
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস ২১ দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার নিট ঋণ নিয়েছে সরকার। যা গত অর্থবছরের পুরো ১১ মাসে ছিল ৬৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ কম নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবে সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া বাজেটে চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। গভর্নর জানান, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাস ২১ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারের ৫৪ হাজার ১০৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ কম হয়েছে।
নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকার ব্যাংক ঋণ নেওয়া অনেক কমানোর পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা করা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চলতি বাজেটের চেয়েও ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা আগামীকাল সোমবার পেশ করা হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতি বছর বেড়ে থাকে। আগামী অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা এর সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিল না। উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি খাত ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।’