বিপিএল শুরুর একদিন আগে নাটক হচ্ছে সকাল থেকে। দুপুর দুইটা থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গ্রাউন্ডে অনুশীলন করার কথা ছিল চট্টগ্রাম রয়্যালসের। নাইম শেখ, শরিফুল ইসলামরা মাঠে আসার আগেই চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ছেড়ে দেয় ট্রায়াঙ্গল সার্ভিসেস। এমন অবস্থায় বিপিএলের আগামী আসরের জন্য চট্টগ্রামের মালিকানা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগে পরিস্থিতিতে চাপে আছে বোর্ড। এমনটাই জানিয়েছেন ইফতেখার রহমান মিঠু।
বিপিএল গভর্নিং বডির মেম্বার সেক্রেটারি ইফতেখার রহমান। ছবি: দেশ রূপান্তর
এদিকে দুপুরে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের অনুশীলন বয়কট করেন দলটির প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। তার সঙ্গে মাঠ ছাড়েন সহকারি কোচ তালহা জুবায়েরও। যদিও অনুশীলন বয়কট করার ঘণ্টা দুয়েক পর ফের অনুশীলনে ফিরে যান সুজন। ২৫ ডিসেম্বর বেলা দেড়টায় মাঠ ছাড়ার সময় সাংবাদিকরা 'কোথায় যাচ্ছেন' জানতে চাইলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সুজন। তালহাকে নিয়েই সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় চড়ে বসেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনোভাবেই বিপিএল করব না’। পরে খালেদ মাহমুদ এটাও জানান, বিপিএলে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের কোচের দায়িত্বে থাকতে চান না। মাঠ ছাড়ার সময় নোয়াখালী এক্সপ্রেসের কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে বিভিন্ন কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তবে ঘণ্টা দুয়েক পর, বেলা সাড়ে চারটায় তালহাকে নিয়েই সিলেট স্টেডিয়ামে ফিরে আসেন সুজন। দেখা যায়, পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ টাকা পেয়ে হাসছেন তিনি সবাইকে নিয়ে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, তিনটি ধাপে নিলামে বিক্রি হওয়া ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি। যেখানে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই প্রথম কিস্তিতে ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক দিতে হবে। রংপুর রাইডার্স ৫০ শতাংশ, রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ২৫ শতাংশ, ঢাকা ক্যাপিটালস ও নোয়াখালী এক্সপ্রেস ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক দিয়েছে।
অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে পারেনি চট্টগ্রাম। মূলত বিপিএলের জন্য স্পন্সর জোগাড় করতে না পারার কারণে পারিশ্রমিক দিতে হিমশিম খেয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। এমন অবস্থায় বিসিবিতে একটি চিঠি দিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক আবদুল কাইয়ুম। নিজেদের অপারগতা স্বীকার করায় চট্টগ্রামের মালিকানা নিয়েছে বিসিবি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিঠু।
এ প্রসঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব বলেন, ‘তারা (চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি) বলেছেন আর্থিকভাবে তারা খুব বেকায়দায় আছে। কারণ তারা কোনো স্পন্সর পায়নি। কারণ গত এক মাস ধরে নানান গুজব ছড়িয়েছে, তাদের ইন্টিগ্রিটির ব্যাপারে প্রেসে অনেক কথা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সেই জন্য স্পন্সর জড়ো করতে পারেনি, এটার বোঝা তারা নিতে পারছে না।’
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বারংবার নিশ্চিত করেছেন তারা ইন্টিগ্রিটি ও খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ইস্যুতে কোন ছাড় দেবেন না। মিঠু আবারও নিশ্চিত করলেন, সেই অবস্থান থেকে তারা একটুও নড়বেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা যেই অবস্থানে আছি সেই অবস্থান থেকে একটুও নড়বো না। প্রথমটা হচ্ছে ইন্টিগ্রিটি ইস্যু, দ্বিতীয়টা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক।’
এমন বাজে অবস্থাতেও ভালো দিক খুঁজছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব। মিঠু বলেন, ‘একটা দিক দিয়ে মনে হয় ভালো হয়েছে, একটু আগেও আমাদের অবস্থানের কথা বললাম। যদি আমরা খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলে বলতাম পরে পয়সা নিও। তাহলেই তো হয়ে তো।’
মালিকানা নিয়েই হাবিবুল বাশার সুমনকে টেকনিক্যাল কমিটি থেকে পদত্যাগ করিয়ে টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। এ ছাড়া মিজানুর রহমান বাবুল প্রধান কোচ ও নাফিস ইকবালকে দেয়া হয়েছে ম্যানেজারের দায়িত্ব। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির চিঠিটি বিসিবির লিগ্যাল দলের কাছে পাঠিয়েছেন তারা। বিপিএলের একদিন আগের এমন পরিস্থিতি নিয়ে চাপে বিসিবি।
মিঠু বলেন, ‘অবশ্যই, চাপে আছি। দুই-তিন ঘণ্টা আগে যদি একটা দল বলে আমরা আর্থিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারছি না। প্রচণ্ড চাপ। তারপরও আমরা সামলে নিয়ে হাবিবুল বাশারকে টেকনিক্যাল কমিটি থেকে পদত্যাগ করিয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে টিম ডিরেক্টর, কোচ বাবুলকে ঢাকা থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে। আর নাফিস ইকবালকে ম্যানেজার করে ক্রিকেট বোর্ড মালিকানা নিয়েছে। যে চিঠিটা আমাদের দিয়েছে এটা লিগ্যাল বিষয়ের জন্য আমাদের লিগ্যাল দলকে পাঠিয়েছি।’