Image description
গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক : সুদহার না বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানো হলে ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সুদের হার আর যাতে না বাড়ে, সে জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার খুব বেশি বাড়বে না বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সুদহারআব্দুর রউফ তালুকদার তাঁদের বলেছেন, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণে ধাপে ধাপে বাড়তে পারে। দেশের মুদ্রানীতি অনুসারে ছয় মাস পর পর পর্যালোচনার মাধ্যমে ১.১ বা ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ডলার মার্কেট নিয়েও গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে অনেক ব্যবসায়ীকে ডলার কিনে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হচ্ছে। গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্ধারিত রেটে সবাই ডলার পাবেন।’ বৈঠকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সুদের হার বাড়ালে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। তাতে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বিবেচনায় নিয়ে সব খাতের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের ডলারের দাম নিয়ে বলেন, ‘এখন বাণিজ্য ভারসাম্য সমান, দাম বেশি হওয়ার কথা নয়। ডলার রেট নির্ধারণ করে বাফেদা (বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন) ও এবিবি (অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ)। আমরা তাদের দেওয়া রেট নিয়ে কাজ করি।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের সিইও মো. আফজাল করিম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাফেদা ও এবিবি মিলে ডলারের যে রেট নির্ধারণ করে তার বাইরে কোনো ব্যাংককে ডলার কেনাবেচা না করার জন্য আমরা বারবার বলি। তার পরও যদি কেউ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকে তাহলে তা নিশ্চয় বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। খুব শিগগিরই আরো সুফল আসবে বলে আশা করি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরো জানান, গভর্নর বলেছেন, ঋণের সুদ এখন স্মার্ট রেট অনুযায়ী চলছে, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ার সুযোগ নেই। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে। মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বৈঠকে ঋণ পরিশোধ নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু জাহাজ নির্মাণ ও হিমাগার—এ দুটি শিল্প খাতকে আড়াই শতাংশ ঋণ শোধ করে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কেননা এই খাতে উদ্যোক্তারা করোনা মহামারির সময় সরকারের দেওয়া প্রণোদনা সুবিধা পাননি। আরো কিছু খাতকে এই সুবিধা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে জানিয়েছি, যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারেন।’ এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারা। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা ও সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি এখনো ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সে জন্য তাদের বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণপ্রাপ্তি সহজীকরণে ব্যাংকগুলোকে সম্প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেন শিল্পের কাঁচামাল আনতে পারেন সে বিষয়গুলোও দেখার জন্য আমরা গভর্নরকে বলেছি।’ মতবিনিময়সভায় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ঋণের এক অঙ্কের সুদহার ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এত দিন চলে আসছিল। নতুন অর্থবছরেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী, সুদের হার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করে তা বাজারভিত্তিক করছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কত বেশি সুদ নিতে পারবে তা বেঁধে দিয়েছে। ছয় মাসের ট্রেজারি বন্ডের সুদহারের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে ব্যাংকিং খাতের ঋণের সুদ নির্ধারণ করা হচ্ছে। নতুন এই নীতিকে ‘শর্টটার্ম মান্থলি অ্যাভারেজ রেট’ বা সংক্ষেপে স্মার্ট বলা হচ্ছে। ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির সঙ্গে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাবে। চলতি মাসে সুদহার কিছুটা বেড়েছে, আগামী দিনেও তা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ও শর্ত হিসেবে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ঋণগ্রহণ কমেছে। বাণিজ্যিক ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ কমেছে বলে তাঁরা মনে করেন।