সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আজ (বুধবার) বাদ জোহর দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বস্তরের মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে সম্মান জানাতে পারেন এবং তার জানাজায় অংশ নিতে পারেন সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। জানাজা উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, বুধবার জানাজার সময় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার বদলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জানাজার পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপি মনোনীত রাজনীতিকেরা উপস্থিত থাকবেন।
খালেদা জিয়ার দাফন নির্বিঘ্নে শেষ করার জন্য জিয়া উদ্যানে নির্ধারিত ব্যক্তিদের ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ বুধবার থেকে তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হবে। এ ছাড়া আজ সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নেওয়ার জন্য একটি নির্ধারিত রুট ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি জানায়, খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার অতিক্রম করে নৌ সদর দপ্তরের পাশ দিয়ে গুলশান–২ এলাকার বাসভবন ফিরোজায় নেওয়া হবে।
এরপর সেখান থেকে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ ধরে এয়ারপোর্ট রোডে উঠে মহাখালী ফ্লাইওভার পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট ও বিজয় সরণি দিয়ে অগ্রসর হওয়ার কথা রয়েছে। পরে উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের ৬ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ প্লাজায় খালেদা জিয়ার মরদেহ পৌঁছানো হবে।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে। ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ধারা ২৮ ও ২৯ অনুযায়ী এ সময় মহানগর এলাকায় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোক পালনের সময় ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে পার্টি, র্যালি বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ ছাড়া উচ্চ শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো বা জন–উপদ্রব সৃষ্টি করতে পারে— এমন কোনো কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে আজ অতিরিক্ত ট্রেন চালাবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ডিএমটিসিএল নিয়মিত সময়সূচীর অতিরিক্ত বিশেষ মেট্রো ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করবে।
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। এদিকে, তার জানাজায় অংশ নিতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা গতকাল মঙ্গলবার তার মৃত্যুর খবর পেয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। শেষবারের মতো খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার আশায় নেতাকর্মীরা যে যার মতো গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন।
কালবেলার জেলা প্রতিনিধিরা জানান, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকার পথে ছুটছেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেকেই রাতের বাসে রাজধানীর পথে রওনা দিয়েছেন। এছাড়া, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর থেকে নদীপথেও নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী ট্রেনেও নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা গেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রমকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে এভারকেয়ার হাসপাতাল, জাতীয় সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব শোকের দিনে নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ করেন।