Image description

বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে 'জিমেইল' একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। একসময় যেকোনও ওয়েবসাইট বা অ্যাপে আলাদা করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হত, আর এখন অনেক ক্ষেত্রেই ‘লগ ইন উইথ জিমেইল’ অপশনেই সেরে ফেলা যায় কাজ। কিন্তু জিমেইল ব্যবহারের এই সহজতাই কখনো কখনো নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

জিমেইল এবং হ্যাকিং

কোনো ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে জিমেইল দিয়ে লগ ইন করার অর্থ, সেখানে আপনার জিমেল আইডিটি সিঙ্কড হয়ে থাকছে। একের পর এক লগ ইনের পরে অনেক সময়েই মনে থাকে না কোথায় কোথায় ব্যক্তিগত ইমেল আইডিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে ইমেল আইডির নিরাপত্তা বলয় কমে যায়। দীর্ঘদিন কোনো ওয়েবসাইটে ইমেল আইডি অব্যবহৃত থাকলে, তখন হ্যাকারেরা সেই আইডিকে নিশানা করে। ফলে আপনার মূল্যবান জিমেইল আইডিটিও হ্যাক্ড হতে পারে। তার ফলে ওই ইমেলের যাবতীয় তথ্য হ্যাকারেরা হাতিয়ে নিতে পারে।

পাশাপাশি থার্ড পার্টি বা পরিচিত নয় এ রকম কোনো ওয়েবসাইটে ইমেলের মাধ্যমে লগ ইন করার অর্থ সেই আইডি তাদের সার্ভারেও জমা থাকছে, যা ইমেল আইডিকে বিপদের সম্মুখীন করতে পারে।

অনেক সময়েই প্রয়োজনে সাইবার ক্যাফে বা অন্য কারো মোবাইল বা ল্যাপটপে জিমেল ব্যবহার করতে হতে পারে। ধরা যাক, তার পর কেউ লগ আউট করতে ভুলে গেলেন। তা হলে কিন্তু অন্য কোনো ব্যক্তি চাইলে অ্যাকাউন্টটিকে ব্যবহার করতে পারেন!

এখন অনেকেই ঘন ঘন মোবাইল ফোন পরিবর্তন করেন। বাড়িতে একাধিক গ্যাজেটের মধ্যেও জিমেইল আইডি লগড ইন থাকে। পুরনো অব্যবহৃত ফোন বা কোনো টিভি বা ল্যাপটপেও কিন্তু ইমেল আইডি সিঙ্কড হয়ে থাকে। তাই আপনার জিমেইল কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।

গুগলের সুরক্ষাকবচ

জিমেল কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানার জন্য গুগল নিজেই আইডিটি ট্র্যাক করে। আপনার ইমেল যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্য গুগল ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি ওই আইডিটি কোন কোন ডিভাইসে ব্যবহৃত হচ্ছে বা কবে কখন লগ ইন করা হয়েছে, সেটিও নজরে রাখে গুগল।

কীভাবে শনাক্ত করবেন?

১) মেল আইডি কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানতে প্রথমে জিমেইলে প্রবেশ করে ‘ম্যানেজ অ্যাকাউন্টে’ ক্লিক করতে হবে।

২) উপরের ট্যাব থেকে ‘সিকিয়োরিটি’ ট্যাবে (হোম, পার্সোনাল ইনফো, ডেটা অ্যান্ড প্রাইভেসির পর) ক্লিক করতে হবে।

৩) স্ক্রল করে নীচে নামলেই পাওয়া যাবে ‘ইয়োর ডিভাইসেস’ ট্যাবটি। ক্লিক করলেই কোথায় কোথায় ইমেল আইডিটি ব্যবহৃত হচ্ছে, তা জানিয়ে দেবে গুগল। যেটির প্রয়োজন নেই, ক্লিক করে (ম্যানেজ অল ডিভাইসেস) তার সঙ্গে জিমেলের যোগসূত্র ছিন্ন করা যেতে পারে।

৪) যে ডিভাইস থেকে জিমেলের যোগসূত্র ছিন্ন করতে চাইছেন, তার উপরে ক্লিক করে ‘সাইন আউট’-এ ক্লিক করতে হবে।

৫) ‘ম্যানেজ অল ডিভাইসেস’-এর নীচে ‘কানেকশন’ ট্যাবটিতে ক্লিক করলে কোন কোন অ্যাপে জিমেল আইডিটি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটিও দেখা সম্ভব। চাইলে কোনও অ্যাপ থেকে ক্লিক করে সাইন আউটও করা সম্ভব।

কী করা উচিত?

সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ, জিমেইল যেহেতু কোনো ব্যক্তি বেশির ভাগ সময়েই তার মুখ্য ইমেল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাই জিমেইলের সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্ত ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ডিভাইসে জিমেইলের প্রয়োজন নেই, গুগলের সিকিয়োরিটিতে গিয়ে তা ডিলিট করে দেওয়া উচিত।

হারিয়ে যাওয়া ফোন, পুরনো কোনো ডিভাইস বা সাইবার ক্যাফেতে যদি জিমেইল ব্যবহার করা হয় তা হলে সেই যোগসূত্রগুলি অবিলম্বে মুছে দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞেরা।

উল্লেখ্য, এই যোগসূত্র ছিন্ন হলেও ওয়েবসাইট বা অ্যাপে জমা ব্যবহারকারীর পুরনো তথ্যের কোনও ক্ষতি হয় না। পরে প্রয়োজন হলে জিমেইলের মাধ্যমেই পুনরায় অ্যাকাউন্টে লগ ইন করা যায়। আবার কাজ হয়ে গেলে যোগসূত্র মুছেও দেওয়া যায়।