Image description

আততায়ীর গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে ‘গিনিপিগ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি।

তাঁর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। শহীদ ওসমান হাদিক নিয়ে এমন মন্তব্যের জন্য মনিকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে আব্দুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শীর্ষক চ্যানেল নাইনের বিশেষ আয়োজন ‘নাইন সংলাপে’ বিএনপি নেত্রী মনি বলেন, ‘হাদিকে আমার কাছে এই মুহূর্তে একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ গিনিপিগ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই। আপনারা যারা ডাক্তার, এখানে অনেকে আছেন, আপনারা তেলাপোকা কাটতেন, সেলাই-টেলাই করে ছেড়ে দিতেন– চলত। বাট হাদি হয়তো চলতে পারে নাই।’

সঞ্চালক আব্দুন নূর তুষার হাদিকে নিয়ে কোনো আপত্তিকর বক্তব্য না দিতে আলোচকদের অনুরোধ জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিলুফার চৌধুরী মনির কথার প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন রাখেন, আপনার কি মনে হয়েছে কেউ তাঁকে (ওসমান হাদি) নিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছে?

আব্দুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শীর্ষক চ্যানেল নাইন বিশেষ সংলাপ আয়োজন করে। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়াআব্দুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শীর্ষক চ্যানেল নাইন বিশেষ সংলাপ আয়োজন করে। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

জবাবে মনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এটা তো বলার কোনো অপেক্ষাই রাখে না। এটাই যদি না হতো, হাদির দলের কয়টা লোক ছিল বা আছে বলেন? আমি কিন্তু তাঁকে ছোট করে বলছি না। আমি তার দলটাকে বলছি। এত মানুষ, সমস্ত দেশ থেকে আনা হলো বা এলো। এটার মধ্যে কিন্তু অনেক বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে। যে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে।’

অনুষ্ঠানেই মনির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, একজন হাদি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তাঁর সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলও ছিল না। উনি নিবন্ধনের চেষ্টা পর্যন্ত করেন নাই। হাদির ইনকিলাব মঞ্চ কটি সামাজিক সংগঠন।’

হুমায়রা নূর বলেন, ‘হাদির যুদ্ধটা ছিল সমাজের সমস্ত দুর্নীতি, অপতৎপরতা ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। উনি স্পষ্টবাদী ও কবি কাজী নজরুলের ভক্ত ছিলেন। হাদি কিন্তু অনেক বড় লোক ছিলেন না। দুই হাতে টাকাও বিলিয়ে বেড়াতেন না। কিন্তু উনার চলের যাওয়ার পর বস্তিবাসী থেকে মানুষের মধ্যে আমি হাহাকার দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাদির জানাজার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে কষ্ট লাগে। বিশ্বাস করেন, উনার জানাজায় যারা এসেছিলেন, প্রত্যেকে একজন ওসমান হাদির জন্য এসেছিলেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য আসেন নাই। কারও সমর্থনে আসেন নাই। হাদিকে যে তারা একবার দেখতে পারবে না, সেটাও জানত। তারপরও সবাই তার ভাই হাদির জন্য দোয়া করতে জানাজায় এসেছেন।’

নাইন সংলাপে নিলুফার চৌধুরী মনি ছাড়াও অংশ নেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদিন শিশিরও সমালোচনা করেছেন নিলুফার চৌধুরী মনির বক্তব্যেরএনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদিন শিশিরও সমালোচনা করেছেন নিলুফার চৌধুরী মনির বক্তব্যের

নিলুফার চৌধুরীর মনির বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদিন শিশির লিখেছেন, একজন মৃত হাদিকে নিয়েও এত ভয়! এত মিথ্যাচার! এত বড় বেয়াদবি! শহীদের সঙ্গে এসব ধৃষ্টতা আমরাও সহ্য করব না, খোদার আরশও সহ্য করবে না।

তিনি আরও লেখেন, নিলুফার চৌধুরী মনি এর আগে শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে জঘন্য রকম মিথ্যাচার করেছেন। এবার শহীদ ওসমান হাদিকে নিয়ে আবারও ‘গিনিপিগ’ বলে কটাক্ষ করলেন!

মনির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে ফেসবুকে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ লিখেছেন, নিলুফার চৌধুরী মনি বিএনপির দায়িত্বশীল নেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্তমান শামসুন্নাহার হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক। শহীদ ওসমান হাদিকে গিনিপিগ সম্বোধন করা আর তাঁর জানাযায় জনতার আবেগকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার।

ফেসবুকে কড়া সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন আপ-বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদফেসবুকে কড়া সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন আপ-বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ

তিনি আরও লেখেন, একই সঙ্গে বিএনপিকে তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানো দরকার এবং এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের কারণে বিএনপিকে ভুগতে হবে। নিলুফার চৌধুরী মনির এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে অতিসত্বর ক্ষমা চাওয়া উচিত।

আপ-বাংলাদেশের চিফ কো-অর্ডিনেটর রাফে সালমান রিফাত ফেসবুকে লিখেছেন, নিলুফার চৌধুরী মনি এর আগে শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে জঘন্য রকম মিথ্যাচার করেছেন। এবার শহীদ ওসমান হাদিকে নিয়ে ‘গিনিপিগ’ কটাক্ষ করলেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে মাটিতে পুঁতে ভারতীয় আধিপত্যবাদের এ রকম নোংরা দালালি করতে ন্যূনতম লজ্জা হয় না আপনার? কী নিকৃষ্ট মানসিকতা। ছিহ!

কাওসার আহমেদ লিখেছেন, নিলুফার চৌধুরী মনি– আপনার নামটি এখন আর মতপ্রকাশের সঙ্গে নয় বরং শহীদদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচারের পরও আপনার মধ্যে সামান্য অনুশোচনা দেখা যায়নি। আর এবার শহীদ ওসমান হাদিকে গিনিপিগ বলে কটাক্ষ– এটা কেবল কুরুচি নয়, এটা নৈতিক দেউলিয়াপনার নগ্ন প্রকাশ।

মনিকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, আপনার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মত নয়। এটা ঘৃণ্য মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতি প্রকাশ্য থুথু ছোড়া। একজন মানুষ কতটা নিচে নামলে শহীদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে কটাক্ষ করতে পারে– আপনি তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ।