
সৈয়দ আবদাল আহমদ
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডন থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ম্যাডাম জিয়া ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এখন সুস্থবোধ করছেন।
খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং দেশে ফেরার খবর নিঃসন্দেহে আনন্দের। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র গ্রিসে ফিনিক্স পাখির এক কিংবদন্তি আছে। এই ফিনিক্স পাখি শত শত বছর বেঁচে ছিল। তারপর ফিনিক্স পাখিকে ভস্মীভূত করা হয়। কিন্তু ভস্মের মধ্য থেকেই আবার জেগে ওঠে ফিনিক্স পাখি এবং সদর্পে বেঁচে থাকে শত শত বছর।
আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতির ফিনিক্স পাখি বেগম খালেদা জিয়া। তার রাজনীতি শেষ করে দেওয়া যায় না। কঠিন একটা সময় পার করে তার জেলমুক্ত হওয়া, বিদেশে চিকিৎসা করা এবং রাজনৈতিক সমাবেশে আবার বক্তব্য প্রদান আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।
স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট শাসকরা বারবার বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিকে শেষ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তাকে শেষ করে দেওয়া যায়নি। এরশাদের শাসন আমল (১৯৮২-৯০), সেনাসমর্থিত জেনারেল মঈন-মাসুদ চক্রের ১/১১-এর জরুরি সরকারের কারাগারে বন্দি (২০০৭-০৮) এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন ও কারাগারে নিষ্ঠুর বন্দিজীবন মোকাবিলা করে আবার তিনি দেশের মানুষের কাছে ফিরে এসেছেন।
চব্বিশের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দিনই (৫ আগস্ট ২০২৪) বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। এরপর ৬ আগস্ট ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওইদিন হাসপাতালে গিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে মুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে দেশবাসী ও দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। এরপর ৭ আগস্ট ২০২৪ নয়াপল্টনে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে হাসপাতাল থেকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য দেন বেগম খালেদা জিয়া। বক্তৃতায় তিনি ভালোবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ার আহ্বান জানান। বেগম খালেদা জিয়া জুলাই বিপ্লবের গর্বিত ছাত্রদের অভিনন্দন জানান। তিনি গণহত্যায় নিহত ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আহতদের সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্ররা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তাদের সেই স্বপ্নের জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ অবশ্যই আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা দিয়েছিলেন। আদালত থেকে সবগুলো মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেননি শেখ হাসিনা। কিন্তু মহান আল্লাহর কী অশেষ রহমত, মুক্ত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া সেই চিকিৎসারও সুযোগ পেয়েছেন। চিকিৎসার খ্যাতনামা অ্যাডভান্স সেন্টার লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। কাতারের আমির বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ঢাকা থেকে লন্ডনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এর আগে জরুরি সরকারের কারাগার থেকে তিনি ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন। সেই মুক্তির মধ্য দিয়ে সেদিন তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা যেমন ব্যর্থ হয়েছিল, তেমনি ব্যর্থ হয়েছিল জেলে বন্দি করে রাখার অপচেষ্টাও। আইনি প্রক্রিয়ায় সেদিন তিনি মুক্ত হয়েছিলেন।
অভিনন্দন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ আপনার প্রিয় জন্মভূমি। আপনিই শুধু চান না, এদেশের অগণিত জনগণও চায় তাদের মাঝেই আপনি থাকুন। থাকুন এই রূপসী বাংলার শ্যামলিমায়, গণতন্ত্রের পতাকা ধারণ করেই। কারণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আপনার যে ত্যাগ স্বীকার ও লড়াই, সে জন্য জনগণের কাছে ইতোমধ্যে আপনার পরিচিতি ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ হিসেবে।
প্রায় তিন যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আলোকিত করে আছেন খালেদা জিয়া। রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র ঘুরেছেন তিনি। তার দেশপ্রেমের তুলনা নেই। বাংলাদেশকে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। আমার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আমার মা জননী জন্মভূমি। এই দেশ সবদিক থেকে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক মনেপ্রাণে আমি এটাই চাই। আর আমিইবা কেন, নিজের দেশের মঙ্গল কে না চায় বলুন।’ ১/১১-এর জরুরি সরকারের সময় গ্রেপ্তার করে তাকে যখন জেলে নেওয়া হয়, তার ঠিক আগে আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। এই দেশে জন্মেছি, এই দেশেই মরতে চাই।’ জেল থেকে বেরিয়ে আবার তিনি বললেন, গত দেড় বছর আমার দেশ ও আমার জনগণের দুঃখ-কষ্ট আমাকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে। নিশ্চয়ই এই দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। আবার আমরা উঠে দাঁড়াব। ঐক্যবদ্ধভাবেই দেশকে গড়ে তুলব। তিনি জেলজীবনে থাকাকালে তার জন্য মানুষের যে উদ্বেগ এবং সহমর্মিতা দেখেছেন, তার জন্য দেশবাসীকে জানান অসীম কৃতজ্ঞতা।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে হন পার্টির চেয়ারপারসন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন খালেদা জিয়া।
১৯৮৩ সালে তার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। রাজনীতিতে ওই যে এলেন আর তিনি ফিরে তাকাননি পেছনের দিকে। এগিয়েই গেছেন রাজনীতির মহাসড়ক ধরে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিনি যে আন্দোলনের সূচনা করেন, সেই আন্দোলনের বিজয়ই ছিল ওই মহাসড়কের পাশে একটি গন্তব্য।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী শাসন শুরু করেন। এর বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয় তারই নেতৃত্বে। বেগম জিয়া ও চারদলীয় জোটের বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার দেশে দুঃশাসন চালাচ্ছে ও দুর্নীতি করছে, তাই ভোটের মাধ্যমে ওই সরকারকে সরাতে হবে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে তার দল যেমন জনগণের ভোটে বিস্ময়করভাবে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তেমনি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর তার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট নীরব ভোট বিপ্লবে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়।
১৯৮২ সালের পর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সবকটি নির্বাচন থেকে তিনি যখন বিরত ছিলেন, তখন অনেকের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হয়। তার পদক্ষেপ বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয় কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন, যুদ্ধে জয়ী হতে হলে শত্রুর দুর্বল স্থানে আঘাত হানতে হয়। তিনি তা-ই করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়েছেন বৈধতার স্পর্শ পেতে। একবার তা সম্পন্ন হলে তিনি হতে পারতেন ক্ষমতায় স্থায়ী। খালেদা জিয়ার স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এরশাদকে বঞ্চিত করে সে সুযোগ থেকে। ফলে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে আপসহীন নেত্রীর খেতাবটি খালেদা জিয়ার কপালেই জোটে। সেই আন্দোলনে আপসহীন নেত্রীর ভূমিকা সত্যিই ছিল অনন্য। আরেক অগ্নিপরীক্ষায় তিনি সফল হন। তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের পর তার ওপর, তার পরিবারের ওপর, তার দলের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। তাকে বিদেশে নির্বাসনে যেতে এমন চাপ নেই, যা দেওয়া হয়নি। ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে দিনের পর দিন নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। অত্যাচারের স্টিমরোলার চলেছে পুরো জিয়া পরিবারটির ওপর। অভুক্ত থেকেছেন খালেদা জিয়া। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবুও তাকে টলানো যায়নি। অবশেষে ১/১১-এর কারাগারের নিঃসঙ্গ জীবনে নিক্ষিপ্ত করা হয় তাকে। সাব-জেলে তিনি একা থাকতেন। সেখানে নানা চাপের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। একবার বলেছেনও এই কারাগার থেকে মাত্র কয়েক শ গজ দূরেই শহীদ জিয়া শুয়ে আছেন। প্রয়োজনে আমার গন্তব্যও সেখানে হবে। এর চেয়ে তো বেশি কিছু হবে না, তবু দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে আমাকে দিয়ে কিছু করানো যাবে না। অর্থাৎ তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন। মাথা নোয়াননি অন্যায়ের কাছে। ধৈর্যের পরীক্ষায় তিনি তখনো জয়ী হয়েছেন। একইভাবে শেখ হাসিনাও জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল প্রতারণামূলক দুই মামলায় অন্যায় সাজার ব্যবস্থা করে তাকে জেলে বন্দি করে রাখেন। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে জেলমুক্ত হন।
রাজনীতিতে বিনয় আর উদারতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি হয়েছিল। এর প্রতিবাদে ৭ দল ও ১৫ দলের কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুই নেত্রীর নেতৃত্বে শোক মিছিল। কিন্তু শোক মিছিলে সেদিন শেখ হাসিনা আসেননি, বেগম জিয়া ঠিকই এসেছিলেন। তেমনি ১৯৮৬ সালের ২০ মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে ৭ দল ও ১৫ দলের এরশাদবিরোধী কর্মসূচি ছিল দুই নেত্রীর নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম থেকে যৌথ গণমিছিল। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সেই মিছিলেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেগম জিয়া। ১৯৮৬ সালের পাতানো নির্বাচনের পর ৭ দল ও ১৫ দলের ঐক্য ভেঙে যায়। ১৯৮৮ সালে আবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার উদ্যোগ তিনিই নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনাকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে বেগম খালেদা জিয়া ছুটে গিয়েছিলেন ৩২ নম্বরের ধানমন্ডির বাড়িতে। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিয়েতে যোগ দিতে এমপি হোস্টেলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বেগম জিয়া। শেখ হাসিনা তাকে রিসিভ করেননি কিন্তু সেনাকুঞ্জে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বিয়েতে শেখ হাসিনা এলে বেগম জিয়া দুবারই তাকে নিজে গিয়ে স্বাগত জানান এবং একসঙ্গে খাবার খান ও ছেলের বউকে দেখাতে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সমবেদনা জানাতে সুধাসদনে যেতে চেয়েছিলেন বেগম জিয়া কিন্তু তাদের প্রবল আপত্তির মুখে তিনি যেতে পারেননি। ১/১১-এর জরুরি সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর কোর্টে তোলার সময় কোর্ট প্রাঙ্গণে তার যে দুর্ভোগ হয়, পুলিশ তাকে যেভাবে হেস্তনেস্ত করে, বিবৃতি দিয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। তেমনি শেরেবাংলা নগরের সাব-জেলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার চোখের অসুখ বেড়ে গেলে কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে বেগম জিয়া তার বক্তৃতায় তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারকে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। জরুরি শাসনের অবসানের পর অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। এ সময় শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুসংবাদে খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক জানাতে ছুটে যান ধানমন্ডির সুধাসদনে। সেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার চরম প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন ভোগ করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পর তার ভূমিকা কী ছিল, দেশবাসীই তার সাক্ষী। রাজনীতিতে এ ধরনের সংস্কৃতিতেই বিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে খালেদা জিয়া এক অবিস্মরণীয় নাম। এমনিতেই খালেদা জিয়া হয়ে তিনি গড়ে ওঠেননি। স্বামী যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তখন দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি ছিলেন একাত্তরের বন্দিশিবিরে। স্বামী যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখনো তিনি একজন সাধারণ গৃহবধূ হিসেবে আড়ালে থাকতেই ভালোবাসতেন। সেই তাকেই একদিন গৃহকোণ থেকে রাজপথে এসে দাঁড়াতে হলো। তার পরের ইতিহাস নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের। এ সময় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি অন্তত সাতবার গৃহে অন্তরীণ হয়েছেন। কিন্তু জনগণের মুক্তির মহান লক্ষ্যে অটল আপসহীন থেকে পোড় খেতে খেতে তিনিই হয়ে ওঠেন খাঁটি সোনা। ওয়ান-ইলেভেনের দুবছর এবং বিগত শেখ হাসিনার জেলজীবনের ছয় বছর। তার জীবন ছিল এক অগ্নিপরীক্ষার। বছরের পর বছর এই জেলজীবন সহ্য করেন তিনি। কিন্তু দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থই ছিল তার কাছে বড়। এ বিষয়ে তিনি কোনো কিছুতেই আপস করেননি। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি যে আপসহীন খালেদা জিয়া।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ