
মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গত ডিসেম্বরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে যা ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। দেশে এমএফএস সেবা চালুর পর এত বেশি লেনদেন আর কোনও মাসেই হয়নি। এর আগে একক মাসে নভেম্বরে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল; যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেনে সহজলভ্যতা ও গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী নতুন নতুন সেবায় শহর থেকে গ্রামে সর্বত্রই এমএফএস সার্ভিস দেশের মানুষের কাছে লেনদেনের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠছে। গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে আস্থা ও অভ্যাস তৈরি হওয়ায় এই সার্ভিস দিনে দিনে বাড়ছে। এমএফএস এখন আর সেন্ড মানি ও ক্যাশ আউট সার্ভিসের মধ্যে নেই।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এমএফএসের মাধ্যমে আগের বছরের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা বা ২৮.৪২ শতাংশ। ২০২৪ সালে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৩ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এমএফএস অ্যাকাউন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩.৮৬ কোটি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২২.০৪ কোটি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১ কোটি ৮২ লাখ অ্যকাউন্টধারী বেড়েছে।
সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি এমএফসের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এজেন্টের সংখ্যাও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ লাখে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ১৭.২৪ লাখ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে এমএফএসে লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। এমএফএসে জুনে ১.২২ লাখ কোটি টাকা, আগস্টে ১.৩৭ লাখ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা, অক্টোবরে ১.৫৪ লাখ কোটি টাকা, নভেম্বরে ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে এযাবতকালে এক মাসে সর্বোচ্চ ১.৬৪ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
দেশে এমএফএসের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট-এর মাধ্যমে। পরে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তীতে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবা এনেছে। বর্তমানে তেরোটি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। সেগুলো হলো: রকেট, বিকাশ, মাইক্যাশ, ইসলামী ব্যাংক এমক্যাশ, ট্রাস্ট আজিয়াটা পে (ট্যাপ), ফার্স্টক্যাশ, উপায়, ওকে ওয়ালেট, রূপালী ব্যাংক, টেলিক্যাশ, ইসলামিক ওয়ালেট, মেঘনা পে ও নগদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, ‘বর্তমানে প্রতিদিন এমএফএসের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আমি মনে করি, আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রতিদিন ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন এমএফএসের সঙ্গে অনেক ব্যাংক ও মার্চেন্ট যুক্ত হয়েছে। মুদি দোকান, মাছের দোকান ও ছোট ছোট ফুড সেলারদের এই সার্ভিসে পুরোপুরি আনতে পারলে লেনদেন আরও অনেক বাড়বে।’