Image description
 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী–৬ (হাতিয়া) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।  একই সঙ্গে তার স্ত্রী শামীমা আজিমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরা নোয়াখালীর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমন পদক্ষেপ দলীয় রাজনীতিতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।  তবে ফজলুল আজিমের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকায় জনগণের ওপর আস্থা রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, আমি ১৯৯০ সালে বিএনপিতে যোগ দেই এবং তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই— দুবার ধানের শীষ প্রতীকে এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ধানের শীষের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এবার আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবুও আমি আশাবাদী, হাতিয়ার মানুষ আমাকে শেষবারের মতো সংসদে পাঠাবেন। সংসদে গিয়ে হাতিয়ার মানুষের অধিকার, উন্নয়ন ও ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরতে চাই এবং এই আসনটি বিজয়ী করে দেশনায়ক তারেক রহমানের কাছে উপহার দিতে চাই।

তার স্ত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীমা আজিম বলেন, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন এবং নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারাই আজ ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন—এটি দুঃখজনক। আমার স্বামী এই এলাকার ধানের শীষের আন্দোলন ও রাজনীতির প্রধান সংগঠকদের একজন ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, হাতিয়ার মানুষ বিভ্রান্তি ও ছদ্মবেশী রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকেই বেছে নেবেন।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার ছয়টি আসনে ৮৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ৬২ জন প্রার্থী। আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলবে।

তিনি আরও জানান, তফশিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি।  ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং ২২ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, নোয়াখালী–৬ আসনে এবারের নির্বাচনে মোট ১৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি থেকে মো. মাহবুবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী থেকে অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে আবদুল হান্নান মাসউদ দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ ফজলুল আজিম, শামীমা আজিম, তানভীর উদ্দিন রাজিব ও মুহাম্মদ নুরুল আমীন। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে এটিএম নবী উল্যাহ ও নাছিম উদ্দিন মো. বায়েজীদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) থেকে মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব, গণঅধিকার পরিষদ থেকে মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম শরীফ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে মোহাম্মদ আবুল হোসেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) থেকে আমিরুল ইসলাম মোহাম্মদ আবদুল মালেক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।