
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না। দাম না পেয়ে চাষিদের পথে বসার উপক্রম।
হিমাগার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিকায়নের অভাবে আলু সংরক্ষণও করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে আলু বিক্রি ছাড়া উপায়ও নেই।
কৃষকরা বলছেন, এবার বীজ ও সারের চড়া দরের কারণে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি। কৃষকরা বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ টাকায়।
কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষিপণ্যে সরকার থেকে মূল্য সহায়তার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে এর বাস্তবায়ন নেই। এতে বেকায়দায় পড়ছেন কৃষকরা।
এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন।
কৃষক মো. হারুনুর রশীদ জানান, ১০০ টাকা কেজি দরে আলু রোপণ করে এখন পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, এ সুযোগে মধ্যসত্ত্বভোগীরা সস্তায় আলু কিনে হিমাগারে রেখে চড়া দরে বিক্রি করবে। গেল মৌসুমে সংরক্ষণ করা আলুর দর ওঠে কেজিতে ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি বিভাগ বলছে, মধ্যসত্ত্বভোগীদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১২০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষক
এনআইডি দিয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
তবে কোনো ব্যবসায়ীকে আলু সংরক্ষণ করতে হলে লাইসেন্স লাগবে। সংরক্ষণ দলিল হাত বদলের ব্যাপারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। আর বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় সিন্ডিকেটের দখলে ছিল আলু বীজের বাজার।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের বীজ আলু কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এর ফলে আলু উৎপাদনের ব্যয় প্রতি একর জমিতে বেড়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে তাই লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা।
আবু তালেব দুই একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আলু বিক্রি করছি ৮ টাকা কেজি দরে। অথচ আমার আলুতে খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ টাকার মতো। সব মিলিয়ে দুই একরে আমার লোকসান হবে দুই লাখ টাকা।’
কৃষক আ. হামিদ বলেন, ‘আমরা পথে বসে গেছি এবার। বীজ কিনছি ১১০ টাকা কেজি দরে। বিএডিসিতে (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) দালালে ভরা। কৃষকের কোনো উপকার করে না এই বিএডিসি। বিএডিসিতে তিন দিন গেছি। তারা পাত্তা দেয় না।'
বুলাকীপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. হারুনুর রশীদ ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলুর বীজের দামের কারণে এবার উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএডিসি দিনাজপুর বীজ বিপণন কার্যালয়ে কর্মরত এক কুলি বলেন, ‘বিএডিসির বীজ হিমাগারে চলছে সিন্ডিকেট। ঠিকাদার, বিপণন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কুলির সর্দার মিলে একটা সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে আলুর বীজ বিক্রি করতো।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার আলুতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে বীজ আলুর দাম বেশি। এ ছাড়াও এবার কৃষকরা বেশি বেশি আলুর উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছিল, শ্রমব্যয় বেশি ছিল। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচটা একটু বেশি হয়েছে।