Image description

এই গরমে ঠান্ডা থাকাটা একটু ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার কারণ হল, চলতি বছর আইসক্রিমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান— নারকেল তেলের দামটা বাড়তি এবং এটা আরও বাড়তে পারে।

চলতি বছরের মে মাস শেষে ফিলিপাইনের প্রতিটন নারকেল তেলের দাম ছিল দুই হাজার ৮০০ ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়, বিশ্ব বাজারে যে পরিমাণ নারকেল তেল সরবরাহ হয়, তার ৭৫ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এবার দেশ দুটিতে নারকেল তেলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আর পরিণাম হিসেবে দাম বেড়েছে আইসক্রিমের।

বাণিজ্যবিষয়ক ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আরআইএফটি বলছে, যুক্তরাজ্যের সুপার মার্কেটগুলোয় বিভিন্ন ললি ও কোনের দাম মে মাসে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়ছি ছিল।

নারকেল তেলের গলনাঙ্ক তুলনামূলক বেশি। এ কারণে এটি আইসক্রিমকে দীর্ঘ সময় জমাট থাকতে সহায়তা করে। আর এতে আইসক্রিমের স্বাদ ও গন্ধেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

২০২৪ সালে আইসক্রিম খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল আট হাজার ১০০ কোটি ডলার।

আবহাওয়ার কী ভূমিকা?

নারকেল গাছ সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়, যেখানে প্রচুর বৃষ্টি ও রোদ এর বেড়ে ওঠায় সহায়তা করে। কিন্তু গত বছর থেকে শুরু হওয়া এল নিনোর প্রভাবে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। চরম গরম ও খরার কারণে গেল বছর নারকেল খামারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একটি নারকেল গাছের বেড়ে উঠতে এক বছর সময় লাগে। ফলে গত বছরের বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর গাছগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ফলন কম এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী নারকেল তেলের উৎপাদন কমে ৬ লাখ টনে নামবে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫-২০২৬ মৌসুমেও উৎপাদন নিম্নমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানিও দায়ী?

ফিলিপাইন সরকার গেল অক্টোবরে জ্বালানি ডিজেলের সঙ্গে কোকো মিথাইল এস্টার (নারকেল তেল থেকে তৈরি একটি চর্বিজাত উপাদান) আরও বেশি পরিমাণে মিশিয়ে বায়োডিজেল উৎপাদনের নির্দেশ দেয়।

দেশটিতে নারকেল থেকে ডিজেল উৎপাদনের প্রভাব এতদিন সীমিতই ছিল।

২০০৭ সালে প্রথমে ১ শতাংশ মিশ্রণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে তা ২ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু গেল বছর সেটা করা হয় ৩ শতাংশ, যার দৃশ্যমান প্রভাব পড়ে বাজারে।

সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ এবং ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ৫ শতাংশে নিতে চায়।

১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে ৯০ কোটি অতিরিক্ত নারকেল প্রয়োজন পড়ে, যা পণ্যটির চাহিদা ও দাম বাড়িয়ে দেয়।

গত বছর ফিলিপাইনের জ্বালানি মন্ত্রী রাফায়েল লোটিলা বলেন, “উচ্চমাত্রার মিশ্রণ কার্যকর করা সব দিক থেকেই ভালো। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির অগ্রযাত্রাকে উৎসাহিত করে।"

ফিলিপাইন সরকার পরিকল্পনা মাফিক এগোলে ২০২৬ সালে গিয়ে কোকো মিথাইল এস্টার উৎপাদনে প্রায় ৪৫০ কোটি নারকেল লাগবে, যা দেশটির মোট উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

চকলেটে কি নারকেলের ব্যবহার বাড়ছে?

মুনাফার মার্জিন ধরে রাখা এবং খরচ কমাতে অনেক চকলেট কোম্পানিই এখন তাদের পণ্যে কোকোর বিকল্প হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার শুরু করেছেন।

কোকোর দাম বর্তমানে চড়া; প্রতি টন প্রায় ১০ হাজার ডলার।

নারকেল তেলকে কোকো বাটারের ভালো বিকল্প ধরা হয়, বিশেষ করে ভেগান বা দুধবিহীন চকলেট তৈরির ক্ষেত্রে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যবসায়ী ফেলিপে পোহলম্যান গঞ্জাগা আলজাজিরাকে বলেন, “আমি মনে করছি, অনেক কনফেকশনারি ও চকলেট নির্মাতা শিগগিরই কোকোর পরিবর্তে নারকেল তেল ব্যবহার শুরু করবেন।”