এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পরশু শেখ মোরছালিনের গোলে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই গোল এবং ভারতের বিপক্ষে ২২ বছর পর জয় নিয়ে কাল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আবাহনী লিমিটেডে খেলা এই ফরোয়ার্ড।
অবশেষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে প্রথম জয়, কেমন লাগছে?
শেখ মোরছালিন: আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। আমরা সবাই অনেক খুশি৷ এ ম্যাচটা আমাদের জেতা দরকার ছিল। সবাই পরিশ্রম করেছে। দেশবাসীকে জয় উপহার দিতে পেরেছি, এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে!
ভারতকে হারানোর তৃপ্তিটা কি একটু বেশি?
মোরছালিন: অবশ্যই বেশি। তাদের সঙ্গে ম্যাচ হলে সবাই মানসিকভাবে খুব চাঙা থাকে। বাড়তি একটা মনোবল পায়।
এটা কেন হয়?
মোরছালিন: ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা রেষারেষি থাকেই, এটা নতুন কিছু নয়। তারা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে ভালো। কিন্তু আমরা সব সময় তাদের হারানোর জন্যই মাঠে নামি।
এবার মাঠে নামার আগে কী ভেবেছিলেন?
মোরছালিন: গত মার্চে তাদের মাটিতে খেললাম। এবার তো আমাদের মাঠে খেলা ছিল। আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি। আমাদের একটা জয় খুব দরকারও ছিল। মাঠে নামার আগে সবার একটাই কথা ছিল—জিততে হবে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ ছিল। এ বছর আমরা যে কয়েকটা ম্যাচ খেলেছি, সবগুলোতে কিন্তু কাছাকাছি গিয়েও খারাপ করি। আমাদের খেলা যে ভালো হচ্ছে, আমরা যে উন্নতি করছি, সেটা বোঝানোর জন্য অন্তত জয়টা দরকার ছিল।
আপনার গোলেই আসবে কাঙ্ক্ষিত জয়—মাঠে নামার আগে এমন কিছু কি ভেবেছিলেন?
মোরছালিন: না, ভাবিনি। যা হয়েছে আমি সত্যি আনন্দিত। সবকিছুর জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। তিনি চেয়েছিলেন, তাই গোলটা পেয়েছি। ভাগ্যও সহায় ছিল। যেভাবে বলটা জালে জড়াতে চেয়েছি, সেভাবেই হয়েছে। দেশের মানুষেরও দোয়া ছিল।
রাকিব গোলটা বানিয়ে দিল। ১০০ নম্বরে তাঁকে কত দেবেন?
মোরছালিন: রাকিব ভাইকে ১০০–তে ১০০ দেব। আমার চেয়েও তাঁকে এগিয়ে রাখব। তিনি এত সুন্দর একটা পাস না দিলে আমি হয়তো গোলই করতে পারতাম না।
বাংলাদেশের জার্সিতে ৭ গোল হলো আপনার। কোন গোলটিকে এগিয়ে রাখবেন?
মোরছালিন: অবশ্যই ভারতের বিপক্ষে গোলটাকে এগিয়ে রাখব। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। অনেক আগে থেকেই ভেবেছিলাম, যদি ভারতের বিপক্ষে একটা গোল করতে পারতাম! শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হয়েছে। এটাই আমার সেরা গোল। গোলটা করার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। মনে হচ্ছিল আরও দুটি সুযোগ পেলে দুটিই গোল করতে পারব।
দেশের হয়ে কোন জয়টিকে এগিয়ে রাখবেন?
মোরছালিন: অবশ্যই ভারতের বিপক্ষে পাওয়া জয়টাকে। আমি ২১ ম্যাচ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে সাতটি। আমার কাছে ৭ নম্বর জয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জয়ের রাতটা কীভাবে উদ্যাপন করলেন?
মোরছালিন: মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে, এরপর টিম হোটেলেও সবাই খুব উদ্যাপন করেছি। কষ্টের পর জয়টা আসায় সবাই আনন্দিত।
হামজা–শমিতরা আসার পর ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
মোরছালিন: এটা খুবই ইতিবাচক দিক। সমর্থকেরা তাঁদের টানে মাঠে আসছেন। আমরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছি। সবার আরও বেশি পরিশ্রম করার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।
তাঁদের মতো প্রতিভাবানদের সঙ্গে একই দলে খেলার অভিজ্ঞতা যদি বলতেন…
মোরছালিন: আমি ভাগ্যবান, তাদের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারছি। তাদের দেখে নিজেও উন্নতি করতে পারছি। আমরা এখন সুন্দর ফুটবল খেলতে জানি। বলের পজিশন ধরে রাখা, নিয়মিত গোল করা, গোল খাওয়ার পর শোধ করা—এগুলো আমাদের উন্নতির মাপকাঠি। শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতাও তৈরি হয়েছে।
তাঁদের সঙ্গে দলের মধ্যে আপনাদের প্রতিযোগিতাটা কেমন?
মোরছালিন: তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। আমি বলব, আর্জেন্টিনার যেমন মেসি আছে, আমাদের আছেন হামজা। দলের প্রয়োজনে তিনি জ্বলে ওঠেন।
আগামী মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
মোরছালিন: সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আমরাই জিতব। এখন পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলছি, এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।