
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেকেই মানসিক কষ্টে ভোগেন ও দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন হয়। এই ধরনের ব্যক্তিরা ভুয়া সংবাদে বেশি বিশ্বাস করে এবং সেগুলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতাও তাদের মধ্যে বেশি। এমনই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির (এমএসইউ) এক নতুন গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত, তারা কোনো সংবাদ সত্য না মিথ্যা তা বিবেচনা না করেই তাতে ক্লিক করা, লাইক দেওয়া, মন্তব্য করা এবং শেয়ার করার প্রবণতায় বেশি ভোগে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন এমএসইউ কলেজ অব কমিউনিকেশন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর সহযোগী অধ্যাপক ডার মেশি ও মারিয়া ডি. মোলিনা। এই গবেষণাটি ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সী ১৮৯ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর পরিচালিত হয়। এই অনলাইন পরীক্ষায় ২০টি সামাজিক মাধ্যম স্টাইলে ফরম্যাট করা সংবাদ দেখানো হয়—যার মধ্যে ১০টি ছিল সত্য এবং ১০টি ছিল মিথ্যা।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ভুয়া খবরকে সত্য ভাবার সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের মানুষ সত্য-মিথ্যা বিবেচনা না করেই সংবাদে প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশি আগ্রহী এবং ভুয়া সংবাদে ক্লিক করার প্রবণতায়ও এগিয়ে।
গবেষক ডার মেশি বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং তার ফলে মানসিক কষ্ট বা জীবনে ব্যাঘাত তৈরি হলে, সেই ব্যবহারকারীরা ভুয়া খবরে বেশি বিশ্বাস করে এবং তা ছড়িয়ে দেয়।’
সহগবেষক মারিয়া মোলিনা জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে খবর পড়ে, এবং গবেষণায় দেখা গেছে, ভুয়া সংবাদ সত্য সংবাদের চেয়ে দ্রুত ছড়ায়।’
গবেষক মেশি জানান, ‘অনেকে সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকলে খারাপ অনুভব করেন, এমনকি এর ব্যবহার ছাড়ার পরও বারবার ফিরে যান। এই আচরণ কর্মক্ষেত্রে কাজের মান কমানো, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে জড়িত।’
গবেষকেরা আশা করছেন, এই ফলাফল মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সহায়তা করবে—বিশেষ করে যারা রোগীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্যায় পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া সরকারের নীতিনির্ধারক, সংস্থা ও সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর জন্যও গবেষণাটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে।
এই ধরনের ভুয়া খবর ঠেকানোর ব্যাপারে গবেষকে মেশি বলেন, ‘আমরা যদি ভুয়া খবর বিশ্বাস করতে পারে এমন ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে পারি, তবে তা ছড়ানো ঠেকানো সহজ হবে। গবেষকেরা সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করে এ ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য সহায়তা পদ্ধতি তৈরি করতে পারেন।’
গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে প্লস ওয়ান (PLOS One) জার্নালে।
তথ্যসূত্র: নিউরোসায়েন্স নিউজ ডট কম