ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে ঢাকা ও বরিশালের ৪টি আসনে এমপি হতে লড়বেন দলটির আমির চরমোনাই পীরের সহোদর তিন ভাই। দলীয়ভাবে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই এরা সবাই নির্বাচনি মাঠে আছেন। বরিশালের তিনটি ও রাজধানীর একটি আসনে চলছে তাদের প্রচারণা। আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের এমপি হিসাবে বেছে নেবেন বলেও বিশ্বাস তাদের।
তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পদচারণা চরমোনাই পীর পরিবারের। বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে বসবাস আর দরবার শরিফও সেখানে বলে চরমোনাই পীর নামেই পরিচিত তারা। ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’ নামে দল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ। ২০০৮ সালে পান নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন। অবশ্য তার আগে কমিশনের শর্ত মেনে দলের নাম পালটে রাখা হয় ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’। নিবন্ধনের সঙ্গে দলীয় প্রতীক হিসাবে পান হাতপাখা। শুধু বরিশাল নয়, পুরো দেশেই রয়েছে দলটির কর্মী-সমর্থক। কমিটিসহ সাংগঠনিক কাঠামোও রয়েছে প্রায় সব জেলা-উপজেলায়। রাজনৈতিক দল হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এসব নির্বাচনে উল্লেখ করার মতো ভোটও পেয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত এই দলের হয়ে সংসদে যাওয়ার মতো ভোট পাননি কেউ। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত জয় পেয়েছেন কয়েকজন নেতা। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে বরিশাল-ঢাকা-নারায়াণগঞ্জ এবং গাজীপুরে বেশ ভালো ফল ছিল দলটির প্রার্থীদের। তবে সেটা তাদের সমর্থনগত যোগ্যতা নাকি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ভোট বর্জনের সুফল তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে দলটি। দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের নির্বাচনি ঐক্যে থাকা ইসলামী আন্দোলন। অবশ্য ঐক্যের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত বদলেও যেতে পারে এই মনোনয়ন। তবে পীর সাহেবের আপন ৩ ভাই যে ৪টি নির্বাচনি এলাকায় ভোটের মাঠে নেমেছেন সেগুলোতে তারা ছাড় দেবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।
বরিশাল-৫ (সদর) ও ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে নির্বাচনি মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। চরমোনাই দরবার শরিফের বর্তমান পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের আপন ভাই তিনি। ভাইদের মধ্যে তিনিই এখন পর্যন্ত পরপর দুবার অংশ নিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদেও করেছেন ভোটযুদ্ধ।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন পীর সাহেবের আরেক ভাই সৈয়দ ইসাহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের। দলের সহকারী মহাসচিব আবুল খায়ের বাংলাদেশ কুরআন বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ পাওয়ার টেকনোলজি নামে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। রাজনৈতিক জীবনে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
দলের মনোনয়নে ঢাকা-৪ আসনে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। চরমোনাইর বর্তমান পীরের মেজো ভাই তিনি। ৫ আগস্টের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গর্ভনরসের সদস্য হওয়া মোসাদ্দেক চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। ২০১৮-এর নির্বাচনেও এই আসনে প্রার্থী ছিলেন তিনি। ভোটের লড়াইয়ে দখল করেন তৃতীয় স্থান।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির এবং বরিশাল-৫ ও ৬ আসনে দলের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আর সেই পরিবর্তনের পতাকা হাতে নিয়ে চলছি আমরা। বরিশাল যেহেতু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আঁতুড়ঘর, তাই এখানে আমাদের জনসমর্থনও অনেক বেশি। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই অঞ্চলে থাকা ২১টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৮-১৯টিতে জয়ী হওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি আর জনসমর্থন রয়েছে আমাদের। আমরা তিন ভাই শুধু নই, দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া সব প্রার্থীই যার যার এলাকায় যথেষ্ট শক্তিশালী।
একই পরিবারের তিন ভাইয়ের মনোনয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে তো পরিবার বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে যোগ্যতা। একই পরিবারের সদস্য হওয়াটা যেমন অযোগ্যতা নয় তেমনি যোগ্যতা থাকলে একই পরিবার থেকে ১০ জনও প্রার্থী হতে পারেন। জনগণ যদি মনে করে যে আমাদের যোগ্যতা আছে তাহলে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবে।