Image description

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে গত সাত বছর ধরে পান-সুপারির ব্যবসা করেন আছিয়া খাতুন। এ ব্যবসা করেই সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করেন ৫০ বয়সি এই নারী। প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ৭০০ খিলি পান এবং ৫ হাজার টাকার বিড়া পান ও সুপারি বিক্রি করেন তিনি। তবে বর্তমানে দাম বাড়ায় ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

আছিয়া বলেন, গত ৪ থেকে ৫ দিন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে সুপারির দাম। ঈদের পর পানের দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও সুপারির দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। ফলে খিলি পানের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা করেছি। এরপরও আগের মতো লাভ নেই।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ফেরি করে খিলি পান বিক্রি করেন রুপচান আলী। তিনি বলেন, কদিনের ব্যবধানে সুপারির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফলে খিলি পানের দাম ১০ টাকায় বিক্রি করেও আগের মতো লাভ হচ্ছে না।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মহাজনরা সুপারি মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। ফলে এটির দাম বেড়েছে। এতে করে মাথায় হাত পড়েছে পানসেবীদের।

গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা ও শুকনো সুপারি। কোরবানির ঈদের আগে ১০০টি কাঁচা সুপারি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। সেই সুপারি এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা দরে। অর্থাৎ, শতকে দাম বেড়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। একেকটি কাঁচা গুয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকায়।

পানিতে ভিজিয়ে রাখা মজা সুপারির দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ঈদের পর ওই সুপারি রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে। ফলে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ঈদের আগে শুকনো সুপারির কেজি ছিল ৫০০ টাকা, যা এখন ৯০০ টাকা থেকে হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এ দাম আরো বেশি।

এদিকে সুপারি ছাড়াও বাজারে দাম বেড়েছে মজাদার জর্দা, খয়ের, চুনসহ নানা পান মসলার। ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে, বিশেষ করে রংপুর-দিনাজপুর থেকে সুপারি আসে শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। চলতি বছরে সুপারির ফলন কম হওয়ায় মজুত কমে বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দামও বেড়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজার। এখানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার পান-সুপারি বিক্রি হয়। এখানকার ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিন বলেন, ঈদের পর পান ও সুপারির সরবরাহ কমেছে। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।

কারওয়ান বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আরমান জানান, বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ঈদের পর সংকটে পান ও সুপারির দাম বেড়েছে।

কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনের বাসিন্দা ও পানসেবী আরশাদ আলী জানান, হঠাৎ সুপারির দাম এত বেড়ে যাওয়া খুবই অস্বাভাবিক। খিলি পান ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। এতে পান খাওয়ার পরিমাণ আমরা কমিয়ে দিয়েছি।

খুচরা ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি আগের মতো নেই। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা যথেচ্ছভাবে দাম বাড়িয়েছে।

বিকল্প হিসেবে খেজুর বিচি খাচ্ছেন ভোক্তারা

এদিকে নওগাঁর পত্নীতলার হাটবাজারে সুপারির দাম অতি চড়া হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষরা অনেকেই পানের সঙ্গে দেশি কাঁচা খেজুরের আঁটি (বিচি) বিকল্প হিসেবে খাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, সুপারি ছাড়া পান খাওয়া যায় না। বর্তমানে দেশি খেজুরের মৌসুম চলছে। এ সময় উপজেলার হাটবাজারে সুপারির দাম বেড়ে রেকর্ড গড়ে। বর্তমানে ঈদুল আজহার আগের দিন থেকে প্রতি পিস সুপারি সর্বনিম্ন ১০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সুপারির প্রকারভেদে প্রতিটি ১২ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে এক ঘা (১০টি) সুপারির দাম ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের ভোক্তারা পড়েছেন বেকায়দায়।

উপজেলার শাশইল গ্রামের জায়েজ উদ্দীন-ময়না দম্পতি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পান খাওয়ার প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে এমন দামে সুপারি ক্রয় করিনি। তাই সুপারির বিকল্প হিসেবে খেজুরের বিচি পানের সঙ্গে খাচ্ছি।

নওগাঁ সদরের আলহেরাপাড়ার বাসিন্দা ইসমত আরা বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে যে সুপারির প্রতিটির দাম ছিল ৪ থেকে ৫ টাকা, সেটি এখন ১০ থেকে ১৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়ে পান খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।’