকিস্তানের ওপর আন্তঃসীমান্ত বিমান হামলা চালিয়ে প্রত্যাঘাতের মুখে পড়লে ট্রাম্প প্রশাসন সংযমের জন্য ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ায়। সে সময় আঘাতের ক্ষতি বিতর্কিত ছিল। পরে, পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে গেলে, এটি একটি ডগফাইটে পরিণত হয় এবং একটি ভারতীয় জেটকে পাকিস্তান গুলি করে ভূপাতিত করে। এর পাইলটকে বন্দী করা হয়। মি. মার্কির মতে, সেই অস্পষ্ট প্রতিক্রিয়ার জন্য, এবারের লক্ষণগুলো ইঙ্গিত করে যে, ভারত ‘দর্শনীয় কিছু’ করতে চাইছে। তবে পাকিস্তান যেকোনো আঘাতের জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পানিচুক্তি স্থগিত ও মোদির ক্ষমতার সমীকরণ
ভারত পহেলগামের ঘটনার পর পরই সিন্ধুর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের প্রাক্তন হাইকমিশনার আবদুল বাসিত, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ভারতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নয়াদিল্লির এই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে প্রত্যাহারের কোনো আইনি অধিকার নেই। বাসিত এই পদক্ষেপকে আইনগতভাবে অকার্যকর এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সতর্ক করে দেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে, চীনের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
তথাকথিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ও বালাকোট বিমান হামলাসহ অতীতের ভারতীয় পদক্ষেপের কথা স্মরণ করে বাসিত পাকিস্তানকে সতর্ক করেন। তিনি পরামর্শ দেন যে, ভারত বেলুচিস্তান এবং আজাদ কাশ্মিরের মতো অঞ্চলে অশান্তি উসকে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে আর সার্বভৌমত্বের যে কোনো লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানকে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
ভারতের সিদ্ধান্তকে ‘কৌশলগত বিচ্যুতি’ বলে অভিহিত করে বাসিত বলেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো অভ্যন্তরীণ অশান্তি থেকে বিভ্রান্ত করা, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের প্রতিবাদ, ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং অধিকৃত কাশ্মিরে রাজ্যের মর্যাদার পুনরুদ্ধারের দাবির মতো বিষয়। বাসিত অবশ্য মনে করেন, পাকিস্তানের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হবে না, কারণ ভারতের কাছে পাকিস্তানের পানি সরানোর জন্য আইনি ভিত্তি এবং অবকাঠামো উভয়েরই অভাব রয়েছে। তিনি মোদির সিন্ধু চুক্তি স্থগিতাদেশের ঘোষণাকে একটি রাজনৈতিক স্টান্ট হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন।
নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় থাকা বা প্রধানমন্ত্রীর পদ নবায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জে রয়েছেন। ৭৫ বছর বয়স হওয়ার পর আরএসএসের নিয়ম অনুসারে মোদির অবসর গ্রহণের কথা। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত নিজেই ৭৫ হওয়ার পর অবসরে যাচ্ছেন। নিতীন গড়গড়ি বা রাজনাথ সিং নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে পারেন। মোদি এই হিসাব পাল্টে দিতে এমন কিছু করতে চাইতে পারেন যাতে তার নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত থেকে যায়। কাশ্মির উত্তেজনার পেছনে অনেকে এই সমীকরণ সক্রিয় বলে মনে করেন।
হামলার পেছনে কারা এবং কেন
দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে পরিচিত একটি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, হতাহতরা পর্যটক নয়, ভারত সরকার কর্তৃক নিয়োজিত বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার ভ্রাম্যমাণ সদস্য। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন যে নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য তা স্পষ্ট।
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী টিআরএফকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি হিসেবে বিবেচনা করে। এটি কয়েক দশক ধরে ভারতীয় শাসন উৎখাত করার জন্য লড়াই করা কাশ্মিরের সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাকামী সংগঠনগুলোর একটি। মোদি সরকার ছয় বছর আগে তার বিতর্কিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত জম্মু ও কাশ্মিরের আধা স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নামিয়ে দেয়। তার পর থেকে, নয়াদিল্লি আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয়দের জন্য জমি এবং সরকারি চাকরি সংরক্ষণের সাংবিধানিক সুরক্ষা বাতিল করেছে। ২০২২ সালে ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট অনুযায়ী, কাশ্মিরি মুসলমানরা এই সংস্কারগুলোকে দেশের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের জনসংখ্যা পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ভারতীয়দের আসা এবং এই অঞ্চলের পরিচয় পরিবর্তন করা নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ এই অঞ্চলে উগ্রবাদ উৎসাহিত করেছে। এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো রাজনৈতিক বিকল্প ছাড়াই বিপর্যস্ত যুবকদের কাছে উগ্রপন্থা আকর্ষণীয় পথ।
নয়াদিল্লি দাবি করে, জম্মু ও কাশ্মিরে ২০১৯ সালের পরিবর্তন শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির যুগের সূচনা করেছে। বাস্তবে কাশ্মিরিরা এটিকে নতুন দিল্লির দ্বারা নিযুক্ত একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নেতৃত্বে নিপীড়ক শাসনের সময় বলে মনে করে। ২০১৯ সালের সংস্কারের পর রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্র্যাকডাউন বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে ৪০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ভিন্নমত বা প্রতিবাদ দমনের জন্য পুলিশ জননিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে, যেখানে জামিনের কোনো বিধান নেই। ভয়ের এই আবহাওয়া শান্তি ও স্বাভাবিকতার একটি বহিরাবরণ গড়ে তুলেছে।
আপাত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই অঞ্চলটিতে পর্যটনের কিছুটা পুনরুত্থান ঘটে। ২০২৪ সালে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী সেখানে যায়। ভারত সরকার একটি স্পষ্ট সঙ্কেত দিতে চেয়েছিল যে তার কঠোর পদক্ষেপ কাশ্মিরের দীর্ঘ সহিংসতার যুগের অবসান ঘটিয়েছে।
নয়াদিল্লির দাবির বিপরীতে, পহেলগামের ঘটনার পর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সহিংসতা এখনো কাশ্মিরে শুধু সক্রিয় নয়, এটি দুই দশকের বিরতির পর ঐতিহ্যগতভাবে আরো শান্ত জম্মুতেও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, জম্মু অঞ্চলে দুই সপ্তাহ ধরে চলা একটি নিরাপত্তা অভিযানের সময় চার নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মী এবং দুই অস্ত্রধারী নিহত হয়। সহিংসতার এই পুনরুজ্জীবন লাদাখ অঞ্চলে চীনা ও ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনারও ফল, যা নয়াদিল্লিকে জম্মু থেকে লাদাখে সৈন্য স্থানান্তরে বাধ্য করেছে। উত্তর কাশ্মিরের গুলমার্গ এবং সোনামার্গের মতো পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলেও, পাকিস্তান এবং চীনের সীমান্তের কাছাকাছি, পহেলগামকে একটি সংবেদনশীল স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে হামলার প্রভাব
শেষবার ভারত-শাসিত কাশ্মিরে একটি বড় সন্ত্রাসী হামলায় ভারত ও পাকিস্তান বিপজ্জনকভাবে যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়। নয়াদিল্লি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সীমান্তের ওপারে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে একটি কথিত জঙ্গি প্রশিক্ষণশিবিরে বোমা হামলা করে। পাকিস্তান ভারতীয় ভূখণ্ডে পাল্টা বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয় এবং পাকিস্তানে ভারতের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর একজন ভারতীয় পাইলটকে আটক করা হয়। তার পর থেকে সম্পর্ক স্থবির হয়ে আছে। কোনো দেশ এখনো অন্যের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেনি এবং উভয়ের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য বা দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা নেই।
পহেলগাম হামলা ভারত-পাকিস্তান এই স্থবির সম্পর্ককে দীর্ঘায়িত করবে। তবে এই মুহূর্তে ভারত সামরিকভাবে প্রতিশোধ নেবে কি না স্পষ্ট নয়। মোদি সরকার এ ব্যাপারে তীব্র চাপে রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি, জম্মু ও কাশ্মিরের ভারতীয় ও পাকিস্তান-শাসিত অংশগুলোর মধ্যে প্রকৃত সীমান্ত, আপাতত বহাল রয়েছে। তবে নয়াদিল্লি নানা হিসাব থেকে আঘাত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বিশেষ করে যদি বাইরের সমর্থনে এটি করতে সাহসী হয়।
অন্য দিকে ইসলামাবাদ ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, হামলা হলে প্রতিশোধ নেয়া হবে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ‘যদি কোনো প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রতি কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে, তাহলে আমাদের সেনাবাহিনী তার জন্য প্রস্তুত। একটি উপযুক্ত এবং তাৎক্ষণিক জবাব দেয়া হবে।’
পাকিস্তান সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিতাদেশকেও অস্বীকার করে বলেছে, ‘‘পানি সরানোর যে কোনো প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং পূর্ণ শক্তিতে প্রতিহত করা হবে।’’ ইসলামাবাদ তার আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধ করেছে এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতের সাথে সব বাণিজ্যও স্থগিত করেছে।
কাশ্মিরে টেকসই শান্তির জন্য করণীয়
২০১৯ সাল থেকে কাশ্মিরে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নীতি সুফল দেয়নি। নয়াদিল্লির সব আশাই এখন নিরাশায় ছেয়েছে। একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে দায়িত্ব দেয়া স্থানীয় জনগণকে সরকার থেকে আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। যদিও ছয় বছরের ব্যবধানে অক্টোবর ২০২৪-এ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু নতুন আঞ্চলিক সরকারের নিরাপত্তাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নেই। বেশির ভাগ কাশ্মিরির দৃষ্টিতে এখানে দুর্বল কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হয়েছে এবং এটি একটি বোধ জাগিয়ে তোলে যে, ভারতীয় রাষ্ট্র স্থানীয় জনগণকে পরাধীন ও অপমানিত করছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতাকে সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের সৃষ্ট একটি নিরাপত্তা সঙ্কট হিসেবে তুলে ধরা ভারতের দিক থেকে রাজনৈতিকভাবে সমীচীন হতে পারে, তবে এতে এই অঞ্চলে টেকসই শান্তি আসার সম্ভাবনা কম। এটি নয়াদিল্লিকে একটি আঁটসাঁট কোণে ঠেলে দেয়, কৌশলের জন্য খুব কম জায়গা তার সামনে থাকে এবং দ্বিপক্ষীয় সশস্ত্র সঙ্ঘাতের দিকে সঙ্কটকে নিয়ে যেতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ মনে করে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ভারতের প্রতি সমর্থন ন্যায্য হলেও, বিদেশী সরকারগুলোর নয়াদিল্লিকে স্পষ্ট করে দেয়া উচিত যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি হিসেবে দু’টি দেশের বাস্তবতা যেকোনো সঙ্ঘাতকে ভয়ঙ্কর করতে পারে। এর পরিবর্তে ভারত পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর সাথে ব্যাক-চ্যানেল আলোচনা শুরু করতে পারে। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় যে আলোচনা হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণের লক্ষ্যে, এবার সেটি সৌদি আরব বা ইরানের মাধ্যমে হতে পারে।
দেশের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে কাশ্মিরিদের মধ্যে যে ব্যাপক ভীতি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত তার সমাধান করা। নির্বাচিত আঞ্চলিক সরকারের মাধ্যমে সবধরনের উদ্বেগ কার্যকরভাবে প্রশমনের জন্য সর্বোত্তম হবে যদি তাকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়। জম্মু ও কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের বৃহত্তম মসজিদ জামিয়া মসজিদে ঈদের নামাজে নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত শাসকদের দেয়া উচিত।