টক শো রিভিউ
প্রবাসীদের সমস্যায় দূতাবাসগুলো পদক্ষেপ নেয় না
29 October 2014, Wednesday
বিদেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দূতাবাসগুলো আরো বেশি করে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। আমরা দেশে বসে প্রবাসীদের অনেক সমস্যার কথা শুনি। কিন্তু দূতাবাসগুলো সেভাবে সমস্যার সমাধানে কোনো রকম পদক্ষেপ নেয় না। অন্যান্য দেশ তাদের দেশের শ্রমিকদের প্রবাসে কর্মসংস্থানের জন্য নানা রকম ফন্দিফিকির বা চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা সে ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছেন। তাঁরা হয়তো জানেনও না প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোথায়, কিভাবে কাজ করছেন।
সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 'দেশ টিভি'র সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো 'সোজা কথা' অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী এ অভিমত ব্যক্ত করেন। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন প্রবাসী কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সেকেল চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরব আমিরাত সফর করলেন, সেখানে আমিরাতের বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাঁদের ভিসা সমস্যা নিয়ে কোনো সমাধান পাননি। তাঁরা অনেক আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান হবে। এখন তাঁরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন যে তাঁদের বিষয়ে আর মনে হয় কোনো সমাধানের পথ রইল না। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে ড. সেকেল চৌধুরী বলেন, একটি ইতিবাচক সম্ভাবনার বিষয় আছে। আরব আমিরাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি সই করেছে। এর মধ্যে একটি বিষয় হলো, আমিরাতের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি আছেন তাঁদের দেশে এনে আবার এ দেশের কারাগারে ঢোকানো হবে। এটা একটি ভালো দিক। তবে কথা হলো, কারাগারে থাকলে তো আর তাঁদের পক্ষে ভালো কোনো সমাধানের সম্ভাবনা রইল না। তাহলে দেখতে হবে, যাঁরা এসব ছোটখাটো অপরাধে আমিরাতের কারাগারে আছেন তাঁদের বিষয়ে সরকার কী উদ্যোগ নিতে পারে। কারণ একটি দেশের সরকার অন্য আরেকটি দেশের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে অনেক বিষয় সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব কর্মকর্তাকে দূতাবাসগুলোতে পোস্টিং দেওয়া হয় তাঁরা অনেক সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে চান না।
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে একজন দর্শক জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর আরব আমিরাত সফরের কারণে ওই দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশা করেছিলেন বন্ধ ভিসা চালু হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস নিয়েই চলে এলেন। তাহলে প্রবাসীরা আর কার দিকে তাকিয়ে থাকবেন?
জবাবে ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'প্রবাসীদের ধারণা ঠিকই আছে। যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশে সফরে গিয়েও কোনো সমস্যার সমাধান করতে না পারেন, তবে প্রবাসীদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতেই পারে। তার পরও আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আরব আমিরাতে আমাদের বাংলাদেশের ৬৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। তারা ইচ্ছা করলে আরো অনেককে নিতে পারত। কিন্তু আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে শ্রমবাজার এখন দখল করছে শ্রীলঙ্কা ও কম্বোডিয়া। আগে সেখানে শ্রীলঙ্কান নারীরা যেত। এখন শ্রীলঙ্কা থেকে পুরুষ শ্রমিক যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে গত বছর ১৭ হাজারের মতো মহিলা শ্রমিক আরব আমিরাতে গেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারই গেছে সরকারিভাবে। আর এ তথ্যই প্রমাণ করে বাংলাদেশ থেকে মহিলা শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করেনি আরব আমিরাত। কিন্তু পুরুষ শ্রমিক নেওয়া বন্ধ। সরকার এ দিকটিতে আরো গুরুত্ব দিয়ে দেখলে এখনো সমাধান করা সম্ভব। তবে সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন