Image description

ফাইবার, রাসায়নিক এবং সুতাসহ ডেনিম এবং ডেনিমের কাঁচামালের বিশ্বব্যাপী উৎপাদনকারীরা বলেছেন, মার্কিন শুল্ক এবং অন্যান্য বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ডেনিম বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকবে।

সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সপো আয়োজিত দু’দিনের বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৮তম সংস্করণের ফাঁকে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় বাজারে ডেনিম পণ্যের বৃহত্তম সরবরাহকারী হওয়ায় তারা বাংলাদেশে সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণে আত্মবিশ্বাসী।

ফ্ল্যাক্স কোম্পানি একটি ফরাসি-ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী ফাইবার উৎপাদক। এ প্রতিষ্ঠানটি হেম্প ফাইবার উৎপাদন করে, যা বর্তমানে ডেনিম উৎপাদনে ব্যবহৃত টেকসই ফাইবার।

কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হার্ভ ডেনয়েল জানান, তারা গত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। ডেনিম খাতের জন্য প্রাকৃতিক উদ্ভিদ-ভিত্তিক হেম্প ফাইবার সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের দশজনেরও বেশি ক্রেতা রয়েছে এবং গত বছর আমরা আমাদের সরবরাহকারীর কাছে ১০০ টন ফাইবার পাঠিয়েছি।

পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছে প্রাকৃতিক এবং টেকসই পণ্যের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে হেম্প ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া উদ্ভিদ-ভিত্তিক ফাইবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। তিনি বলেন, মার্কিন শুল্কের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে পোশাকের প্রয়োজন। তাছাড়া, চীন, ভিয়েতনাম এমনকি ভারতও ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। ক্রেতারা পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং টেকসই পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন।

ডেয়াও টেক্সটাইল চীনের ফোশান সিটি কারখানায় প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে। কোম্পানির পরিচালক (বিক্রয়) রবার্ট ডেকিন বলেন, পশ্চিমা ক্রেতাদের মনোনয়ন অনুসারে তাদের মোট রপ্তানি পণ্যের প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশি নির্মাতাদের কাছে রপ্তানি করে তাদের প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরো বলেন, তারা হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের মতো বিশিষ্ট বাংলাদেশি নির্মাতাদের কাছে কাপড় রপ্তানি করে।

মার্কিন শুল্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি বড় উৎপাদনকারীরা তাদের কারখানা বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনামে স্থানান্তর করার কথা বিবেচনা করছে। তবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পরও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক থাকবে, তবে দেশটিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং লিড টাইম এবং অন্যান্য বিষয়গুলির উপর মনোযোগ দিতে হবে।

সোকো কেমিক্যাল হল ইতালির ফ্লোরেন্সে অবস্থিত একটি ফ্যাশন কেমিক্যাল কোম্পানি, এটি বাংলাদেশের ডেনিম খাতে রাসায়নিক সরবরাহ করে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাত্তেও এ. উরবিনি বলেন, তাদের টেকসই রাসায়নিকের ব্যবহার ডেনিমের দক্ষতা উন্নত করে।

তার মতে‘আমরা ডেনিম খাতে ওয়াশিং প্রযুক্তি সরবরাহ করি, অন্যদিকে পানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। আমরা আমাদের হাইড্রোজেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানিকে জেলে রূপান্তর করতে পারি, যার মাধ্যমে আমরা প্রতি কেজি ডেনিমের জন্য ৮ লিটার পানি ব্যবহার কমাতে পারি, যা প্রচলিতভাবে ৮০ লিটার। বাংলাদেশে তাদের ৬০ জনেরও বেশি গ্রাহক আছেন যারা তাদের পানিভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেন।

এই বছরের ডেনিম এক্সপোতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন, ইতালি, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ১৩টি দেশের ৫৭ জন প্রদর্শক অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, মার্কিন বাণিজ্য বিষয় নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত দক্ষতা উন্নয়ন, টেকসই এবং উদ্ভাবনের দিকে শিল্পের অবিচল অগ্রগতি।