
বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও একটু বেশি বিস্তার লাভ করতে পারি এবং আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপিটা আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপিটা আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক অংশগ্রহণের পাশাপাশি শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন, সেখানে আপনারা কি প্রস্তাব দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা যাচ্ছি সেখানে, প্রথম উদ্দেশ্য হলো আমাদের বাজেট সাপোর্ট ও কতগুলো প্রজেক্ট ওরিয়েন্টেড বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওপেক ফান্ড আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করবো। অর্থায়ন নিয়ে সেখানে আমাদের বিশ্ব ব্যাংকে সঙ্গে দুইটা চুক্তি হতে পারে এবং ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাজেশন অব মাইগ্রেশন তাদের সঙ্গেও আলাপ করবো। তারা কক্সবাজারে কাজ করছে। এছাড়া ইউএস ট্রেজারির সঙ্গে রুপপুর প্রকল্পে পেমেন্টের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে আমরা আলাপ করেছি। নিষেধাজ্ঞা আছে তারপরও বিশেষ কিছু করা যায় কিনা এই প্রকল্প নিয়ে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এর বাইরে আমি সেখানকার বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে আলাপ করবো, সেটা আমাদের এফবিসিসিআইয়ের মতো একটা সংগঠন আছে। সেখানে বিশ্বের টপ ৭০টি কোম্পানি রয়েছে। তাদের কাছে এফডিআর ও আমাদের অর্থনীতির বিষয়ে শুনব। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগকারী আটলান্টিক কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।
তিনি বলেন, আমরা ইউএসএর সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারের লেবেল, মাল্টিলেটারাল লেভেল বা বাইলেটারাল লেবেল ছাড়াও প্রাইভেট খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। যেমন এনার্জি খাতের দুই একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ হতে পারে। আমরা এনার্জি আনবো কিনা। কারণ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তো আমাদের ইউএস থেকে আমদানির বিষয়ে একটু প্রণোদনা দিতে হবে আমাদের। কারণ আমরা রপ্তানি যা করি তার থেকে কম আমদানি করি। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করেছে, এরপর আমরা ভালো কিছু কি প্রত্যাশা করতে পারি এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চয় আমরা আলাপ করবো, তবে এক সঙ্গে তো সব কিছু আসবে না। ইউএসের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছে। তারাও এসব বিষয়ে আলাপ করবে। সব মিলিয়ে অর্থায়নসহ সব কিছু আমি আসার পর জানতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে প্রত্যাশা আছে যে ট্রেড গ্যাপ আছে সেটা তো আমাদের আর্গুমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপিটা আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপিটা আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইউরোপ, তুর্কির বাজারেও করা যায় কিনা। একই সঙ্গে আমরা আগামী তিন চার মাসের মধ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেবো। ইতোমধ্যে সেটা করা আছে। কিন্তু সেগুলো এসব জায়গায় যাচ্ছে না। আমাদের ব্র্যান্ড, কোয়ালিটি ও মার্কেটিং এর বিষয় রয়েছে। মোট কথা বাণিজ্য ইস্যুতে ইউএস এর সাথে আরো একটু বেশি বিস্তার লাভ করতে পারি সেই চেষ্টাই থাকবে। সেই সুযোগটা আছে। কারণ চায়না অনেক কঠোর হয়েছে। এখন বাংলাদেশ সেখানে প্রবেশ করতে পারে।
জিএসপি কি পুনরায় চালু করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিএসপিটা তো একদিনে ইমপোস করা হয় নাই। জিএসপির সঙ্গে লেবার ল, ট্রেড ইউনিয়নের বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টেসের কোয়ালিটি ভালো। তবে মোটকথা হলো জিএসপি ইস্যুতে তাদের সিনেটে বিরাট একটা ইমপ্রেশন কাজ করে। ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ককে কি কাজ করছে কি রিফর্ম করছি এগুলো দেখে। এসব বিষয়ে কিছু থাকলে হয়ত তারা পজিটিভ ইস্যুতে দেখবে।
বাণিজ্য ঘাটতি হঠাৎ করে তো কমিয়ে আনা যায় না, আপনাদের পরিকল্পনাটা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে এনার্জি, মেশিনারিজ আমদানি করি, তাহলে গ্যাপটা কমবে।
বাংলাদেশ কোন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, না কি আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি করতে পারি। একই সঙ্গে তাদের দিক থেকেও যদি আমদানি করে, তবে গ্যাপ শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব না।