Image description

লাভের আশায় বেশি উৎপাদন করে আলু নিয়ে সংকটে কৃষক। চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়ায় বাজারে বেড়েছে সরবরাহ। অথচ পণ্যটির দাম পড়ে গেছে। কম দামে আলু বিক্রি করলে লোকসান।

প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় সাত-আট টাকা। আবার হিমাগারেও রাখা যাচ্ছে না বাড়তি ভাড়ার কারণে। এখন তাঁরা আলু নিয়ে বিপাকে। তবে এই পরিস্থিতি উত্তরণে আলুর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, তা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে চাহিদা ৯০ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ১৯ লাখ বা ২২ শতাংশ বেশি।

বাড়তি রপ্তানি হলেও আলু রপ্তানির পরিমাণও কম। গড়ে প্রতিবছর ৫০ হাজার টন রপ্তানি হয়। গত ৯ বছর গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে আলুর সংকট থাকায় প্রায় এক লাখ টন আলু আমদানি করে বাংলাদেশ। উৎপাদন সংকটে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের প্রায় সাত মাসে ১২ হাজার টনের কাছাকাছি আলু রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশের আলু রপ্তানি হচ্ছে মূলত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, শ্রীলংকা, ওমান, কানাডা ও মালদ্বীপ। তবে নতুন দেশ ছাড়াও পুরনো বাজারে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। যেখানে তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। তাই দেশের আলু রপ্তানির মাধ্যমে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য নৌ ও স্থলবন্দরে রপ্তানিকারকদের সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব সনদায়ন প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলোকে আরো সহজ করা হচ্ছে। কৃষকের আলু পরিবহনের ক্ষেত্রে বিআরটিসির ট্রাক সুবিধা বাড়ানো হবে। দেশের আলু রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের একটা সংযোগ করা হবে। উত্তরের স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা থেকে নেপালে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে কৃষকরা আলুর দাম তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন কিছুটা বেশি। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আলুকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত ও নিরাপদ করতে বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বছরভেদে বর্ধিত চাহিদা অনুমান করে উৎপাদন বাড়ানো বা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আলুর মূল্য সযোজন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আলুর বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানো ও রপ্তানি বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল এক কোটি চার লাখ ৩২ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ছয় লাখ এক হাজার ১৮২ টন। ফলে এক বছরের ব্যবধানে আলুর উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১.৬২ শতাংশ। দেশে আলুর চাহিদা ৮৫-৯০ লাখ  টন। ফলে প্রায় ৩০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হচ্ছে। আবার সারা দেশের ৪৩ জেলায় ৩৬৫টি হিমাগারে মোট আলু সংরক্ষণ করা যায় ৩০ লাখ টন। উৎপাদন বেশি হলেও বীজের জন্য প্রায় ১০-১৫ শতাংশ আলু রেখে দিতে হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আলুর উৎপাদন বেশি হলেও বিদেশ থেকে চড়া দামে আলুর চিপস, প্রিঙ্গলস আমদানি করতে হয়। দেশে আলু প্রক্রিয়াকরণ ও মূল্য সংযোজন প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্পন্ন চিপস, প্রিঙ্গলস, ফ্রেঞ্চফ্রাই তৈরি করতে পারে। এর জন্য আলুর ভালো জাত উদ্ভাবন করতে হবে। আলুর জাত অবমুক্তিতে আগে নিবন্ধন লাগত, সেটিকে উন্মুক্ত (নন-নোটিফায়েড) করা হয়েছে। নিরাপদ ও রোগমুক্ত আলু উৎপাদনের নিশ্চয়তা দিতে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা (জিএপি) বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজারে আলুর চাহিদা ও জোগানের সঠিক তথ্য থাকা খুবই জরুরি।