বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য কান্ট্রি।’ ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অভ্যর্থনায় তিনি এই বার্তা দেন। কী তার প্ল্যান? কী আছে তাতে? এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় তিনি এদিন তারেক রহমানকে দেওয়া সংবর্ধনার কথা উল্লেখ করেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় এই ধরনের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম দেখিনি। সংখ্যা কত লাখ; তা বলা মুশকিল। এয়ারপোর্ট থেকে তিনশ ফিট ধরে যে জনসমাগম হয়েছে, এটার সংখ্যাটা তাহলে কী হবে?’
তিনি বলেন, ‘এটা কোটি পার হয়েছে কিনা অনেকের মধ্যে একটা আলাপ আলোচনা চলছে। আমি এত বড় জনসমাবেশ, আমার অন্তত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে তো নাই। আর কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এটা অবর্ণনীয়।’
আমির খসরু বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে আজ। এবং প্রত্যাশা তো ছিল তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা, বিএনপির জনপ্রিয়তা, বেগম খালেদা, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সাহেবের জনপ্রিয়তা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ জাতি, এসব বিষয় তো ছিলোই, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।’
তারেক রহমানের বক্তব্যে দেশগড়ার যে প্রত্যাশা, তার বক্তব্যেও তিনি বলেছেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান। দেশের জন্য, জনগণের জন্য আমার পরিকল্পনা আছে। মানুষের মধ্যেও দেশ গড়তে তার প্রতি আস্থার প্রতিফলন দেখেছি। তিনি বলেছেন সবার সহযোগিতা নিয়ে দেশ গড়তে চাই। এটা অনেক বড় স্ট্যাটসমেন্ট।’
‘এখন ঐক্যের সময়, এখন নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার সময় এসেছে। গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই তিনি টর্চ বেয়ারার ডেমোক্রেসি’, বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এ সময় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করে এই নেতা বলেন, ‘যেমনটা ছিলেন জিয়াউর রহমান সাহেব। এরপর প্রেসিডেন্ট এরশাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া শুরু থেকে শেষ এবং তার পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও গণতন্ত্রের লড়াই করেছেন বেগম জিয়া। এই যে তারা গণতন্ত্রের টর্চবাহক, তা মানুষের আস্থার প্রমাণ। তারেক রহমান তাদের পথ ধরে গণতন্ত্রের টর্চবাহক। দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের যে আস্থা তাদের ওপর, আজ তারেক রহমানের বক্তব্যেও সেটি স্পষ্ট হয়েছে। তিনি নিজেই বলেছেন তার পরিকল্পনার কথা।’
কী সেই পরিকল্পনা? জবাবে আমির খসরুর ব্যাখ্যা, ‘দেশ গড়ার প্রতি তারেক রহমানের যে প্রত্যয়, তা তিনি স্পষ্ট করেছেন। তিনি যে পরিকল্পনা করছেন, তার অনেকখানি নিজেই ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। বিএনপির পরিবার কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিয়ে এরইমধ্যে তারেক রহমান তার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন’, বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।
‘তারেক রহমান আমাদের দেশের শিক্ষা, পানি সংকট সমাধান নিয়ে পরিকল্পনা হাজির করছেন’, যোগ করেন খসরু।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আগামী দিন শুধুমাত্র আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে এমপ্লয়মেন্ট, বিশাল কর্মসংস্থান, দেশের বাইরে কর্মসংস্থান নিয়েও তারেক রহমানের পরিকল্পনা রয়েছে।’
আমির খসরু বলেন, ‘তার বিশাল পরিকল্পনা দেশকে নিয়ে; দেশের মানুষ এবং সর্বস্তরের মানুষের জন্য। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সবাইকে নিয়ে একেবারে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আমাদের কামার-কুমার, কুটির শিল্প, তাঁতী, কৃষক, শ্রমিকদের ব্যাপারে সবার জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের মানচিত্র তিনি করেছেন।’
‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিকে অন্য নতুন একটা অর্থনৈতিক অবস্থা, যেটা তারেক রহমান 'স্পোর্টস ইকোনমি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কালচারাল ইকোনমির কথা বলেছেন তারেক রহমান। সুতরাং উনার এই অর্থনৈতিক চিত্রটাও তো একেবারে ভিন্ন। এবং সবকিছুকে নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা উনি হাতে নিয়েছেন। আমি মনে করি জনগণের কাছে মেসেজটা ভালোভাবে যাচ্ছে এবং জনগণ গ্রহণ করছে।’
আমির খসরু জানান, ‘বিপুল উপস্থিতি তারেক রহমানকে আনন্দিত করেছে। বাস থেকে তিন ঘণ্টার বেশি সময় তিনি দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা, সালাম বিনিময় করেছেন। এটা তো অবশ্যই উনাকে আনন্দিত করেছে, উৎসাহিত করেছে। আগামীর জন্য আরও বেশি উনি বাংলাদেশ নির্মাণে যে প্রেরণা পাচ্ছেন, উৎসাহিত হচ্ছেন; এটার উনার কাজকে আরও আরও বেশি তরান্বিত করবে।’
‘তারেক রহমান সহযোগিতা চেয়েছেন জনগণের কাছে। উনার বক্তব্যে বলেছেন যেগুলা করলে সবার ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার দরকার। উনি মূলত রাজনীতিতে একটা নতুন ধারা নিয়ে আসলেন’, পর্যবেক্ষণ আমির খসরুর।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এই নেতা বলেন, ‘আগের ভুল ধাঁচের রাজনীতির বাইরে গিয়ে একটা দেশে আমরা প্রথম মনে হয় শুনলাম এমন রাজনৈতিক বক্তব্য। একেবারেই কোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা, কারও বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেন নাই। বিরূপ কোনও মন্তব্য করেন নাই। শান্তির কথা বলেছেন। তিন বার করে বলেছেন- আমাদের শান্তির দরকার।’
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সুশৃঙ্খল একটা দেশ আমরা করতে চাই। রাজনীতির সংস্কৃতিতে পরিবর্তন চাই। এই সবকিছু মিলিয়ে একটা ভিন্নধর্মী রাজনীতির ন্যারেটিভ দিয়েছেন। আমি মনে করি উনি জনগণের হৃদয় স্পর্শ করেছেন।’