
ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ অনুসারে যেকোনো ব্যাংক টেকওভার করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক অবসায়ন, মার্জারসহ যেকোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে প্রয়োজন অনুযায়ী এই অর্ডিন্যান্স অনুসারে, যা আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত শুক্রবার অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বেসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিদেশিসহ দেশের ৬১ তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই অধ্যাদেশে।
বর্তমানে অন্তত এক ডজন ব্যাংকের অবস্থা নাজুক। কয়েকটি ব্যাংক কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জরুরি তারল্য সহায়তা নিয়েই টিকে আছে।
নতুন অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকটাপন্ন ব্যাংকের মালিকানা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। ব্যাংক মালিকরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য তহবিল সরিয়ে নিতে গেলে বা অন্য কোনো জালিয়াতি বা অব্যবস্থাপনা দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাত্ক্ষণিক হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
অধ্যাদেশটিতে শক্তিশালী 'ব্রিজ ব্যাংক' নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যে কোনো ব্যার্থ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। তবে এই কাঠামোর কার্যকারিতা আইনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না, বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে অভিজ্ঞতা তা্ই বলে।
অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ব্যবহার করা হবে?
এই আইনে একটি 'ব্রিজ ব্যাংক' সম্পদ চূড়ান্তভাবে হস্তান্তরের তারিখ থেকে দুই বছরের বেশি পরিচালনা করতে পারবে না। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক 'ব্রিজ ব্যাংক' বিলুপ্ত করে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেই ব্যাংককে একীভূত করে দেওয়া বা এর সম্পদ ও আইনগত অধিকার তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে।
বছরের পর বছর ধরে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। একীভূতকরণ বা দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবসায়নের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু বিগত সরকার এমন উদ্যোগ নিতে আগ্রহী ছিল না।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল -চরম মূলধন ঘাটতি বা দুর্বল সুশাসনের ক্ষেত্রে ব্যাংক বন্ধ করে দিলে তা আর্থিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। ফলে ব্যাংক অবসায়ন বা বন্ধ না করে টাকা ছাপিয়ে বছরের পর বছর টিকিয়ে রেখেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য নিয়ে চলায় প্রায়শই টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হয়েছে এসব ব্যাংকের জন্য। এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলেছে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার বন্ধ রেখেছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবরই বলেছেন, নতুন অধ্যাদেশে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো বন্ধ বা একীভূত করা হবে। তিনি নির্বাচিত সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের গতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা এই অধ্যাদেশটিকে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই অধ্যাদেশ ব্যাংকিং খাতকে সত্যিকার অর্থে পরিচ্ছন্নতার দিকে নিয়ে যাবে নাকি সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়ে দেবে তা নির্ভর করবে আগামীতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এর ওপর।