বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া 'সংকটময় অবস্থা' পার করছেন বলে জানিয়েছেন তার মেডিকেল টিমের সদস্য ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
রাত সাড়ে বারটায় হাসপাতালের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেছেন যে, "এ সংকট উৎরিয়ে যেতে পারলে হয়তো আমরা ভালো কিছু শুনতে পাবো"।
মি. হোসেনের ব্রিফিংয়ের কয়েক ঘণ্টা পর আজ ভোর সাড়ে ছয়টায় বিএনপি মিডিয়া সেল এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে এক পোস্টে বলেছে, "বেগম খালেদা জিয়া নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দেশবাসীর কাছে মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান"।
এর আগে রবিবার রাত সাড়ে নয়টার পর মিসেস জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং তারা সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এরপর মধ্যরাতে অনেকটা হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, "সত্যিকার অর্থে ২৩শে নভেম্বর ভর্তি হয়েছেন। ভর্তির পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিলো। সে কারণেই সিসিইউ ও পরে আইসিউতে। স্বাভাবিকভাবেই উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। অত্যন্ত সংকটময় অবস্থা পার করছেন। এ সংকট উতরিয়ে যেতে পারলে হয়তো আমরা ভালো কিছু শুনতে পাবো"।
মি. হোসেন জানান, চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে চেষ্টা করছেন এবং দেশী বিদেশী চিকিৎসকের সঙ্গে জুবাইদা রহমান যুক্ত আছেন।
ছবির উৎস,BNP MEDIA CELL
খালেদা জিয়া গত ২৩শে নভেম্বর থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর থেকে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন তার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
হাসপাতালে নেওয়ার কয়েকদিন পর ২৯শে নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে 'সংকটাপন্ন' অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। নতুন করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালেই আছেন।
সেদিন বিএনপি ও তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় পোস্ট দিয়ে বলা হয়েছিলো "বাংলাদেশর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন"।
তবে এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রসঙ্গ বারবার আসলেও ওই দিনই মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, "গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায়' হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, তবে এখনই 'বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় তিনি নেই"।
তিনি তখন আরও বলেছিলেন, "বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, ভিসাসহ সব বিষয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় এবং দেখা যায় যে শি ইজ রেডি টু ফ্লাই, তখন তাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে"।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আর বিদেশে নেওয়া যায়নি এবং ঢাকাতেই হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
ছবির উৎস,Getty Images
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফেরার পর রাতে তাকে দেখতে হাসপাতালে যান তারেক রহমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরেই লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
এরপর ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিলো।
এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে খালেদা জিয়াকে লিভারের চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে।
আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত, তারপর থেকে প্রথমে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দুর্নীতির আরেকটি মামলাতেও তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।
২০২৪ সালে অগাস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ই অগাস্ট রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তাকে সব দণ্ড থেকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হয়।