এবারের বিপিএলের অন্যবারের চেয়ে আলাদা হবে, এক শব্দে ‘অন্যরকম’ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু সে আশায় গুঁড়ে বালি!
টিকিট অব্যবস্থাপনা, পারিশ্রমিক জটিলতা আর ফিক্সিংয়ের অভিযোগ বিপিএলের গায়ে কালি মেখে দিয়েছে। এর মধ্যে বিপিএলের পুরোনো রোগ পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানার চূড়ান্ত গর্হিত রূপ দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। বিশেষ করে দুর্বার রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি পারিশ্রমিক নিয়ে গড়িমসির আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
এই দলের দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন বর্জন করেছেন। লিগ পর্বের শেষদিকে দলটির বিদেশি ক্রিকেটাররা একটি ম্যাচও বর্জন করেছেন। বিপিএলের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়ে শুধু দেশিদের নিয়ে রংপুরের বিপক্ষে একাদশ সাজাতে হয়েছে তাদের।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, বিসিবি এবং ক্রীড়া উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের পরও দলটি পারিশ্রমিক এবং আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আজ (সোমবার) এই বিতর্কিত ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্ণধার শফিকুর রহমানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে নেয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়ে ২৫ শতাংশ হারে ৩, ৭ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তথা তিন কিস্তিতে দলের সমস্ত পাওনা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে যে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানিয়েছেন তিনি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নূর আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পারিশ্রমিক ইস্যুতে বিপিএলকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে হেয় করা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি)।
গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ রিহাবের (রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) অন্যতম নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান। যদিও রিহাবের ওয়েবসাইটে সদস্যদের তালিকায় পাওয়া যায়নি ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ বা এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি এই নামের ফেসবুক পেইজেও কোনো তথ্য যোগ হয়নি গত ১০ বছরে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শফিকুর রহমান।
যমুনা টিভির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুরুতে কবির নেওয়াজ নামের বিসিবির এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার ব্যবসায়ী বন্ধু রাজশাহী ফ্রাঞ্চাইজিটি কেনেন। টিম এন্ট্রি ফির দেড় কোটি টাকার অর্ধেকও তিনিই পরিশোধ করেন। এরপর সেই মালিকানায় এন্ট্রি নেন তারই ভাগ্নে রাজশাহীর ক্রীড়া সংগঠক ইমতিয়াজ জামিল দীপন এবং সিসিডিএম কো-অর্ডিনেটর আমিন খান! আমিন চল্লিশ লাখ টাকা দিয়ে মালিকানার অংশ হন।
কিন্তু মালিকানা নিতে কনসোর্টিয়াম প্রয়োজন বলে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপকে আনেন আমিন খান। এই একই গ্রুপের অধীনেই ছিল বিপিএলের বহু আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা ডমিনেটর্স। মালিকানার অংশ হয়েই জেঁকে বসে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ এবং শফিকুর রহমান। বিসিবির কাছে তারা পূর্ণ মালিকানা দাবিও করে এবং ড্রাফটের আগের রাতে রাজশাহীর একক মালিক হিসেবেই আবির্ভূত হয় ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ।